ব্রাজিলকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে ভারত। বাংলাদেশে এক মাসে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা সাত গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। ঝাঁকুনি খাচ্ছে পাকিস্তান। সেখানে সংক্রমণের সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা। দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে চলছে করোনা ভাইরাসের নতুন বিস্তার। সর্বশেষ লেখা করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এসব কথা লিখেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। রিপোর্টে ভারতের ভয়াবহতার উল্লেখ করে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের দিকে। বলা হয়েছে ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশে সরকার আগামী বুধবার থেকে আট দিনের জন্য সব অফিস, আন্তর্জাতিক ও আভ্যন্তরীণ পরিবহন বন্ধ ঘোষণা করেছে।
এর ফলে বাস ও ট্রেনে মানুষ পাগলের মতো ছুটছে। কমপক্ষে ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে মোট এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৬ লাখ ৯১ হাজার মানুষ। মারা গেছেন কমপক্ষে ৯ হাজার ৮২২ জন। তা সত্ত্বেও এক মাসের মধ্যে প্রতিদিন আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারাদেশে হাসপাতালগুলো বলছে, তারা নতুন নতুন আক্রান্তদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন দ্বিগুনের বেশি। এ অবস্থায় কড়াকড়ি দেয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
অন্যদিকে ভারতে সোমবারও ধর্মীয় এক অনুষ্ঠানে মাস্কবিহীন কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষের সমাবেশ হয়, যেখানে দেশটি ব্রাজিলের চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যায় এখন বেশি। আর দক্ষিণ এশিয়া নতুন সংক্রমণে বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মোট এক চতুর্থাংশের বসবাস এ অঞ্চলে। কয়েক সপ্তাহে এখানে করোনা সংক্রমণের হার সূচকীয় গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোমবার ভারতে এক দিনে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ। সব মিলে এখানে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৩৫ লাখ। ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার। এমন অবস্থায় মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল সুপারিশ করার পর রাশিয়ার টিকা স্পুটনিক-৫ ব্যবহারের অনুমোদন দেবে নয়া দিল্লি। জুলাইয়ের শেষ নাগাদ ভারতে ৩০ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার জন্য এর গতি বাড়াতে হবে। তবে অনেক রাজ্যে টিকার মজুদ কম বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। স্পুটনিক-৫ তৈরিতে অর্থায়ন করেছে রাশিয়ান কোম্পানি আরডিআইএফ। তারা বলেছে, স্পুটনিক-৫ ব্যবহারের জন্য ভারতীয় নিয়ন্ত্রকদের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
মানুষের অসচেতনতার ফলে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঘটছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এমন অবস্থায় হরিদ্বার শহরে কুম্ভ মেলায় পবিত্র গঙ্গা¯œান করতে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়। বিভিন্ন রাজ্যে চলছে নির্বাচন উপলক্ষ্যে র্যালি। এ ছাড়া এমন ধর্মীয় উৎসব ১৩০ কোটি মানুষের এ দেশটিতে করোনা বিস্তারের জন্য দায়ী করা হয়। জনগণ যদি সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখে, মুখে মাস্ক না পরে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ভারত। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রফেসর রাজিব দাসগুপ্ত বলেন, পুরো দেশ আত্মতুষ্টিতে রয়েছে। আমরা সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সমাবেশ অনুমোদন করেছি।
ওদিকে পাকিস্তানে করোনা ভাইরাসের নতুন ঢেউ আঘাত হেনেছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বিস্তার লাভ করছে। খুব কম সংখ্যক মানুষই স্বাস্থ্যবিধি মানছে। কমপক্ষে ৭ লাখ ২৫ হাজার মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে পরীক্ষা করা হচ্ছে কম সংখ্যক মানুষকে। পাকিস্তানের বেশির ভাগ মানুষ প্রতি দিনের আয়ের ওপর নির্ভর করেন। এ জন্য সেখানে কঠোর লকডাউন দিতে অনিচ্ছুক সরকার। সামনেই পবিত্র রমজান মাস। এ সময়ে সংক্রমণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, এ সময়ে রাতের বেলা মানুষ একত্রিত হয়। জামায়াতে নামাজ আদায় করে।