রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতসহ বস্ত্র খাতের অন্যান্য সহযোগী শিল্পসমূহ লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাক খাতের ৪ সংগঠন। সংগঠনগুলো হলো- বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ ও ইএবি। লকডাউন চলাকালে পোশাক কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে বলে তারা নিশ্চিত করবে।
রোববার লকডাউন চলাকালে কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আব্দুস সালাম বলেন, লকডাউনের নামে কারখানা বন্ধ রাখলে শ্রমিকরা সুশৃংখলভাবে থাকবে না। আশঙ্কা করা হচ্ছে, লকডাউনের প্রথম দিনেই ব্যাপক হারে শ্রমিক ঢাকা ছাড়তে পারেন। এতে সংক্রমণের হার আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে সংগঠনটির নব নির্বাচিত সভাপতি ফারুক হাসান, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ও একে আজাদ, বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান, সহ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, ইএবি সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীসহ অন্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, শ্রমিকরা কারখানায় কর্মরত আছে বলেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা পালন করা সম্ভব হচ্ছে। গত বছর করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ৭০৯ জন শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সার্বিকভাবে সংক্রমণের হার ০.০৩%।
লকডাউনের নামে কারখানা বন্ধ রাখলে তারা কোনোভাবেই স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিধি-নিষেধ মানবে না।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ইউসি বার্কলে সেন্টার ফর বাংলাদেশ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপ অনুযায়ী, ৯৪% শ্রমিক বলেছে তারা স্বাস্থ্যসংক্রান্ত গাইডলাইনের বিষয়ে সচেতন, ৯১.৪২শতাংশ শ্রমিক বলেছেন, কারখানা থেকে কোভিড প্রতিরোধে তাদেরকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হয়েছে।
মহিউদ্দিন বলেন, দিনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় শ্রমিকরা কারখানায় সুশৃংখল নিয়ন্ত্রিত ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করেন। ফলে তাদের পক্ষে ও নিয়ন্ত্রিত ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। লকডাউনের নামে কারখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিকরা এই সুশৃংখল পরিবেশে থাকবে না। তাদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কোভিড-১৯ মহামারির ফলে সৃষ্ট সঙ্কট থেকে শিল্প যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ঠিক তখনই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের অশনিসংকেত দৃশ্যমান হতে শুরু করে। কভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এবং এর প্রভাব সংক্রান্ত একটি হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করে তাতে বলা হয়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার মূল্যের রপ্তানি হারিয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি হারিয়েছে ৯.৫%।
২০২০ সালের এপ্রিলের শেষ নাগাদ ১১৫০টি সদস্য প্রতিষ্ঠান ৩.১৮ বিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ বাতিল ও স্থগিতের শিকার হয়েছে। পরবর্তীতে ৯০% বাতিল প্রত্যাহার হলেও মূল্য ছাড় ও ডেফার্ড পেমেন্ট মেনে নিতে হয়েছে।
করণা মোকাবিলায় সারা বিশ্ব জুড়ে গৃহীত পদক্ষেপের কারণে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই পোশাকের খুচরা বিক্রয় ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে ইউরোপে খুচরা বিক্রি কমেছে ২৮%, যুক্তরাষ্ট্র কমেছে ১৬ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে থেকেই পোশাকের দরপতন শুরু হতে থাকে, যা করোনার পরে তীব্র আকার ধারণ করে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে পোশাকের ৪.৫-৫ শতাংশ হারে দরপতন অব্যাহত আছে।
তৈরি পোশাক শিল্পের আন্তর্জাতিক অনেক ক্রেতা ও ব্র্যান্ড ক্রয়াদেশ এর বিপরীতে মূল্য পরিশোধ করেনি। অনেকে আবার দেউলিয়া হয়ে গেছে। ফলে অনেক কারখানা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অনেকে তাদের জাহাজীকৃত পণ্য অথবা স্টক এর মূল্য পায়নি। কিন্তু বাধ্য হয়ে কাঁচামাল বাবদ খোলা এলসি'র দায় মেটাতে ফোর্সড লোনের শিকার হয়েছে। এ সংকটের মধ্যেও শ্রমিকদের মজুরি দিয়ে যেতে হয়েছে এবং অন্যান্য খরচ মেটাতে হয়েছে। উপরন্ত করণা মোকাবিলায় প্রণোদনা বাবদ যে ঋণ নিয়েছিল তা পরিশোধের সময় ঘনিয়ে এসেছে।