× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আইনুসবাগের আতঙ্ক পোস্টার হান্নান

দেশ বিদেশ

আল-আমিন
১৪ এপ্রিল ২০২১, বুধবার

দক্ষিণখানের আইনুসবাগের মূর্তিমান আতঙ্ক পোস্টার হান্নান। জমি দখল, বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ, ময়লাবাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও মানবাধিকার কর্মীর নামে প্রতারণাসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। পোস্টার হান্নান থানা পুলিশের কিছু অসাধু সদস্যকে ম্যানেজ করে ওই এলাকায় অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন বলে স্থানীয়দের ভাষ্য। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তার। বালু ব্যবসায়ী রশীদকে প্রকাশ্যে হত্যার মধ্য দিয়ে এখন শ্রীঘরে। জানা গেছে, দক্ষিণখান থানায় তার বিরুদ্ধে ৯ টি মামলা আছে। মামলাগুলো হচ্ছে, খুন, জমি দখল, চাঁদাবাজি, দস্যুতা ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কাজ আদায়। বালু ব্যবসায়ী রশীদকে প্রকাশ্যে হত্যার আগে মামলাগুলো হয়েছিল তার নামে।
তবে রহস্যজনক কারণে ওই মামলাগুলোর তদন্ত থমকে ছিল। পোস্টার হান্নানের শুরুর জীবন খুব সুবিধাজনক ছিল না। কিন্তু, ক্ষমতাসীনদের হাত ধরে তার জীবন ও জীবিকা সম্পন্ন বদলে যায়। সরজমিন ও থানা পুলিশ সূত্রে এসব তথা জানা গেছে।
গত ২৪শে মার্চ দুপুরে দক্ষিণখানের আইনুসবাগে প্রকাশ্যে আব্দুর রশীদ নামে এক বালু ব্যবসায়ীকে পোস্টার হান্নান তার শর্টগ্যান দিয়ে হত্যা করে। ঘটনার পর তিনি এবং তার মেয়ে ফেসবুকে লাইভ করেন। পরে পুলিশ তাকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করে।
সূত্র জানায়, এ ঘটনায় বুধবার রাতে নিহতের ভাই হারুনূর রশীদ বাদী হয়ে দক্ষিণখান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলা নম্বর-৪২। মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রশীদের লাশের ময়নাতদন্তের পর পুলিশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।
এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার ওসি সিকদার মো. শামীম হোসেন মানবজমিনকে  জানান, পোস্টার হান্নানের নামে থানায় বিভিন্ন অভিযোগে ৯ টি মামলা রয়েছে। রশীদ হত্যার কারণে সে এখন জেলে আছে।
মামলার বাদী নিহতের ভাই হারুনূর রশীদ জানান,  পোস্টার হান্নান ছিলেন এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। আমার ভাই বাড়ি নির্মাণের জন্য বালু ফেলে ছিল। বালুর চাঁদা না দেয়ার কারণে আমার ভাইকে প্রকাশ্যে পোস্টার হান্নান মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে।
আইনুসবাগ এলাকায় গেলে রশীদ হত্যার কথা সবার মুখে মুখে শোনা যায়। প্রকাশ্যে এক বালু ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশের একাধিক টহল ভ্যানকে ওই এলাকায় ঘুরতে দেখা গেছে। পোস্টার হান্নানের সহযোগীদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশি হয়রানি এড়াতে ওই এলাকা ছেড়ে অনেকেই অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এলাকায় বিভিন্ন দেয়ালে ও বৈদ্যুতিক খুঁটিতে পোস্টার হান্নানের ছবি দেখা যায়। কয়েকজন ভিআইপি’র সঙ্গেও তার ছবি দেখা গেছে। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন যে, তিনি দক্ষিণখান বা ঢাকা মহানগরের কোনো আওয়ামী লীগের পদে নেই। দলের নাম ভাঙিয়ে তিনি বিভিন্ন অপকর্ম করেছেন। তার এ অপকর্মের পেছনে দক্ষিণখান থানা আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা জড়িত। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। তবে ঘটনার পর দক্ষিণখান থানার এক যুবলীগ নেতা এলাকা থেকে উধাও হয়ে গেছেন।
সূত্র জানায়, পোস্টার হান্নান নিজেকে বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেন। বাইরে তিনি যখন গাড়ি নিয়ে বের হতেন তখন তার সঙ্গে আরেকটি গাড়ি তার গাড়িকে প্রটেকশন দিতো। গাড়িতে উচ্চস্বরে হুইসেল দিয়ে তিনি চলতেন। কোনোস্থানে যানজট দেখতে পেলে তিনি তার সঙ্গে থাকা শটগান দিয়ে সবাইকে সেখান থেকে দ্রুত সরে যেতে বলতেন।
এলাকায় দেখা গেছে, বিভিন্নস্থানে বিদ্যুতের খুঁটিতে তার ছবি শোভা পাচ্ছিল। বিভিন্ন ভিআইপি’র সঙ্গে ছবি তুলে তিনি সেগুলো তার লোকজনকে দিয়ে টাঙ্গিয়েছেন। ছবিগুলো প্রতারণার কাজে ব্যবহার করতেন পোস্টার হান্নান।
সূত্র জানায়, ১০ বছর তার মুখের কথায় যেন আইনে পরিণত হয়েছিল। নিজের প্রভাব খাটিয়ে আইনুসবাগ নাম পরিবর্তন করে চাঁদনগর রাখেন তিনি। নিজের বাড়ির সামনের নেমপ্লেটে তিনি নাম রাখেন চাঁদনগর। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ জানালে তাদের নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে দমিয়ে রাখতেন। এলাকার অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে। প্রত্যেক অটোরিকশার মালিক তার লোকজনকে মাসোহারা দিতো। তার মালিকানাধীন ম্যাক্স সোশ্যাল এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও দিয়ে হান্নান বাসাবাড়ির ময়লা নেয়ার কাজ করে আসছিলো। এ বিষয়টি নিয়ে বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সোহেল রেজার সঙ্গে তার বিরোধ চলে আসছিল বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, হান্নান তার প্রভাব খাটিয়ে আইনুসবাগের ২০৮ নম্বর বাড়িটি দখল করে নেয়। ওই  বাড়ির মালিক আতঙ্কে এখন এলাকা ছাড়া। এছাড়াও এলাকায় পতিত ও খাস জমিও তিনি দখল করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। ওই কাজে দক্ষিণখান থানার এক যুবলীগ নেতার যোগসাজশ রয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, এছাড়াও এলাকায় কোনো বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে তাকে চাঁদা না দিলে ওই বাড়ি নির্মাণ হতো না। বালু নদীতে বালুমহাল ছিল তার একক নিয়ন্ত্রণে।
সূত্র জানায়, পোস্টার হান্নানের বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে প্রতারণার অভিযোগ। তিনি অনেক স্থানে মানবাধিকার কর্মীর পরিচয়ে প্রতারণা করে থাকেন। এলাকায় বিভিন্ন স্থানে তার সাইনবোর্ডে একজন মানবাধিকার কর্মী বলে নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর