বিশ্ব নেতা ও রাজনীতিবিদরা জনগণের মাঝে ভুল ধারণা প্রচার কিংবা বিরোধীদলকে হয়রানি করতে ফেসবুক ব্যবহার করে চলেছেন। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি নিজেই এটি অনুমোদন করছে। বৃটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বের ২৫টি রাষ্ট্রের ৩০টিরও বেশি ঘটনার ক্ষেত্রে ফেসবুকের পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তৃত নথিপত্র ঘেটে দেখেছে গার্ডিয়ান। এসব রাজনৈতিক মিথ্যাচার ফেসবুক সক্রিয়ভাবে চিহ্নিত করার পরও তা অনুমোদন দিয়ে গেছে ফেসবুক। এসব ইস্যু সাধারণত দরিদ্র, ক্ষুদ্র ও পশ্চিমা নয় এমন দেশে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি মূলত গণমাধ্যমের আকর্ষণ বেশি থাকে কিংবা যুক্তরাষ্ট্র বা ধনী রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্ক রয়েছে এমন ‘নিয়মভঙ্গের’ বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে অধিক আগ্রহী। যেসব দেশের ইস্যু নিয়ে ফেসবুক কার্যকরি পদক্ষেপ রাখে তারমধ্যে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও পোল্যান্ডের মতো রাষ্ট্র।
ফেসবুকের এসব দ্বিচারিতা নিয়ে মুখ খুলেছেন সম্প্রতি ছাটাই হওয়া এক কর্মী। সোফি ঝাং ফেসবুকে ডাটা সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তাকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ছাটাই করে ফেসবুক। তিনি জানান, ফেসবুকের কাছে এ ধরণের অসংখ্য অভিযোগ আসে কিন্তু এগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আগ্রহ দেখানো হয় না। কারণ, এরফলে যে পরিণতি হয় তা ফেসবুককে দেখতে হয় না, এটা সমগ্র বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত।
২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনের পর সৃষ্ট বিতর্কের পর ফেসবুক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তারা রাষ্ট্র সমর্থিত রাজনৈতিক মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে লড়বে। কিন্তু কোম্পানিটি বারবার দেখিয়েছে যে, এই দায়িত্ব পালনে তারা সমর্থ নয় কিংবা আগ্রহী নয়। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক নেতারা মিথ্যাচার চালিয়ে যেতে ফেসবুককে ব্যবহার করছে।
ঝাংকে ছাটাই করার পর তিনি ৭ হাজার ৮০০ শব্দের একটি ফেয়ারওয়েল মেমো প্রকাশ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন যে, তিনি একাধিক রাষ্ট্রের সরকারকে দেখেছেন যারা ফেসবুক ব্যবহার করে তাদের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে ফেসবুক ব্যবস্থা না নেয়ায় তিনি কোম্পানির সমালোচনা করেন। তিনি মনে করেন, ফেসবুকে কাজ করায় রক্তের দাগ তার হাতেও লেগেছে। তিনি এখন আশা করছেন, তার এই পদক্ষেপের কারণে ফেসবুক বাধ্য হবে বিশ্বজুড়ে মিথ্যাচার প্রচার বন্ধে সক্রিয় হতে। তৃতীয় বিশ্বে কী হচ্ছে তা নিয়ে ফেসবুক একেবারেই চিন্তিত নয়।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে ফেসবুক। কোম্পানিটির মুখপাত্র লিজ বোরজয়েস বলেন, আমরা ঝাং-এর এমন অভিযোগের সঙ্গে পুরোপুরি দ্বিমত জানাচ্ছি। আমরা আমাদের প্লাটফর্ম থেকে যে কোনো ধরণের নিয়মভঙ্গ থামাতে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাজ করছি। সব রাষ্ট্রেই অভিযোগ নিয়ে আমরা কাজ করছি এবং আমাদের বিশেষ দলও রয়েছে এ জন্য। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দায়ে আমরা শতাধিক নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিয়েছি। এরমধ্যে আছে লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোও। সুসংগঠিত অনৈতিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াকে আমরা সবথেকে বেশি অগ্রাধিকার দেই। প্রতিটি পদক্ষেপ নেয়ার আগে আমরা সেটি যাচাই করে নেই।