× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

স্ত্রীর পরকীয়ার লজ্জায় জীবন দিলো সোহরাব

বাংলারজমিন

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
১৭ এপ্রিল ২০২১, শনিবার

বাচ্ছু মিয়ার ছেলে সোহরাব। ২১ বছরে টগবগে যুবক। ৬ ভাই বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। বাড়ি সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের শান্তিনগর গ্রামে। জন্ম দরিদ্র পরিবারে। শিশুকালে মা বাবা হারা সোহরাব পড়ালেখা করতে পারেনি। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে শান্তিনগরে ছোট একটি দোকানে চা সিঙ্গারা বিক্রি করে। দিনরাত পরিশ্রম করে ভালই চলছিল সোহরাবদের ৬ সদস্যের সংসার।
২০২০ সালের ৭ই নভেম্বর সদর উপজেলার বুধল গ্রামের সিরাজ আলীর মেয়ে শান্তা বেগমকে (১৮) সামাজিক ভাবে বিয়ে করে সে। কে জানত? এ বিয়েই কাল হবে সোহরাবের জীবনে। বিয়ের কিছুদিন পরই সোহরাবকে আলাদা সংসার পাততে হয়। শান্তা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। শ্বশুর-শাশুড়ি সহ নিজের স্বজনদের জানিয়েও স্ত্রীকে পরকীয়া থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেনি। সর্বশেষ নিজের জীবন দিয়ে স্ত্রীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করলো সোহরাব। একটি তরতাজা যুবকের করুণ প্রয়াণে স্তব্ধ হয়ে গেল তার পরিবার ও গোটা গ্রাম। কিন্তু স্বামীর এমন মৃত্যুতে একটুও বিচলিত হননি স্ত্রী শান্তা। স্বামীর লাশটি পর্যন্ত দেখতে আসেননি। ঘটনার পরই পালিয়ে গেছে গাঢাকা দিয়েছে শরীফ। আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে স্ত্রী শান্তা, পরকীয়া প্রেমিক শরীফ মিয়া ও শ্বশুর শাশুড়ির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করেছেন, সোহরাবের চাচাত ভাই খোরশেদ আলম। শান্তার পরিবার ও স্বজনরা বলছে সকল অভিযোগ মিথ্যা। সোহরাবের আত্মহত্যার কারণ তার পরিবারের লোকজনই ভাল জানেন।

নিহতের পরিবার, অভিযোগপত্র ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই স্বামীর সাথে শান্তার সম্পর্ক ভাল যাচ্ছিল না। কারণে অকারণে সোহরাবকে এড়িয়ে চলত শান্তা। এক সময় শান্তার চলাফেরায় পরিবর্তন দেখা যায়। পিতার সংসার ছেড়ে আলাদা হয়েও স্বস্তি পায়নি সোহরাব। বুধল গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে প্রবাসী শরীফ মিয়া (২৫) নামের এক যুবকের সাথে পরকীয়ার কারণেই স্বামীকে এড়িয়ে চলছে শান্তা। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায় স্বামী। সম্প্রতি দেশে এসেছে শরীফ। স্বামীর অজান্তে শান্তা বুধল গ্রামের প্রয়াত নুরুল ইসলামের ছেলে শরীফকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাফেরার বিষয় জেনে যায় সে। এতে ভীষণ কষ্ট পায় সোহরাব। শান্তার পরকীয়ার বিষয়টি তার মা বাবাকে জানিয়েও কোন সুফল পায়নি। উল্টো হাস্যরসের খোরাক হয়েছে।  মৃত্যুর ২/৩ সপ্তাহ আগে বেড়ানোর কথা বলে বাবার সাথেই পিত্রালয়ে যায় শান্তা। শান্তা সেখানে সোহরাবের জজিয়তে আসেনি। সোহরাব দেখতে পায়- শ্বশুর বাড়ির একটি কক্ষের বিছানায় আপত্তিকর অবস্থায়। এরপর থেকে আরো ভেঙে পড়েন সোহরাব। চলাফেরায় কথা বার্তায় কেমন যেন অস্বাভাবিকতা। চেহারায় বিষাদের চাপ। নিজের স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়টি লজ্জায় পরিবার ও সমাজের কাউকে জানাতে পারছিলেন না। ভেতরেই লালন করেছেন। চেষ্টা করেছেন স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে। ব্যর্থ হয়েছেন। শান্তার গর্ভে ছিল সোহরাবের সন্তান। এক সময় পরকীয়ার কারণে গর্ভের ওই সন্তানটিকে নষ্ট করে ফেলে শান্তা। হৃদয় মন ভেঙে টুকরো হয়ে যায় সোহরাবের। আর সহ্য করতে পারছিলেন না তিনি। স্ত্রী নেই। একা ঘরে সোহরাব। গত ৩ এপ্রিল শনিবার দুপুর ১টার দিকে নিজের বসত ঘরে বিছানার ছাদরের টুকরো দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন সোহরাব। পুলিশ সোহরাবের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত করেছেন। এঘটনায় থানায় হয়েছে অপমৃত্যু মামলা। পরিবার ও স্বজনরা বলছেন, স্ত্রীকে পরকীয়া প্রেম থেকে ফিরিয়ে আনতে অনেক চেষ্টা করেছে। শান্তার চরিত্র বদলাতে পারেনি। তাই নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে স্ত্রীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করলেন সোহরাব। শোকের মাতম চলছে পরিবারসহ গোটা গ্রামে। সোহরাবের লাশ দাফনের ১৪ দিন পরও স্বামীর বাড়িতে আসেনি শান্তা। শেষবারের মত স্বামীর মুখও দেখেনি। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে শান্তিনগর ও বুধল গ্রামের লোকজনকে। এ বিষয়ে মুঠোফোনে (০১৭৪৪-২৭৮২১৪) শান্তার পিতা সিরাজ মিয়া শবেবরাতের দিন থেকে শান্তা তার বাড়িতে অবস্থান করার কথা স্বীকার করে বলেন, শরীফকে আমি চিনি। শান্তার বিরুদ্ধে আনীত পরকীয়া, সন্তান নষ্ট করা সহ সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। শান্তাকে ফোনটি দিতে বললে তিনি বলেন দূরে আছে দেওয়া যাবে না। কিছুক্ষণ পর বলেন, শান্তা স্বামীর বাড়িতে আছে। আবার বলেন না অন্য এক জায়গায় আছে। শান্তা কেন স্বামীর লাশ দেখেনি বা আদৌ স্বামীর বাড়িতে যাচ্ছে না? এমন প্রশ্নের উত্তরে সিরাজ মিয়া বলেন, সোহরাব মৃত্যুর পরই তারা লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের বাড়িঘরে হামলার চেষ্টা করে। তাই যায়নি। বুধল গ্রামের বাসিন্দা সালিশকারক মো. সেলিম মিয়া মুঠোফোনে বলেন, সিরাজ মিয়া দুর্বল লোক। তাই তার মেয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে তারা। আমি ভাইস চেয়ারম্যান হানিফকে নিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বসেছিলাম। সোহরাবের স্বজনরা মানেননি। এ ঘটনা তারাই ঘটিয়েছে কিনা কে বলতে পারবে?
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর