× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (২৩) /পর্দার অন্তরালের খেলা বোঝা সত্যিই কঠিন

বই থেকে নেয়া

স্টাফ রিপোর্টার
১৬ এপ্রিল ২০২১, শুক্রবার

মঙ্গলবার ১৫ মে ২০০৭ দিন ৩৩
হঠাৎ করেই পত্রিকায় খবর এসেছে যে, খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। পর্দার অন্তরালে কী ধরনের খেলাধুলা চলছে তা বোঝা সত্যিই কঠিন। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, উনি দেশত্যাগের জন্য প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছেন। কিন্তু যদি তিনি চলে যান তাহলে যে রাজনৈতিক ক্ষেত্র তিনি ইতিমধ্যে প্রস্তুত করেছেন সে বিবেচনায় মারাত্মক ভুল করবেন।
সরকার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে উল্টোপাল্টা যা করার ইচ্ছা হয় তাই করছেন। কেউই জানে না আসলে দেশ চালাচ্ছে কারা। এ ধরনের শূন্যতা বেশিদিন চলতে পারে না। যেভাবেই তাদের বিদায় হোক না কেন জাতি তাদের সবসময় পিছু তাড়া করবে।
আমি ভেবে পাই না এই সরকারে বিদায় দৃশ্য কী রকমের হবে। এটা কি সম্মানজনক হবে, নাকি অপমানজনক হবে? এ ধরনের সরকার কখনো সম্মানজনকভাবে বিদায় নিতে পারে না।
আমাদের প্রথম সন্তান আসিফের কথা খুব ঘন ঘন মনে পড়ে।
যে কোনো কারণেই হোক, অনেক বছর পর আমি মনের ভেতর থেকে ফরিদপুরে গিয়ে তার কবরের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আন্তরিক একটা তাগিদ অনুভব করছিলাম। তাই মার্চের ৩০ তারিখে আমরা গিয়েছিলাম। বছরের প্রায় প্রতিটি দিনে আমার অন্তর থেকে তাকে আমি স্মরণ করি এবং এখনো প্রবলভাবে আমি ওকে মিস্ করি। ভবিষ্যতে আমি যদি আর কোনোদিন ফরিদপুর যেতে না পারি, তাহলে গেল বারেরটাই হবে আমার শেষবারের মতো তার কবর পরিদর্শন। আল্লাহ তাকে শান্তিতে রাখুন। অত্যন্ত নিষ্পাপ এবং খাঁটি অবস্থায় সে পরলোকে গিয়েছে- পাপ তাকে কোনোদিন স্পর্শ করেনি।
সুটকেস এখন পর্যন্ত রিলিজ করা হয়নি। আমি ভেবে পাই না- ওরা সেটি নিয়ে কী করছে। আমার লেখাপড়ার সাজসরঞ্জাম নিয়ে ওদের কেন এই মাথাব্যথা!

বুধবার ১৬ মে ২০০৭ দিন ৩৪
বেগম জিয়া দেশ ছাড়ছেন না। তার ছেলে কোকোর বিরুদ্ধে একটা মামলা রুজু করা হয়েছে। ওরা খালেদা জিয়াকে ব্ল্যাকমেইল করে তার ছেলেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেন-দরবার করতে চাইছে। মনে হচ্ছে না তিনি এত সহজে আত্মসমর্পণ করবেন। আসলে মামলা রুজু করা হয়েছে এক ধরনের প্রতিহিংসাবশত।
শেষ পর্যন্ত আমার সব বইপত্র, ফাইল আর কাপড়চোপড়সহ সুটকেসটা রিলিজ করা হয়েছে। অত্যন্ত বেআইনি কায়দায় আমাকে কিছু না জানিয়ে বিভিন্ন তারিখে সরকারের কাছে আমার লেখা কতকগুলো চিঠির অনুলিপি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অথচ সবগুলো চিঠিই পাঠানো হয়েছিল জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে।
এমআরআই এবং দু’ধরনের রক্ত পরীক্ষার জন্য আমাকে নেওয়া হয়েছিল পিজি হাসপাতালে। টেস্টগুলো করা সম্ভব হয়নি। কারণ, কেউ আমাকে জানায়নি যে, টেস্টের জন্য আমাকে খালিপেটে থাকতে হবে। হাসপাতালে সকালের দিকে ইলেকট্রিসিটির ভোল্টেজ অনেক কম থাকায় এমআরআই-ও করা সম্ভব হয়নি। করতে হবে বেলা ৪টার পরে। কাজেই আমাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে জেলখানায়।
আমার নির্বাচনী এলাকা থেকে স্বপন, দুলাল, সাহাবুদ্দিন, সেলিম, মনির ও ছোট ভাই সাকের আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। আমার জন্য এ ছিল এক মহাআনন্দ। ওরা আমাকে তৃণমূল পর্যায় অবধি সবরকমের খবর শুনিয়েছে। প্রথমত, রাজনৈতিকভাবে তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রতি জনসমর্থন এখনো অটুট রয়েছে। বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা প্রায় নেই বললেই চলে। দ্রব্যমূল্যের উচ্চহার জনজীবনকে করে তুলেছে অতিষ্ঠ। হাসিনা ও খালেদার প্রতি আচরণ জনগণ মেনে নিতে পারেনি। দেশব্যাপী চলছে বড় মাপের অপদস্থতা ও দোষীকরণের পালা। রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে জরুরি অবস্থা তুলে নিলে জনগণই সরকারকে এর উচিত শিক্ষা দেবে। লোকজন দিনে দিনে হয়ে পড়ছে অধৈর্য। আগামী ৬ মাসে নিঃসন্দেহে অবস্থার আরো বেশি অবনতি ঘটবে।

বৃহস্পতিবার ১৭ মে ২০০৭ দিন ৩৫
এটা কতটুকু নিরপেক্ষ সরকার তা নিয়ে কথাবার্তার প্রয়োজন নেই। হান্নান শাহকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পেছনে কারণ সবারই জানা। বিএনপির স্বার্থকে সামনে রেখে সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো, অব্যাহত ও স্পষ্টবাদী ভূমিকার জন্য তার আজ এই অবস্থা।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বুটেনিস মাত্র ১৪ মাস দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে সংঘটিত ঘটনাবলীর জন্য তাকে বহুলাংশে দায়ী করা হয়। তিনি ছিলেন মাত্রাতিরিক্ত করিৎকর্মা (pro-active) একজন কূটনীতিবিদ এবং দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নস্যাৎকরণে তার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে। যদি এই কারণে তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়ে থাকে তাহলে ভালো কথা। তিনি ছাড়া আগের প্রায় সকল মার্কিন রাষ্ট্রদূতই ছিলেন সজ্জন কূটনীতিবিদ। এদের মধ্যে অত্যন্ত সুকর্মের স্বাক্ষর রেখেছেন স্নাইডার, কুন, শেফার, বিল ডিপ্রী, বিল মাইলাম, হলসম্যান, মেরী এ্যান পিটার্স, হ্যারি থমাস প্রমুখ। বুটেনিস ছিলেন নিচু মানের রাষ্ট্রদূতগণের মধ্যে একজন। আমি খুশি যে, উনি চলে যাচ্ছেন।
দেশের অর্থনীতি পড়েছে এক স্থবিরতার কবলে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে ৫ শতাংশের বেশি। মোটা চালের দাম কেজি প্রতি ২৪ টাকা। উৎপাদন কমে যাওয়ায় মুদ্রাস্ফীতি আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কতিপয় দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মতৎপরতা নিয়ে তারা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের আস্থার মূলে আঘাত হেনেছে। দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ।
একই কারণে পঞ্চমবারের মতো আমাকে নেওয়া হয়েছে পিজি হাসপাতালে। খালি পেটে দু’রকমের টেস্ট করানো হয়েছে আমার। জেলগেটে আমার ব্যাংক স্টেটমেন্ট আটকে দেওয়া হয়েছে। কি আশ্চর্য্য!
রাত একটার সময় যৌথবাহিনীর লোকেরা গিয়েছিল শহীদের বাসায়। তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যাতে আমার ব্যাপারে বেশি ঘোরাফেরা না করে। অথচ হাসনার অনুপস্থিতিতে সবকিছুর জন্য আমাকে শহীদের উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।
শহীদ, ফাহিম ও নয়ন এসেছিল আমাকে দেখতে।



শুক্রবার ১৮ মে ২০০৭ দিন ৩৬
রিমান্ডের পর জেলখানায় আমার এক মাস পুরো হয়েছে।
আজ হঠাৎ এটা ভেবে আমার কান্না পাচ্ছে যে, আমি বোধহয় ছিলাম আমার বাবার এক অধম সন্তান। আসলে আমি তাঁর পুত্র হওয়ার যোগ্য নই। আমার প্রতি আপত্য স্নেহ থাকা সত্ত্বেও পদে পদে আমি তাঁর মনে দুঃখ দিয়েছি। অথচ সারা জীবন উনি আমার জন্য দোয়া করে গেছেন। তিনি ছিলেন ধার্মিক, শান্ত, জ্ঞানী এবং অত্যন্ত বিনয়ী। জীবনে আমি তাকে কারো সাথে ঝগড়া করতে দেখিনি। সারা জীবন আমি তাকে নিজের পড়াশোনা নিয়ে মগ্ন থাকতে দেখেছি। কোনোদিন কোনো আড্ডায় অংশ নেননি। তুচ্ছ বিষয়ের পেছনে কোনোদিন সময় নষ্ট করেননি। আমার জীবনে তার প্রভাব অপরিসীম। কিন্তু তার বিশেষ মহৎ গুণাবলীর এক শতাংশও আমি অর্জন করতে পারিনি। বাবা হিসেবে তিনি ছিলেন অতুলনীয়।
জেল হাসপাতালে কর্মরত তরুণ চিকিৎসক মোঃ শহীদ তার এক বন্ধু মোঃ ইশা কাদেরীর ২০০৭ সালের ১২ই মে পাওয়া একটি সার্টিফিকেট আমাকে এনে দেখালো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি তার থিসিসের জন্য পিএইচডি পেয়েছেন। থিসিসের বিষয়বস্তু ছিল ফখরুল মুহাদ্দেসীন মওলানা মমতাজ উদ্দিনের জীবন দর্শন ও ইসলামী জ্ঞান গবেষণায় তাঁর অবদান। লেখক তার কর্মের ওপর ছয় পৃষ্ঠার একটি সারসংক্ষেপ আমার কাছে পাঠিয়েছেন। এতে আমার বাবা সম্পর্কে এমন সব চমৎকার তথ্য রয়েছে যা আমারও জানা ছিল না। ডা. শহীদ ও ইশাকে আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই।

আরো পড়ুন-
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (২)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৩)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৪)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৫)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৬)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৭)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৮)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৯) 
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১০)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১১)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১২)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১৩)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১৪)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১৫)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১৬)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১৭)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১৮)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১৯)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (২০)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (২১)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (২২)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর