সিলেটে লকডাউনের পঞ্চম দিন। সকালটা ছিল অনেকটা ঢিলেঢালা। আগের চারদিনের চেয়ে বেশ স্বাভাবিক ছিল। রাস্তায় রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল করছে। প্রাইভেট যানবাহনও মাঝেমধ্যে চলছে। দুপুর হতেই পরিস্থিতি পাল্টে গেল। রাস্তায় অবস্থান নিলো পুলিশ। নগরীর প্রায় সবক’টি মোড়ে মোড়ে পুলিশ বসিয়েছে অস্থায়ী চেকপোস্ট।
এতে আটকা পড়েছে চলাচলকারী গাড়ি। এতে দেখা দিচ্ছে যানজটও। এরপর থেকে সিলেটে ফের যানবাহন চলাচল কমে আসে। তবে ইফতারের আগে নগরের কোথাও অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশের তল্লাশি চোখে পড়েনি। করোনায় লাল হয়ে উঠেছে সিলেট। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা দিচ্ছেন সতর্কবার্তা। বিশেষ করে সিলেট বিভাগের মধ্যে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার পরিস্থিতি খুবই নাজুক। করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রমজানের আগে এক সপ্তাহের লকডাউন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এতে কাজ হয়নি। বরং ওই লকডাউন পরিণত হয়েছিল তামাশার লকডাউনে। এ কারণে ১৪ই এপ্রিল থেকে ফের লকডাউন চলছে। লকডাউনের মাধ্যমে দেশের উত্তর-পূর্বের শহর সিলেটকে বিচ্ছিন্ন রাখা সম্ভব হয়েছে। লকডাউনের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন পুরোপুরি ভাবে কার্যকর হয়েছে সিলেটে। শুক্রবার পর্যন্ত অনেকেই লকডাউন মেনে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হননি। কিন্তু শনিবার থেকে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টাতে থাকে। এক্ষেত্রে পুলিশের শিথিলতাকে দায়ী করেছেন নগরের মানুষ। কারণ সিলেট নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে লকডাউন পালনে পুলিশের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা ছিল না, এখনো নেই। নগরীর বন্দরবাজার, কালিঘাট, কাঁচাবাজার, মাছবাজারে মানা হয়নি কোনো স্বাস্থ্যবিধি। লোকজন লকডাউনের মধ্যে অবাধে ঘুরাফেরা করেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে কেবলমাত্র নগরীর প্রবেশমুখগুলোতেই কড়াকড়ি আরোপ ছিল। প্রবেশমুখে কড়াকড়ির কারণে কার্যত নগর থেকে গ্রাম বিচ্ছিন্ন ছিল। তবে- শনিবার থেকে মানুষ ঘরের বাইরে বের হওয়ার কারণে নগরের পরিবেশ স্বাভাবিক নিয়মে ফিরতে শুরু করেছিল। এতে বাদ সেধেছে পুলিশ। দুপুর ১২টায় হঠাৎ করে নগরীর তালতলা এলাকায় ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। পুলিশ সদস্যরা এ সময় বন্দরবাজার অভিমুখে রিকশা চলাচল করতে দিচ্ছিলো না। ফলে ওই এলাকায় সাময়িক জটলা বেধে যায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে কেউ কেউ তর্কেও জড়িয়ে পড়েন। পুলিশ এ সময় যানবাহন ধরে ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মুখোমুখি করেছে। একই অবস্থায় ছিল সিলেটের কোর্ট পয়েন্ট সহ আশপাশ এলাকায়। নগরীর প্রাণকেন্দ্র ওই এলাকাতেও গতকাল দুপুরের পর থেকে ব্যস্ত ছিল পুলিশ সহ ভ্রাম্যমাণ আদালত। দুপুরে নগরীর বন্দরবাজারের কোর্ট পয়েন্টে সিলেট জেলা প্রশাসনের এনডিসি মোহাম্মদ ইশতিয়াক ইমনের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় মাক্স না পরার অপরাধে ২ জনকে ৫০০ টাকা করে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়। সকাল থেকে নগরীর সড়কগুলোও ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও রিকশার দখলে। চেকপোস্টে আগের মতোই গাড়ি থামিয়ে পুলিশ মুভমেন্ট পাস আছে কিনা চেক করছেন। পাস না থাকলে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হওয়ায় অনেকেই জরিমানা ও মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারগুলোকে মামলা দিতেও দেখা গেছে। এ সময় সিলেটের সড়কে তৎপর ছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ, উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ পিপিএম। তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, লকডাউনে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যারা বাইরে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন তাদের মুভমেন্ট পাস না থাকলে মামলা দেয়া হচ্ছে। সিলেট জেলা প্রশাসনের এনডিসি মোহাম্মদ ইশতিয়াক ইমন জানিয়েছেন, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যারা মাস্ক ছাড়া চলাচল করবেন তাদেরকে ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে যাদের মুভমেন্ট পাস নেই তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।