মঙ্গলবার ২৪ জুলাই ২০০৭ দিন ১০৩জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমার করবহির্ভূত আয়ের ওপর দেয়া কর গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ওদের যুক্তি হলো এই যে, আমি কর ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করেছি, কাজেই তাদের মতে আমি সরকার কর্তৃক ঘোষিত কর অদেয় থাকার অপরাধে অপরাধী এবং কোনোরকম অব্যাহতি পাওয়ার যোগ্য নাই। অথচ সরকারের এ ঘোষণা জারির মূল লক্ষ্যই ছিল করবহির্ভূত আয় ঘোষণা করে তার ওপর কর পরিশোধের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া এবং যে কোনো কারণেই হোক কেউ আয়ের উৎস ঘোষণা না করে প্রদেয় কর পরিশোধ না করে থাকলে তা পরিশোধের জন্য সুযোগ দেয়া। এভাবে রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক আমার কর পরিশোধের আবেদন প্রত্যাখ্যান করার অর্থ হলো- আমাকে চরমভাবে অপদস্থ করার আরেকটি কলাকৌশল মাত্র, যা ছিল পুরোপুরিভাবে স্বেচ্ছাচারী, বিদ্বেষমূলক ও স্ববিরোধী। আমি আদালতে একটি রিট আবেদন করে বোর্ডের এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করতে মনস্থ করেছি।
সরকার শেখ হাসিনা, তার বোন রেহানা, তাদের ফুফাতো ভাই শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে চার্জশিট দিয়েছে।
বুধবার ২৫ জুলাই ২০০৭ দিন ১০৪দেশ একদিকে নেতৃত্ববিহীন অবস্থায় থাকায় এবং অন্যদিকে সামরিক বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা না নেয়ায়, প্রশাসনে অসংলগ্নতা একরকম চরমে উঠেছে। এখন সরকারের ভেতরে দেখা যাচ্ছে আরেক সরকারের অস্তিত্ব, এক চক্রের ভেতর ঘূর্ণায়মান রয়েছে অন্য এক চক্র। কাজেই সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য যে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে তার বিচ্যুতি একরকম অবশ্যম্ভাবী। প্রশ্ন হচ্ছে, এতে কতদিন সময় লাগবে এবং এর মধ্যে রাষ্ট্র কতটুকু ক্ষতির শিকার হবে? এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এ সরকার যত বেশিদিন টিকে থাকবে জাতির জন্য ক্ষতির পরিমাণ হবে ততটুকুই বেশি।
বর্তমান সরকার নিজেকে একটি মস্তিষ্কবিহীন সরকার বলে প্রতিদিন প্রমাণ করে ছাড়ছে।
শেখ হাসিনা জেলে থাকাকালীন যৌথবাহিনী দ্বিতীয়বারের মতো তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে ও তার গাড়িসহ অনেক মূল্যবান দলিলপত্র জব্দ করেছে যাতে হাসিনার বিচার করে তাকে সাজা দিতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তথাকথিত বিবেকবান মঈনুল হোসেনের কুশপুত্তলিকা দাহ করে মহোৎসব করা হয়েছে। আমি নিশ্চিত, অচিরেই তাকে সরকার থেকে বিদায় নিতে হবে। সমাজের অন্যান্য তথাকথিত বিবেকবানদেরও কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ড. কামাল হোসেন, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, আমীর-উল ইসলাম এখন আর আইনের শাসন কিংবা সুপ্রিম কোর্টের সম্মান নিয়ে কথা বলছেন না। এরা সবাই যেন বেমালুম গায়েব হয়ে গেছেন।
বৃহস্পতিবার ২৬ জুলাই ২০০৭ দিন ১০৫রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ জন শিক্ষক সরকারের নির্যাতনের প্রতিবাদ ও জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের দাবিতে ক্লাস গ্রহণ থেকে বিরত থেকে গণছুটি গ্রহণ করেছেন ।
যৌথবাহিনীর নির্যাতনের হুমকির মুখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অনুরূপ কর্মসূচিতে যেতে পারেননি।
যৌথবাহিনীর সদস্যদের নির্যাতন ও শারীরিক অত্যাচারের পর সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের ছেলে নাসের রহমান ১০ দিনের রিমান্ড থেকে ফিরে এসেছেন জেলখানায়। শারীরিক নির্যাতনের ফলে তার সারা শরীর ছিল ক্ষতবিক্ষত। হাত ও পা ছিল ফোলা। সুস্থ হতে তার কয়েক মাস সময় লেগে যাবে।
ময়মনসিংহে এক বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধান বলেছেন যে, দুর্নীতি হলো দেশের একমাত্র সমস্যা এবং সে কারণেই সরকারকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করতে হয়েছে। পাকিস্তানে সকল জেনারেল আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান ও জিয়াউল হক এবং বাংলাদেশে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ঠিক একই কথা বলতে শোনা গেছে এবং তাদের পরিণতি কী হয়েছে নিজের চোখে আমরা তা দেখেছি
অ্যালকোহল কেসের ওপর হাইকোর্ট ডিভিশনের স্থগিতাদেশের সিদ্ধান্ত আদালতে এসে পৌঁছেছে। কাজেই মামলার ছুতো ধরে আদালতে যাওয়ার জন্য আমার বাইরে বেরিয়ে আসার সব সুযোগ আপাতত বন্ধ।
শুক্রবার ২৭ জুলাই ২০০৭ দিন ১০৬দেশে চলছে একটি অনির্বাচিত ও অবৈধ সরকার। দু’টি প্রধান রাজনৈতিক দলের অদূরদর্শিতার সুযোগ নিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান ক্ষমতা হাতে তুলে নিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এই বলে যে, সংবিধান অনুসারে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে, যতদিন পারা যায় তারা ক্ষমতা ধরে রাখবেন ।
ফৌজদারি আদালত পুরোপুরিভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় সেখানে দেওয়া অযৌক্তিক ও বেআইনি রায়গুলো বহাল রাখার একমাত্র উপায় হলো সুপ্রিম কোর্টে সেই রায়গুলো বহাল রাখার জন্য উচ্চতর আদালতকে প্রভাবিত করা। এজন্য ভীতি প্রদর্শন বা ব্ল্যাকমেইলিংসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা বা অসদাচরণের মামলা দায়ের করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে ও সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মদতে সময়ান্তরে তা সংবাদপত্রগুলোতেও প্রকাশ করা হচ্ছে।
শনিবার ২৮ জুলাই ২০০৭ দিন ১০৭দৈনিক ইত্তেফাক এখন আর মানিক মিয়া সম্পাদিত সেই দৈনিক ইত্তেফাক নয়। তাঁর সন্তান, মঈনুল হোসেন এখন অবৈধ সরকারের উপদেষ্টা ও মুখপাত্র হিসেবে চড়া গলায় কথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু এর পরেও চিরাচরিত অজাসহেতু মাঝে-মধ্যে তার পত্রিকা জনগণের পক্ষেও দু’-এককটা কথা বলে। আজকের কাগজে চমকপ্রদ কিছু সংবাদ বের হয়েছে। যেমন, অর্থনীতি ও বিনিয়োগে স্থবিরতা, চাল-ডাল-আটাসহ জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে ইত্যাদি। তাছাড়া উপ-সম্পাদকীয়তে লেখার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে- ‘বাজারের সুব্যবস্থা বজায় রাখুন’ এবং সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে যে, ‘দুর্নীতি দমনই সরকারের একমাত্র কাজ নয়’। সবকয়টিতেই সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে। কাজেই সরকার তার ব্যর্থতা লুকানোর জন্য যত রকমের প্রচেষ্টাই চালাক না কেন, বাস্তবতা এড়িয়ে গিয়ে সংবাদপত্রগুলোও তাদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে না।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা সরকারের একটি ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা নিজেরা যেন সব ধোয়া তুলসী পাতা। কিন্তু একবার ওদের বিরুদ্ধে সত্যিকারের প্রচার শুরু হলে তারাও পালাবার পথ খুঁজে পাবে না।
ব্যাপক ধরনের অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগের ফলে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন একটি চরমভাবে স্বেচ্ছাচারী ও নিবর্তনমূলক আইনে পরিণত হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আইনটি তৈরি করতে আমাকে ৯ মাস কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল।
রবিবার ২৯ জুলাই ২০০৭ দিন ১০৮প্রধান উপদেষ্টা ধীরে ধীরে স্বীকার করতে শুরু করেছেন যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সত্যি সত্যি অবনতি ঘটেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। গত একমাসে চালের দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। বিদ্যুতের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। দিনে দিনে বিদ্যুতের ঘাটতি পৌঁছে যাচ্ছে চরমের দিকে। এসবই এখন জনগণের জন্য সবচাইতে উদ্বেগের বিষয়। দুর্নীতি নিয়ে তাদের উদ্বেগ নেই এবং তারা জানেন যে, জরুরি আইনের আওতায় মুষ্টিমেয় লোককে আটক করে বা সাজা দিয়ে দুর্নীতি নির্মূল করা যাবে না।
সোমবার ৩০ জুলাই ২০০৭ দিন ১০৯বিচারপতি শাহ্ মোহাম্মদ আবু নাঈম আজ প্রমাণ করেছেন যে, সংবিধান সমুন্নত রাখার ব্যাপারে হাইকোর্ট ডিভিশন এখনো স্বাধীন। শেখ হাসিনার পক্ষে আবেদনের প্রেক্ষিতে তার বেঞ্চ থেকে একটি রুল জারি করে হাসিনার বিরুদ্ধে আনীত চাঁদাবাজির মামলার ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে ও জনাকীর্ণ এক আদালতে জরুরি অবস্থাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে, জরুরি আইনের নিষেধাজ্ঞামূলক বিধানসমূহ নাকচ করে তিনি জনগণের মৌলিক অধিকারকে সমুন্নত রেখেছেন।
গতকাল শহরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু এটা নিয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি। এ ধরনের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি বেশিদিন চলতে পারে না।
বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে অথচ সরকার এ ব্যাপারে নীরব। বিবিসি থেকে এটা নিয়ে সঠিক সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার ৩১ জুলাই ২০০৭ দিন ১১০হাসনা, আমান ও আনাকে স্বপ্নে দেখলাম। সে সময় সবাইকে স্বাভাবিক জীবন পালন করতে দেখেছি। আমান আমার চারপাশে ঘুরঘুর করছিল। আনা ছিল আমার সঙ্গে, জেনেভার মতো শহরে বিরাট একটা হোটেলে। শেষের দিকে তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ঘাড় দুলিয়ে আনা বলছিল, ‘বাবা আমি কি সাঁতার কাটতে যেতে পারি?’ এর সঙ্গে সঙ্গেই স্বপ্ন ভেঙে যায়।
আমি ওদের চিন্তা মন থেকে সরিয়ে লেখায় মনোনিবেশ করার চেষ্টা করি। কিন্তু এত সহজে তা সম্ভব হবার নয়। চোখ আমার আপনা হতেই পানিতে ভিজে আসে। অবিরাম, নিরন্ত ধারায় বয়ে চলে আমার অশ্রু।
(চলবে..)
আরো পড়ুন-
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১)মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (২) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৩) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৪) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৫) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৬) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৭)মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৮) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৯) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১০) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১১) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১২) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১৩) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১৪) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১৫) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১৬) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১৭) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১৮) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১৯)মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (২০) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (২১) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (২২)মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (২৩)মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (২৪)মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (২৫) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (২৬) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (২৭) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (২৮) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (২৯) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৩০) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৩১)মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৩২) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৩৩) মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৩৪)