× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিছনাকান্দিতে দুই মাসে ৩৫ কোটি টাকার পাথর লুট

বাংলারজমিন

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১২ এপ্রিল ২০২১, সোমবার

সিলেটে ফের সক্রিয় পাথর সিন্ডিকেট। এবার তাদের মিশন গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি। ইতিমধ্যে এ কোয়ারি থেকে যন্ত্রদানব বোমা মেশিন দিয়ে কোটি কোটি টাকার পাথর লুটপাট করা হয়েছে। জাফলং কোয়ারিতেও চলছে পাথর উত্তোলন। গত শনিবার বিকালে পাথর তুলতে গিয়ে এক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জের উৎমা কোয়ারিতেও বোমা মেশিন দিয়ে পাথর লুটপাট করা হচ্ছে। অপরিকল্পিত পাথর লুটপাটে মারা যাচ্ছে মানুষও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় অভিযান চালালেও পাথর উত্তোলন বন্ধ করা হচ্ছে না।
এদিকে, পাথর উত্তোলন বন্ধ না হওয়ায় শ্রমিক মৃত্যুর মিছিল শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। পরিবেশ বিপর্যস্ত হওয়ার কারণে কয়েক বছর ধরে বন্ধ সিলেটের সব পাথর কোয়ারি। এতে করে প্রকৃতিতে প্রাণ ফিরেছে। কমে গেছে শ্রমিকের মৃত্যু। কিন্তু চলতি মৌসুম থেকে ফের বেপরোয়া পাথরখেকো চক্রের সদস্যরা। সিলেটের বিছনাকান্দি। পর্যটনের জন্য এক নামেই চেনেন সিলেটের মানুষ। এই বিছনাকান্দিতে দুই মাস ধরে পাথর লুট চলছে। এরই মধ্যে ৩০-৩৫ কোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে। পাথরখেকো চক্রের সদস্যদের লুটপাট বন্ধ করতে গত ১লা এপ্রিল থেকে বিছনাকান্দি কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। খনিজ উন্নয়ন ব্যুরো এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছিল। এরপরও বিছনাকান্দি কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- বিছনাকান্দি কোয়ারিতে কয়েক হাজার গর্ত খোড়া হয়েছে। এখন কোয়ারি এলাকা গর্তে ভর্তি। আর এসব গর্ত থেকে পাথর উত্তোলন করতে ব্যবহার করা হচ্ছে যন্ত্রদানব বোমা মেশিন। ওই মেশিনের তাণ্ডবে তছনছ হয়ে গেছে পুরো কোয়ারি। এসব কোয়ারি থেকে প্রতিদিন ৫০-৬০ লাখ টাকার পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রশাসন অভিযানে এলে আগেই খবর পৌঁছে যায়। ফলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিস্ফল অভিযান চালাতে হয়েছে। স্থানীয় বিছনাকান্দি গ্রামের জয়নাল আবেদিন হচ্ছে পাথরখেকো চক্রের মূল হোতা। এলাকার আশিক উদ্দিন, বুরহান, মাসুক ও হেলালসহ কয়েকজন মিলে পুরো সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছে। কোয়ারি লিজ না  দেয়া সত্ত্বেও পাথর উত্তোলন নিয়ে এলাকায়ও রয়েছে ক্ষোভ। এদিকে, পাথরের গর্ত থেকে প্রতিদিন আড়াই হাজার টাকা করে নেয়া হচ্ছে। গর্তের মালিকরা বোমা মেশিন দিয়ে পাথর লুটপাট নিরাপদ করতে ওই টাকা দেন। এর বাইরে স্থানীয় পীরের বাজারের গরুরঘাট এলাকায় পাথরবাহী ট্রাক থেকে উপজেলা পরিষদের ট্যাক্স হিসেবে নেয়া হচ্ছে আরো ৫০০ টাকা করে। এতে পরিবহন শ্রমিকদের সম্পৃক্ততা রয়েছেন অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। গোয়াইনঘাটের ইউএনও তাহমিলুর রহমান জানিয়েছেন- কোয়ারি লিজে নেই। পাথর উত্তোলন অবৈধ। এখানে যারাই জড়িত তারা চাঁদাবাজ। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে বিছনাকান্দি গ্রামের জয়নাল আবেদীন মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে তারা পাথর উত্তোলন করছেন। এবং উত্তোলিত পাথরের রয়্যালিটি দিতে তারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বার বার ধর্ণা দিচ্ছেন। কিন্তু তাদের পাথরের রয়্যালিটি নেয়নি। এ কারণে রয়্যালিটি প্রদান করতে বাধ্য হয়ে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’ তিনি দাবি করেন- ‘গত ১লা এপ্রিল থেকে আর ওখানে আগের মতো পাথর উত্তোলিত হচ্ছে না। কোয়ারিতে পানি চলে আসায় নদীতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে’। স্থানীয় পীরের বাজারের গরুরহাট এলাকায় ট্রাক থেকে রয়্যালিটি আদায় করেন নন্দীগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস কামরুল হাসান শাহীন। তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন- উপজেলা পরিষদের ট্যাক্স হিসেবে তারা রয়্যালিটি আদায় করেন। চলতি চৈত্র মাস পর্যন্ত তাদের লিজের মেয়াদ থাকায় ট্রাক প্রতি ৫০ টাকা করে রয়্যালিটি আদায় করছেন। স্থানীয় রুস্তুমপুর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকেও রয়্যালিটি আদায় করা হয় বলে জানান তিনি। এদিকে, শনিবার বিকালে জাফলংয়ের সংরক্ষিত এলাকায় পাথর তুলতে গিয়ে নদীতে ডুবে পলাশ আহমদ নামের এক পাথর শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় জুম মন্দির এলাকায় পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে পলাশ মারা যায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে। গোয়াইনঘাট থানার এসআই লিটন রায় জানিয়েছেন, পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পানিতেই তার মৃত্য হয়। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীতে অক্সিজেন দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় পাথর লুটপাট করা হচ্ছে। এ ছাড়া লিলাইবাজার, দয়ারবাজার, কালাইরাগসহ কয়েকটি এলাকায়ও পাথর লুট চলছে।
লিলাইবাজার এলাকায় নুরুল ইসলামের বসতবাড়িতে বোমা মেশিন লাগিয়ে পাথর উত্তোলনের কারণে তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ওই এলাকার সিরাজুল ইসলামের ভাড়া করা জমিতে চলছে পাথর বিকিকিনি। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ পেয়ে পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর