আটক ২০ কেজি গাঁজার মধ্যে ১২ কেজি তিন যুবলীগ নেতা ও কথিত এক সাংবাদিকের মধ্যে ভাগাভাগির ঘটনা ঘটেছে। অবশিষ্ট ৮ কেজি গাঁজা উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের নহল চৌমুহনী নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার ৬ দিন অতিবাহিত হলেও উদ্ধার হয়নি ভাগাভাগি হওয়া ১২ কেজি গাঁজা। এ ঘটনায় কথিত এক সাংবাদিক ও যুবলীগ নেতাদের থানায় ডেকে সোমবার রাতে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। সূত্র জানায়, গত ১৪ই এপ্রিল রাত আনুমানিক ৮টায় গাইটুলি গ্রামের মৃত ফজলুর রহমান ভুঁইয়ার ছেলে মাদক ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন (৪০) সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কসবা থেকে গাঁজা নিয়ে আসছিলেন। এমন খবর পেয়ে নহল গ্রামের মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে কবির মিয়া (৩২) ও গাইটুলি গ্রামের মতিন মিয়ার ছেলে বুলেট বাবু (২৪) নহল চৌমুহনী নামক স্থানে তার গাঁজা আটক করার জন্য ওত পেতে থাকেন। গাড়ি আসা মাত্রই ব্যারিকেড দেয় তারা।
এ সময় গাড়িতে থাকা ফারুক গাঁজা ফেলে সিএনজি নিয়ে পালিয়ে যায়। এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন নহল গ্রামের আবুল হাসেমের ছেলে ও ধামঘর ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি রাব্বি (২৫), গাইটুলি গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে ও যুবলীগ কর্মী সোহেল মিয়া (২৯), জাহাপুর গ্রামের সুরুজ মিয়ার ছেলে ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত বাবু (২৮) ও মৃত আবুল কাশেমের ছেলে কথিত সাংবাদিক রাহাত হোসেন (৩৫) সহ অন্যরা। তখন রাহাত ফারুকের পক্ষ হয়ে ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে গাঁজা দিয়ে দেয়ার সমঝোতার প্রস্তাব দেয় কবির ও বাবুকে। এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে জোর খাটিয়ে ১২ কেজি গাঁজা নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন রাহাত হোসেন, মোর্শেদ কামাল রাব্বি, ইয়াছিন আরাফাত বাবু ও সোহেল মিয়া। খবর পেয়ে অবশিষ্ট ৮ কেজি গাঁজা থানায় নিয়ে যায় এএসআই আবু হানিফ। এ ঘটনায় পুলিশ মাদক ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন, বুলেট বাবু ও কবিরের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি। গাঁজার গাড়ি আটককারী বুলেট বাবু ও কবির মিয়া বলেন, গাঁজা ব্যবসায়ী ফারুকের কাছ থেকে আমরা টাকা পাই। দীর্ঘদিন সে ঘুরাচ্ছে। তাই গাঁজা নিয়ে আসছে এমন খবরে গত ১৪ই এপ্রিল বুধবার রাত আনুমানিক ৮টায় চৌমুহনীতে তার গাড়ি ব্যারিকেড দেই। উপায়ান্তর না পেয়ে ফারুক গাঁজা ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে রাহাত হোসেন আমাদের সঙ্গে ৭০ হাজার টাকায় রফা করার চেষ্টা করে। তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় কিছু গাঁজা নিয়ে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। খবর পেয়ে থানার এএসআই আবু হানিফ এসে ৮ কেজি গাঁজা নিয়ে যায়। এখন গাঁজা আটকিয়ে আমরা বিপাকে আছি। বিভিন্ন দিক থেকে নানা রকম হুমকি-ধমকি আসছে।
গাঁজা ব্যবসায়ী ফারুক বলেন, আমার সিএনজিতে ২০ কেজি গাঁজা ছিল। কবির, বুলেট বাবু ও অন্যরা তা ভাগাভাগি করে নিয়ে গেছে। যুবলীগ নেতা মোর্শেদ কামাল রাব্বি, ইয়াছিন আরাফাত বাবু ও সোহেল মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে, তারা গাঁজা ভাগাভাগি করে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
মুরাদনগর থানার ওসি সাদেকুর রহমান বলেন, আমরা ঘটনাস্থল থেকে ৮ কেজি গাঁজা পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছি। গাঁজা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৩ জনের নামে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। গাঁজা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠা ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মুচলেকা রেখেছি। বাকি গাঁজা উদ্ধারসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার তৎপরতা অব্যাহত আছে।