চলে গেলেন চলচ্চিত্রের সোনালী দিনের নায়ক ওয়াসিম। শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কিছুদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন ওয়াসিম। ব্রেন, নার্ভ ও হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। অসুস্থ হওয়ার পর তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে বাসায় নিয়ে যেতে বলেন
কারণ, দেশে করোনার যে পরিস্থিতি তাতে হাসপাতালে রাখা নিরাপদ নয়। এদিকে গতকাল জোহরের নামাজের পর গুলশান আজাদ মসজিদে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বনানী কবরস্থানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে সেখানেই দাফন করা হয় তাকে।
এক সময় অ্যাকশনের পাশাপাশি ফোক-ফ্যান্টাসি সিনেমার এক নম্বর আসনটি দখলে ছিল ওয়াসিমের। ১৯৭২ সালে ঢাকাই সিনেমাতে ওয়াসিমের অভিষেক হয় সহকারী পরিচালক হিসেবে ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’র মাধ্যমে। আর নায়ক হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয় ‘রাতের পর দিন’ সিনেমার মাধ্যমে। দিন যতই যেতে থাকে ওয়াসিমের জনপ্রিয়তা ততই আকাশচুম্বী হয়। বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমায় অপরিহার্য নায়ক হয়ে ওঠেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’, ‘রাতের পর দিন’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘দি রেইন’, ‘রাজদুলারী’, ‘বাহাদুর, ‘মানসী’, ‘সওদাগর’, ‘নরম গরম’, ‘বেদ্বীন’, ‘ঈমান’, ‘লাল মেম সাহেব’ ইত্যাদি। তিনি সিনেমা প্রযোজনাও করেছেন। তার প্রযোজিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘হিসাব চাই’, ‘মোহন বাঁশি’, ‘নয়া তুফান, ‘সীমাবদ্ধ’ ইত্যাদি। অনেক দিন ধরে সিনেমা থেকে দূরে ছিলেন ওয়াসিম। ২০১০ সালের পর লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিলেন। এই আড়ালে চলে যাওয়ার গল্পটাও মর্মস্পর্শী। অল্প সময়ের ব্যবধানে স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে হারানোর শোক সহ্য করতে না পেরেই নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন। ২০০০ সালে তার স্ত্রীর অকাল মৃত্যু ঘটে। ২০০৬ সালে তার কন্যা বুশরা আহমেদ চৌদ্দ বছর বয়সে স্কুলের পাঁচতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। স্ত্রী আর কন্যার অকাল মৃত্যু ওয়াসিমের জীবনে বিষাদ নেমে আসে। সবকিছু থেকে দূরে সরে যান। তার ছেলে ফারদিন লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে সেখানেই স্থায়ী হয়েছেন বলে জানা যায়। ওয়াসিম শেষবারের মতো কাজ করেছিলেন ২০০৯ সালে জীবন রহমান পরিচালিত ‘কাঁকন দাসী’ ছবিতে। তবে এই ছবির নির্মাণ কাজ পরে আর শেষ হয়নি।