সামরিক জান্তাকে স্বীকৃতি না দিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মিয়ানমারে গণতন্ত্রপন্থি বিরোধী দলগুলোর জাতীয় ঐক্যের সরকার (ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট- এনইউজি বা নাগ)। পক্ষান্তরে মিয়ানমার সংকট সমাধানের যেকোনো উদ্যোগে তাদের সঙ্গে আলোচনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, শনিবার থাইল্যান্ড সরকারের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং ২৪শে এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠেয় আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে পারেন। যদি তিনি এই সম্মেলনে যান তাহলে এটাই হবে গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার পর তার প্রথম বিদেশ সফর। আর এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক এক স্বীকৃতি পেয়ে যাবে জান্তা সরকার। তবে আসিয়ানের এই সম্মেলন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি জান্তা। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়, ১লা ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর রক্তাক্ত মিয়ানমার রয়েছে টালমাটাল অবস্থায়।
সেখানে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ১০ সদস্যের এসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশন্স (আসিয়ান)। তবে প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত হওয়ার খুব সামান্যই ইচ্ছা প্রকাশ করেছে সেনারা। এছাড়া যে সরকারকে তারা ক্ষমতাচ্যুত করেছে তাদের কোনো সদস্যের সঙ্গে কোনো আলোচনায় যাওয়ার কোনোই ইঙ্গিত মিলছে না। এ অবস্থায় গত শুক্রবার ক্ষমতাচ্যুত স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচিকে গণতন্ত্রপন্থি প্রতিবাদ ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নেতা হিসেবে রেখে গঠন করা হয়েছে জাতীয় ঐক্যের সরকার- নাগ। এর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী মোয়ে জাওয়া ওও বলেছেন, সামরিক জান্তাকে স্বীকৃতি দেয়া উচিত হবে না আসিয়ানের। ভয়েস অব আমেরিকাকে রোববার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, মিয়ানমার সম্পর্কিত বিষয়ে যদি কোনো পদক্ষেপ নেয়ার কথা বিবেচনা করে আসিয়ান, তাহলে আমি বলবো এনইউজি বা নাগের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সফল হবে না। এই জাতীয় ঐক্যের সরকারকে সমর্থন দিয়েছে জনগণ এবং তাদের রয়েছে পুরোপুরি বৈধতা। এনইউজি আরো বলেছে, তারাই মিয়ানমারের আইনগত কর্তৃপক্ষ। এজন্য তারা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চেয়েছে। একইসঙ্গে সামরিক জান্তা মিন অং হ্লাইংয়ের পরিবর্তে তাদেরকে আসিয়ানে আমন্ত্রণ জানানোর আহ্বান জানিয়েছে। মোয়ে জাওয়া ওও বলেন, জান্তার কাউন্সিলকে যেন স্বীকৃতি দেয়া না হয়- এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তবু এখনো ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় আসিয়ান সম্মেলনে এই জাতীয় ঐক্যের সরকারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ এসিসট্যান্স এসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) বলেছে, অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভকারীদের কমপক্ষে ৭৩৭ জনকে হত্যা করেছে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী। এর কড়া সমালোচনা করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। আসিয়ানভুক্ত এক দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের হস্তক্ষেপের নীতি না থাকলেও অনেক সদস্য দেশ এর বিরুদ্ধে অপ্রত্যাশিতভাবে সমালোচনা করেছে।
ওদিকে রোববারও জাতীয় ঐক্যের সরকারের পক্ষে সমর্থন প্রদর্শনের জন্য বেশকিছু শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। দামী রুবি পাথর উত্তোলনকারী শহর মোগরে বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা গুলি চালিয়েছে। এতে কমপক্ষে দু’জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে কয়েক স্থানে হাতবোমা বিস্ফোরিত হয়েছে। সেখানে একজন সেনা সদস্য নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছে। এসব বিস্ফোরণের দায় কেউ স্বীকার করেনি। তবে সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের বোমা হামলার জন্য দায়ী করেছে। শনিবার মধ্যরাতে তারা বিভিন্ন এলাকায় ঘেরাও দিয়ে কমপক্ষে ৩০ জনকে আটক করেছে। ওদিকে সেনাবাহিনী পরিচালিত টেলিভিশন মায়াওয়ার্দী টিভি ৬ জন ব্যক্তির ছবি প্রচার করেছে। রিপোর্টে তারা বলেছে, এসব মানুষকে ঘরে তৈরি অস্ত্রসহ পাওয়ার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের বেশির ভাগকেই প্রহার করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। মুখের ওপর রক্ত জমে আছে। অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনী ৯৩০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এর মধ্যে রয়েছেন অভিনেতা-অভিনেত্রী, গায়ক-গায়িকা এবং ইন্টারনেট ভিত্তিক সেলিব্রেটি। রোববার রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় অভিযোগ আনা হয়েছে আরো ২০ জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। যেসব হাসপাতালে তারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে।