ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেয়ার পর কেউ কেউ কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হলেও তাদের মধ্যে সংক্রমণের তীব্রতা কম থাকে বলে এক গবেষণায় জানা গেছে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সাইয়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) সাত সদস্যের গবেষক দল গত ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ই এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রামে প্রথম ডোজের ভ্যাকসিনগ্রহীতাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালান। সিভাসু উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে গবেষণা দলের অন্য সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক ড. শারমিন চৌধুরী ও ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, ভেটেরিনারি চিকিৎসক ত্রিদীপ দাশ, প্রণেশ দত্ত, মো. সিরাজুল ইসলাম ও তানভীর আহমদ নিজামী। গবেষণায় ১৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত সিভাসু ল্যাবে পরীক্ষা করা ছয় হাজার ১৪৬ জনের নমুনার মধ্যে কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়া এক হাজার ৭৫২ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষকরা জানিয়েছেন, শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে ২০০ জন গত ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ই এপ্রিলের মধ্যে অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন। এদের মধ্যে করোনাভাইরাসের উল্লেখযোগ্য উপসর্গ শ্বাসকষ্ট তেমন ছিল না। এদের মধ্যে ৮২ দশমিক ৫ শতাংশকে (১৬৫ জন) হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। বাকি ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ (৩৫ জন) ভর্তি হলেও তাদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা যায়নি।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহীতাদের মধ্যে ১৭৭ জনের (৮৮ দশমিক ৫ শতাংশ) শ্বাসকষ্ট ছিল না। ১৮৪ জনের অতিরিক্ত অঙিজেন সরবরাহের প্রয়োজন হয়নি। ‘বয়সের আধিক্য এবং কো-মরবিডিটির’ কারণে বাকিদের শ্বাসকষ্ট এবং অতিরিক্ত অঙিজেন সরবরাহের প্রয়োজন হয়েছে বলে গবেষকদের দাবি। গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের কার্যকারিতা কতটুকু তা বুঝতে এ গবেষণা চালানো হয়। তিনি বলেন, টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার পর আক্রান্ত ২০০ জনের মধ্যে ১৬৫ জনের মৃদু উপসর্গ ছিল এবং ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে তাদের নমুনা পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ ফল এসেছে। এদের মধ্যে ১২৯ জনের (৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ) কো-মরবিডিটি ছিল, এর মধ্যে ৩৫ জন হাসপাতালে গেছেন, তাদের ১৬ জনের অঙিজেন লেগেছে, কিন্তু তাদের তীব্র স্বাস্থ্য ঝুঁকি হয় নাই। এই ১২৯ জনের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ (৩৬ জন), ডায়াবেটিস (৩২ জন), এলার্জির (পাঁচজন) সমস্যা ছিল। ৫১ জনের আবার একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল। ভ্যাকসিনগ্রহীতাদের মধ্যে শুধু একজন রোগী হাসপাতালে মারা গেছেন উল্লেখ করে গবেষকরা বলেন, ৪৮ বছর বয়সী ওই রোগীর পূর্বেই কিডনি নিয়ে জটিলতা ছিল। ভ্যাকসিন নেয়ার পরে আক্রান্ত হলেও স্বাস্থ্য ও মৃত্যু ঝুঁকি কম হবে বলে মনে করছেন তারা। গবেষণায় দেখা গেছে, গড়ে টিকা নেয়ার ৩২ দিন পর তারা আক্রান্ত হয়েছেন এবং গড় তাপমাত্রা ছিল ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট। ভ্যাকসিন না নেয়াদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে হাঁচি-কাশি থাকলেও গ্রহণকারীদের মধ্যে কারো কারো তিন থেকে সাতদিন পর্যন্ত ছিল। প্রথম ডোজ নেয়াদের মধ্যে যাদের শ্বাসকষ্ট ছিল তা গড়ে পাঁচদিনের বেশি ছিল না এবং অঙিজেন স্যাচুরেশন সর্বনিম্ন ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ছিল। অপরদিকে যারা ভ্যাকসিন নেননি, তাদের অঙিজেন স্যাচুরেশন ৯০ শতাংশের নিচে নেমে যায় এবং শ্বাসকষ্ট বেশিদিন ধরে দেখা গেছে। যারা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়ে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের বেশির ভাগকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। অর্থাৎ তাদের সিভিয়ারিটি অনেক কম ছিল এবং দ্রুত সুস্থ হয়েছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।