টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ খেলতে শ্রীলঙ্কায় গিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট জাতীয় দল। গতকাল দেশ ছাড়ার আগে সফরের টিম লিডার খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় জয়ের সামর্থ্য রয়েছে টাইগারদের। পাঁচদিনের খেলা এ কারণে সেশন বাই সেশন ধরে এগোতে হবে।’
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের অর্জনের খাতাটা ফাঁকা। ভারত, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সবকটি ম্যাচ হেরে কোনো পয়েন্ট নেই টাইগারদের সংগ্রহে। তার ওপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভরাডুবির স্মৃতি নিয়ে লঙ্কা সফরে গেলেন খেলোয়াড়রা। তবে শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস খারাপ নয়। ২০১৩ সালের শ্রীলঙ্কা সফরে একটি টেস্ট ড্র করেছিল টাইগাররা। এরপর ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের শততম টেস্টে জয় কুড়ায় বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কার বিমানে ওঠার আগে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সুজন বলেন, ‘অবশ্যই আমরা জিততে চাই। আমরা সেখানে নিজেদের সেরাটা দিতে চাই। যে দল ভালো খেলবে তারাই জিতবে। পাঁচ দিনের খেলা এ কারণে সেশন বাই সেশন ধরে এগোতে হবে।’
চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সবশেষ টেস্ট ম্যাচের কথা মনে করিয়ে সুজন বলেন, ‘চট্টগ্রাম টেস্টে আমরা চার দিন এগিয়ে থেকেও হেরে গেছি, এমনটা করতে চাই না। লম্বা সময় মনোযোগ ধরে রাখতে চাই।’
সুজন বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার কন্ডিশনটা আমাদের পরিচিত। ওখানে এখন গরম থাকবে বেশি। উইকেট ভালো পাবো। নিজেদের কন্ডিশনে শ্রীলঙ্কা শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। কিন্তু আমরাও স্কিলের দিক থেকে পিছিয়ে নেই। যদি সেরা ক্রিকেট খেলতে পারি, প্রক্রিয়াটা ঠিক রাখতে পারি, তবে আশা করি আমরা ভালো করবো। যদিও আমরা লাস্ট টেস্ট ভালো করি নাই। আমরা জানি আমাদের ক্যাপাবিলিটি আছে। যদিও আমরা নিউজিল্যান্ডে ভালো খেলতে পারিনি, কিন্তু শ্রীলঙ্কায় আলাদা পরিবেশে খেলবো।’
শ্রীলঙ্কা সফরে দলগত নৈপুণ্যের তাগিদ দিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। তিনি বলেন, ‘খেলোয়াড়রা অনেক ফিট। অনেক চেষ্টা করে তারা? মাঠে গিয়ে। পারফরম্যান্সটা কেন হচ্ছে না সেটি একটা ব্যাপার। প্রসেসগুলো কিন্তু খারাপ বলবো না আমি। দল হিসেবে খেলতে হবে আমাদের, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স অনেক দেখেছি আমরা। এখনই সময় আমরা বাংলাদেশ দল হিসেবে খেলতে চাই।’
অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান দলে নেই। এতে তরুণদের দিকে তাকিয়ে টাইগারভক্তরা। আর সুজন বলেন, ‘আমি তরুণ বলি না, আমার কাছে সবাই সমান আসলে। যদিও তামিম, মুশফিক মুমিনুলের অভিজ্ঞতা অনেক। তারপরও দায়িত্ব সবার সমান। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দিয়ে আপনি যখন নামবেন তখন দায়িত্বটা সবারই সমান। ভালো খেলার দায়িত্ব সবারই। এর আগে আমরা দেখেছি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরাজের অনবদ্য পারফরম্যান্স। আমার মনে হয় এটা সবারই মনে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে মিরাজ, তরুণ বয়সেই মিরাজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশকে টেস্ট জিতিয়েছে। আমাদের সব ক্রিকেটারের মধ্যেই এই সামর্থ্য আছে। এই জিনিসটা মাথায় নিয়েই খেলতে হবে, পজিটিভ, আক্রমণাত্মক ক্রিকেট। আমি সবসময় পজিটিভ ক্রিকেট খেলার কথা বলি, অ্যাটিটিউড অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যে অ্যাটিটিউড আমি দেখেছি দুই বছর আগে। সেরকমটা দেখতে চাই, মাঠে লড়াই করবে, ফল কী হবে পরে দেখা যাবে। কিন্তু আমরা লড়াই করতে চাই।’
শ্রীলঙ্কা সফরে টিম লিডারের দায়িত্বে নিজস্ব ভাবনাও রয়েছে সাবেক অলরাউন্ডার সুজনের। তিনি বলেন, ‘আমার নিজস্ব আইডিয়া আছে, নিজস্ব চিন্তাভাবনা আছে। আমি মনে করি সেভাবেই চিন্তা করবো। তাদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয় জানি। সবাই আমার কাছে পুরোনো, নতুন কেউ নাই। সবার সঙ্গেই আমি কোনো না কোনভাবে কাজ করেছি। সুতরাং আমি চেষ্টা করবো আমার পন্থা অবলম্বন করতে। আমি মনে করি ইন শা আল্লাহ আমি সেটা পারবো। যদিও সময় খুব বেশি না, তারপরও যথেষ্ট সময় আছে। আশা করি ভালো কিছু করতে পারবো।
শ্রীলঙ্কায় পৌঁছে শুরুর তিন দিন হোটেল রুমে কোয়ারেন্টিনে কাটাবে বাংলাদেশ দল। পরে আরো চারদিন কোয়ারেন্টিনে থাকলেও অনুশীলনের সুযোগ পাবে টাইগাররা। ক্রিকেটারদের কোয়ারেন্টিন প্রসঙ্গে সুজন বলেন, ‘এটা ওরা মেনে নিয়েছে। প্রথমদিকে হয়তো একটু কষ্ট হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় তো আমরা মাত্র তিনদিন থাকবো রুম কোয়ারেন্টিনে। তারপর তো আমরা অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছি, নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা হবে। হোটেলের বাইরে না গেলেও এটা একদিক দিয়ে ভালো। ছেলেদের বিশ্রাম হবে। শারীরিক দিক থেকে ফিট থাকবে।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় চার্টার্ড ফ্লাইটে (ভাড়া করা বিমান) চড়ে শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে রওনা হয় বাংলাদেশ দল। আগামী ২১শে এপ্রিল সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু হবে। পরে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ২৯শে এপ্রিল। দুটি ম্যাচই হবে ক্যান্ডিতে।