× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দুধ নিয়ে বিপাকে গো-খামারিরা

বাংলারজমিন

গোলাম মোস্তফা রুবেল, সিরাজগঞ্জ থেকে
১৭ এপ্রিল ২০২১, শনিবার

‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ সিরাজগঞ্জের গো-খামারিরা দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এমনিতেই গত বছর থেকে নানা সমস্যায় পড়েছেন দেশের গোচারণ ভূমি হিসেবে খ্যাত সিরাজগঞ্জের সমবায়ভিত্তিক গরুর খামারিরা। আর এখন প্রথম দফায় ৭ দিনের পর দ্বিতীয় দফার এই সর্বাত্মক লকডাউনে চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তারা। অনেকেই এই বাথান শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে সম্ভাবনাময় এই শিল্পটি। জেলার প্রাণীসম্পদ সূত্রে জানা যায়, উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ক্ষুদ্র পরিসরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে গরু পালন শুরু হয়। ১৯৭৩ সালে সমবায়ভিত্তিক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার একটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারাখানা এ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখানে গড়ে ওঠে হাজার হাজার গরুর খামার। কিন্তু গত বছর করোনাভাইরাসের শুরু থেকে ক্রমাগত গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি এবং সে অনুপাতে দুধের মূল্য বৃদ্ধি না পাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন খামারিরা।
এ ছাড়াও উচ্চমূল্যে কেনা অধিকাংশ গো-খাদ্যে রয়েছে ভেজাল। যা খাওয়ানোর পর নতুন নতুন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গবাদিপুশু। চাহিদা মোতাবেক ডাক্তার না থাকায় রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারছে না। ফলে প্রতিনিয়ত কমছে দুধের উৎপাদন। প্রজনন ক্ষমতা হারাচ্ছে গাভীগুলো। অনেক খামারি তাদের জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন গাভীগুলো রোগাক্রান্ত হওয়ায় স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় তারা চলতি বছর করোনাভাইরাসের দ্বিতীয়
ধাপে সারা দেশে লকডাউন শুরু হওয়ায় উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে নামমাত্র মূল্যে দুধ বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন খামারিরা। খামারিরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সরকারের প্রণোদনা ঋণ নিতে গেলেও উল্টো হয়রানি পোহাতে হয় প্রতিনিয়ত। এ কারণেই চরম হতাশার মধ্যে দিনযাপন করছেন এখানকার সমবায় ভিত্তিক খামারিরা। শাহজাদপুর রেশমবাড়ীর খামারি ও মিল্ক ভিটার পরিচালক আবদুস সামাদ ফকির মানবজমিনকে বলেন, এই করোনার কারণে ভালো নেই আমাদের
গো-খামারিরা। প্রতিদিন এই জেলার ১৫৩৮০টি খামার থেকে ২০ লাখ ৫০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এই উৎপাদিত দুধ জেলার চাহিদা ৮ লাখ, মিল্ক ভিটা, প্রাণ, আড়ং, এ্যাংকার, ঈগলু মিলে নেয় সাড়ে ৩ লাখ লিটার। অবশিষ্ট ৯ লাখ লিটার দুধ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার হোটেল ও মিষ্টির দোকানগুলোতে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু গত ৯ দিন ধরে কোনো দূরপাল্লার
যানবাহন চলাচল না করায় নামমাত্র মূল্যে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে, আবার অনেকে দাম না পেয়ে রাস্তায়ও ফেলে দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে খামারিরা মারা পড়বেন।
কান্দপাড়া এলাকার তালুকদার ডেইরি ফার্ম লিমিটেড এর পরিচালক মনিরা তালুকদার বলেন, আমার ৭০টি গরুর মধ্যে ২০ গরু থেকে প্রতিদিন ৩০০ লিটার দুধ উৎপাদন করি। বর্তমান করোনার জন্য ন্যায্য মূল্যে দুধ বিক্রি করতে পারছি না। গত বছরে যে লোকসান হয়েছে, এ বছরে তার চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি। আমরা হয়তো আর খামার চালাতে পারবো না। অন্যদিকে ছোট ছোট খামারিরা গরু বিক্রি করার জন্য হাটে হাটে ঘুরছেন।
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আক্তারুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের জন্য আমার জেলার খামারিরা উৎপাদিত দুধ নিয়ে যাতে সমস্যায় না পড়েন সে কারণে আমি মিল্ক ভিটাসহ প্রাণ, আড়ং, এ্যাংকার, ঈগলু কোম্পানিদের বলেছি, এখন কোনোভাবেই দুধ কম নেয়া যাবে না। সেই সঙ্গে খামারিদের উৎপাদিত অবশিষ্ট দুধ বাজারে সঠিকভাবে বিক্রির জন্য ভ্রাম্যমাণ গাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যেসব খামারিরা দুধ বিক্রি করতে না পারবেন তারা এই ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে দুধ দেবেন। এই গাড়ি আমাদের প্রাণীসম্পদ অফিসের কর্মকর্তারা মনিটরিং করবেন। এভাবে দশদিন আমরা ভ্রাম্যমাণ সেবা দিতে পারবো খামারিদের। আর ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর