বাংলারজমিন

খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের আউটসোর্সিং কর্মচারীদের সংকট কাটছেই না

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

২০২১-০৪-২১

খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ও নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ খুলনার সিভিল সার্জনের আওতাধীন বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের আউটসোর্সিং কর্মচারী বিষয়ক সংকট কাটছেই না। বিগত ১০ মাস যাবৎ ২১১ জন আউটসোর্সিং কর্মচারীর সংকট চলমান থাকলেও নতুন করে আবারও ২১৪ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়ে নয়া জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। নতুন এসব কর্মচারীদের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন না হওয়ায় তাদের কার্যক্রম স্থগিত রাখার বর্তমান সিভিল সার্জনের নির্দেশ পক্ষকালেও বাস্তবায়ন হয়নি। আবার পুরাতন ঠিাদারের সরবরাহকৃত ২১১ জন কর্মচারীকে আগের সিভিল সার্জন কাজ করতে নিষেধ করায় তারাও যথারীতি ডিউটি করছেন। অর্থাৎ একই প্রতিষ্ঠানে এখন দুই ঠিকাদারের দেয়া দ্বিগুন কর্মচারী কর্মরত।
এদিকে, দু’শ্রেণির কর্মচারীই নিজেদেরকে বৈধ কর্মচারী দাবি করে একই প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করায় দু’পক্ষের মধ্যে  উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রথম থেকে হাসপাতালগুলোতে দায়িত্ব পালন করে আসা ২১ জন কর্মচারী তারা করোনাকালীন সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন বলে নিজেদেরকে বৈধ হিসেবে দাবি করছেন। পক্ষান্তরে নতুন কর্মচারীরাও বর্তমান ঠিকাদারের নিয়োগকৃত ও  বিপুল পরিমান অর্থের বিনিময়ে অস্থায়ী ভিত্তিক এ চাকরী পাওয়ায় তারাও কর্মস্থল ছাড়তে নারাজ।
গত কয়েকদিন ধরে খুলনা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে নতুন নিয়োগকৃত ২১৪ জনের কার্যক্রম স্থগিত রাখা সংক্রান্ত বর্তমান সিভিল সার্জনের দেয়া পত্র শোভা পাচ্ছে। পুরাতন ২১১ জনের পক্ষ থেকে ওই পত্র গোপনে লাগিয়ে রাখা হচ্ছে বলে যেমন জনশ্রুতি রয়েছে তেমনি সে পত্র আবার নতুন নিয়োগকৃত ২১৪ জনের কেউ কেউ ছিড়ে ফেলছেন এমন অভিযোগও উঠেছে। যা নিয়ে উভয় গ্রুপের কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
নতুন নিয়োগকৃত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কন্টাক্ট ক্লিনিং সার্ভিস লিমিটেডএর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দেয়া খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ স্বাক্ষরিত গত ৫ এপ্রিলের পত্রে বলা হয়, ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর উক্ত দপ্তরের পক্ষ থেকে কার্যাদেশ দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত যেহেতু প্রশাসনিক অনুমোদন হয়নি সেহেতু ওই প্রতিষ্ঠানের দেয়া ২১৪ জন আউটসোর্সিং কর্মচারীর কার্যক্রম স্থগিত রাখা হোক। কিন্তু গত ১৫ দিনেও সিভিল সার্জনের ওই পত্রের আলোকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে কন্টাক্ট ক্লিনিং সার্ভিসেস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হোসেন হেমায়েতও এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের মে মাস থেকে ২১১ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয় মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওই ২১১ জন চাকরিতে যোগদানের প্রায় ১৩ মাস পর গত বছর জুলাই মাসে এক বছরের বেতন পান। কিন্তু এর পর থেকেই আবারো বেতন বন্ধ থাকে। পরে তৎকালীন সিভিল সার্জনকে ম্যানেজ করে নতুন নতুন কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে টেন্ডার আহবান করা হয়। এতে দেখা যায় ওই টেন্ডারে যেসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে তারা কোন না কোনভাবে একটি সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ত। বিশেষ করে কন্টাক্ট ক্লিনিং সার্ভিসেস লিমিটেড এবং মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি সার্ভিসেস (প্রা:) লিমিটেড নামের একই মালিকানার দু’টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রদত্ত দরও (মূল্য) ছিল একই। যেটি খুলনাস্থ পোর্ট হেলথ অফিসার ডা: শেখ মো: মোশাররফ হোসেন এবং খুলনার মেডিকেল সাব ডিপোর সহকারী পরিচালক ডা: মো: রফিকুল ইসলাম গাজীর সমন্বয়ে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনেও উল্লেখ রয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ওই তদন্ত প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থ বছরে খুলনা সিভিল সার্জন ও এর নিয়ন্ত্রণাধীন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল সরবরাহের লক্ষ্যে কন্টাক্ট ক্লিনিং সার্ভিসেস লিমিটেডকে যে কার্যাদেশ দেয়া হয় তা ত্রুটিপূর্ণ। এছাড়া ওই কার্যাদেশ পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৯৮ উপবিধির ৩১ অনুযায়ী করা হয়নি বলেও কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, ২০১৯ সালের ১২ মে তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা: এ,এস,এম আব্দুর রাজ্জাক স্বাক্ষরিত মেসার্স তাকবির এন্টারপ্রাইজকে দেয়া কার্যাদেশের শর্তাবলীর ৩ নম্বরে উল্লেখ রয়েছে, নির্দিষ্ট মেয়াদের পরও পরবর্তী দরপত্র গৃহিত না হওয়া পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ বলবৎ থাকবে। তৎকালীন ঠিকাদার মেসার্স তাকবির এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মো: ইকতিয়ার উদ্দিন ওই শর্তের আলোকে এখনও তার সরবরাহকৃত কর্মচারীরা বলবৎ আছেন এমনটি ধরে নিয়েছেন। সে অনুযায়ী তিনি বিভিন্ন কার্যক্রম করছেন। এমনকি ওই শর্তের আলোকেই বর্তমান সিভিল সার্জন পাঁচ মাসের বেতনের জন্য সুপারিশও করেছেন।
এতোকিছুর পরও বর্তমান ঠিকাদারের সরবরাহ করা ২১৪ জন আউটসোর্সিং কর্মচারীকে বহাল রাখার জন্য বর্তমান সিভিল সার্জনের ধীরে চলো নীতির বিষয় নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও সিভিল সার্জন বলেন, যে কোন কাজ একটি প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে এগিয়ে নিতে হয়। সেভাবেই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status