× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ঈদ মার্কেটে নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই

এক্সক্লুসিভ

নূরে আলম জিকু
১ মে ২০২১, শনিবার

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁঁকির মধ্যেই খুলে দেয়া হয়েছে রাজধানীর বিপণী বিতান, শপিংমল ও দোকানপাট। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এসব স্থানে জমে উঠেছে কেনাকাটা। ভিড় বাড়ছে ক্রেতার। সরকারের বেঁধে দেয়া বিধিনিষেধ মেনে মার্কেট খোলার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এখনো সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি অনেক মার্কেটে। বিগত সময়ের তুলনায় মাস্ক পরার প্রবণতা বাড়লেও সামাজিক দূরত্ব মানতে উদাসীন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সরকার শর্ত দিয়ে দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দিলেও রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি রয়েছে। সেসব স্থানে যথেষ্ট আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে না।
সুনির্দিষ্ট করে কাউকে দায়িত্ব দিয়ে দোকানপাট খুলে দিলে এমনটি হতো না। এখন যেকোনো সময় যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। শপিং করতে এসে ভাইরাস বহনও করতে পারে। তাই মার্কেট ও শপিংমলে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। এছাড়া ক্রেতাদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। এছাড়া যারা বিধিনিষেধ মানবেন না তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে জেল-জরিমানা করতে হবে।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, কোথাও মানা হচ্ছে না করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি। অনেক মার্কেটের প্রবেশদ্বারে রাখা হয়নি জীবাণুনাশক টানেল। বিপণী বিতানগুলোতে নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার। দোকানিদের মুখে নেই মাস্ক। আবার কেউ কেউ হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার না করেই নাক মুখে হাত দিচ্ছেন। প্রায় প্রতিটি দোকানে ভিড়। চলছে দরকষাকষি। করোনার সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে বড়দের সঙ্গে ভিড় করছেন ছোট শিশুরাও। শিশুদেরকে পোশাক ট্রায়াল দিতেও দেখা গেছে। একই পোশাক ট্রায়াল দিচ্ছেন একাধিক শিশু। এতে যেকোনো সময় করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা।

রাজধানীর নিউ মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। বৈশাখের প্রখর তাপ উপেক্ষা করে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দোকানগুলোতে ভিড় জমেছে। কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নিউ মার্কেটে আসা ক্রেতারা। অনেকেই দলবদ্ধ হয়ে সারছেন কেনাকাটার কাজ। মাস্ক পরা ছাড়াও কেনাকাটা করতে দেখা গেছে অনেককে। ক্রেতারা এক দোকান থেকে যাচ্ছেন অন্য দোকানে। রক্ষা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বও। দোকানিরা বলছেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর মার্কেট খুলছেন তারা। তবে তেমন একটা বিক্রি নেই। ঈদের কেনাকাটা এখনো ভালোভাবে জমে ওঠেনি। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে দোকান খোলা রাখা সম্ভব হবে না। তাই যে যেভাবে পারছেন স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারের বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। মিজান নামের এক বিক্রেতা জানান, এখনো ঈদের বাজার জমে ওঠেনি। তীব্র গরম আর রোজার কারণে ক্রেতা দিনের বেলায় আসতে চায় না। বিকালের পর ক্রেতাদের উপস্থিতি কিছুটা বাড়ে। তবে মার্কেটের অধিকাংশ দোকানি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নারাজ। একই দোকানে একাধিক লোক একসঙ্গে ভিড় করেন। জিনিসপত্র নেড়েচেড়ে দেখেন। আবার একই জিনিস একাধিক লোকের স্পর্শ করতে হয়। এতে করে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে করে আমরা ব্যবসায়ীরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছি। কি করবো একদিকে জীবন, আবার অন্যদিকে জীবিকা। সামনে ঈদ। তাই বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে বেচাবিক্রি করি।

মোহাম্মদপুর থেকে নিউমার্কেটে এসে শপিং করছেন সুলতানা রাজিয়া। তার সঙ্গে ৪ বছরের শিশু শিমুল। সুলতানা বলেন, দীর্ঘদিন মার্কেট বন্ধ থাকায় শপিং করা হয়নি। তাই আজ তীব্র গরমের মধ্যে শপিং করতে আসলাম, ভেবেছি লোকজন কম হবে। এখন দেখছি ক্রেতাদের ভিড়। তবে স্বাস্থ্যবিধি নেই। আমি মানলেও পাশের লোকজন তা মানছেন না। কোনো দোকান খালি নেই। সবখানেই একাধিক লোকের উপস্থিতি রয়েছে। একই পণ্য সবাই খালি হাত দিয়ে ধরে দেখছেন। ক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি না মানলেও দোকানিরা তাদের কাছে বিক্রি করছেন। নো মাস্ক নো সার্ভিসের কোনো বাস্তবায়ন নেই। এভাবে চলতে থাকলে করোনার সংক্রমণ আরো বেশি ছড়াতে পারে। মার্কেট কর্তৃপক্ষও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে উদাসীন।  

এদিকে, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সেও। মার্কেটের প্রবেশদ্বারে স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়ি হলেও ভিতরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনীহা দেখাচ্ছেন ক্রেতা ও বিক্রেতাগণ। নিরাপত্তাকর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি মানতে হ্যান্ডমাইক নিয়ে ঘুরে ঘুরে প্রচার করলেও তা কাজে আসছে না। সরজমিন দেখা যায়, বসুন্ধরা সিটির প্রবেশ মুখে নিরাপত্তাকর্মীরা আগতদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভেতরে প্রবেশ করাচ্ছেন। ভেতরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই মাস্ক খুলে রাখছেন। কেউ কেউ মাস্ক থুতনিতে ঝুলাচ্ছেন। অনেকেই দলবদ্ধ হয়ে ঘোরাঘুরি করছেন। অধিকাংশ দোকানে রয়েছে ক্রেতার সমাগম। একসঙ্গে ভিড় করছেন একাধিক ক্রেতা। কোনো কোনো দোকানির মুখে নেই মাস্ক। দরকষাকষি করছেন ক্রেতাদের সঙ্গে। জান্নাতুল নাঈম রিয়া নামের এক নারী বলেন, বাহিরে তীব্র গরম। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাই ভেতরে ঢুকে একটু বিশ্রাম নিতে মাস্ক খুলে রাখছি। তিনি বলেন, মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক এটা জানি। তবে সবসময় মাস্ক আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না। নামীদামি বিপণী বিতাণগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি ঢিলেঢালাভাবে চলছে। এসব স্থানে আইন কড়াকড়ি হলে আমিও মাস্ক খুলে রাখতাম না। আইনের ঘাটতি আছে বলেই স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানছেন না ক্রেতা ও বিক্রেতারাও।

এদিকে, রাজধানীর মৌচাক মার্কেটেও ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। তবে এখানে মানা হচ্ছেনা কোনো বিধিনিষেধ। যে যেভাবে পারছেন বেচাবিক্রির কাজ সারছেন। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। সরজমিন দেখা যায়, মার্কেটের চারটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। অথচ জীবাণুনাশক টানেল রয়েছে একটি। তবে এটিও ব্যবহার করছেন না শপিং করতে আসা ক্রেতারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন থাকলেও তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীনতা দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, যেভাবেই হোক আমাদের বিক্রি বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি যতটুকু মানা সম্ভব আমরা মেনে চলি।  ক্রেতারা মাস্ক ছাড়া ও দলবদ্ধ হয়ে দোকানে প্রবেশ করেন। এতে করে আমাদের কিছু বলার থাকে না। অন্যথায় ক্রেতা অন্য দোকানে চলে যায়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর