× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘জরুরিভিত্তিতে অক্সিজেন চাই’, হাসপাতালের ভিতরে-বাইরে ভিন্ন যুদ্ধ

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(২ বছর আগে) মে ৩, ২০২১, সোমবার, ৬:০৩ অপরাহ্ন

দিল্লির হাসপাতালগুলো থেকে সেই একই বার্তা- জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন চাই। না হলে বড় ট্রাজেডি ঘটে যাবে। জানিয়ে দেয়া হচ্ছে রোগীরা প্রচণ্ড ঝুঁকিতে। এই সঙ্কটের শুরু হয়েছে দু’সপ্তাহেরও বেশি আগে। এখনও উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই। শনিবারও অক্সিজেনের অভাবে একটি প্রথম সারির হাসপাতালে একজন ডাক্তারসহ কমপক্ষে ১২ জন রোগী মারা গেছেন। রোববার দিবাগত রাতে কর্নাটকের একটি হাপপাতালে অক্সিজেনের অভাবে মাত্র ২ ঘটনায় মারা গেছেন ২৪ জন রোগী। হাসপাতালের বাইরে আরেক যুদ্ধ।
আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বজনরা একটি বেড থেকে শুরু করে বহনযোগ্য অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য যুদ্ধ করছেন। অনেক মানুষ এসবের জন্য টানা ১২ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন। মৃত্যু, দুর্ভোগের এ এক অবর্ণনীয় দৃশ্য। অনলাইন বিবিসি বলেছে, দিল্লিতে কয়েকটি বড় হাসপাতাল চলছে প্রতিদিনের অক্সিজেন সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে। তবে সেই সরবরাহ এমন নয় যে, সেখান থেকে জরুরি প্রয়োজনের জন্য দু’একটা মজুদ রাখা যায়। একজন চিকিৎসক এ পরিস্থিতিকে ভয়ার্ত আখ্যায়িত করে বলেছেন, একবার আপনার মূল ট্যাংকটি যদি ব্যবহার করে ফেলেন, তাহলে আপনার বিপদ সামাল দেয়ার কিছুই থাকে না। ছোট ছোট হাসপাতালে সমস্যা আরো বড়। কারণ, তাদের অক্সিজেন মজুদ রাখার ট্যাংকই নেই। তাদেরকে নির্ভর করতে হবে বড় বড় সিলিন্ডারের ওপর। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই অক্সিজেনের সঙ্কটও বাড়ছে। রাজধানী দিল্লিতে রোববার ২৪ ঘন্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ। মারা গেছেন ৪০৭ জন। ওদিকে করোনা মহামারি শুরুর পর একদিনে গত সাপ্তাহিক ছুটিতে সর্বোচ্চ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। প্রথমবারের মতো ভারতে একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় চার লাখ।

শ্রীরাম সিং হাসপাতাল পরিচালনা করেন ড. গৌতম সিং। তিনি বলেছেন, তার হাসপাতালে আছে ৫০টি কোভিড বেড, ১৬ জন আইসিইউ রোগীর ব্যবস্থা আছে। কিন্তু তারা কোনো রোগীকে ভর্তি নিতে পারছেন না। কারণ, অক্সিজেন সরবরাহের কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিপর্যয় এড়াতে সময়মতো অক্সিজেন চেয়ে তিনি গত কয়েকদিনে এসওএস কল করেছেন। গৌতম সিং বলেন, এই যুদ্ধে প্রতিদিন আমাদেরকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আমার হাসপাতালের অর্ধেক স্টাফ প্রতিদিন সিলিন্ডার নিয়ে রাস্তায় ছোটেন। তারা প্রতিদিন খালি এসব সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে ভরার চেষ্টা করেন। এ জন্য তাদেরকে একস্থান থেকে আরেক স্থানে যেত হয়। তিনি আরো বলেছেন, হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে রোগী মারা যাওয়ার কারণে তিনি ঘুমাতে পারেন না। রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার দিকে মনোনিবেশ করতে হয়। একই রকম কঠিন সময়ের মুখোমুখি অন্য হাসপাতালগুলোর মালিকরাও। দিল্লিতে একটি হাসপাতাল চালায় এমন একটি পরিবারের একজন নারী বলেন, যখন সঙ্কট শুরু হয়েছে, তখন থেকেই কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। কয়েকটি দিন গেছে, যখন কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, কে এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক ব্যক্তি সে সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না। তিনি আরো বলেন, পরিস্থিতি এখন সামান্য ভালর দিকে। কিন্তু এখনও অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। এই সরবরাহের ওপর নির্ভর করছে আরো রোগী ভর্তি করা যাবে কিনা। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি সময় লোকজন এসে আমার কাছে অনুনয় করেন। বলেন, আমি অক্সিজেন সমৃদ্ধ একটি বেডের ব্যবস্থা করতে পারবো কিনা। এতে খুব ভিতু মনে হয় নিজেকে। বলে দিই- না, পারবো না। কারণ, আমি এটা করতে পারিনা।

ছোট ছোট হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সিলিন্ডার বা স্টোরেজ ট্যাঙ্ক না থাকায় তারা প্রতিদিনই এসওএস কল দিচ্ছে। বার বার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলে আসছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে তার শহর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে কোটাভিত্তিতে অক্সিজেন সরবরাহ দিয়ে থাকে। ওদিকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলেন, অক্সিজেনের কোনো সঙ্কট নেই। কিন্তু পরিবহন ব্যবস্থা থেকে চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে। এখানে লক্ষ্য করার মতো বিষয় হলো, শনিবার দিল্লির হাইকোর্ট বলেছে- যথেষ্ট হয়েছে আর নয়। সরকারকে তিরস্কার করে হাইকোর্ট আরো বলেছে, এখন থেকে সবকিছুর ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। কারণ, আপনারা (সরকার) বরাদ্দ করে যাচ্ছেন। আপনাদেরকে এটা পূরণ করতে হবে। আদালত এমন নির্দেশ দিলেও মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকেই। মাঠপর্যায়ে পরিস্থিতি এখনও করুণ। একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক বিতণ্ডার মূল্য দিতে হচ্ছে জনগণকে। কখনো কখনো এই মূল্য দিতে হচ্ছে জীবন দিয়ে। যেসব পরিবার তাদের প্রিয়জনের জন্য বেডের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন, তারপরও তারা রয়েছেন চরম মাত্রার হতাশায়। কারণ, অক্সিজেনের অনিশ্চিত সরবরাহ রয়েছে।

আলতাফ শামসির জন্য ৪৮টি ঘন্টা ছিল মর্মবেদনার। কারণ, তিনি ও পরিবারের বাকি সব সদস্যই গত সপ্তাহে করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছেন। তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে দ্রুততার সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। সেখানে শুক্রবার একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন তিনি। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে কয়েক ঘন্টার মধ্যে তার স্ত্রীর অবস্থা জটিল আকার ধারণ করে। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ভেন্টিলেটরে। সেখানেই তিনি সঙ্কটজনক অবস্থায় আছেন। এরপরই আলতাফের কাছে আরো একটি বেদনার খবর যায়। তাকে বলা হয়, আরেকটি হাসপাতালে মারা গেছেন তার পিতা। অন্যদিকে একই সময়ে হাসপাতালের আইসিইউতে জীবনের সঙ্গে লড়াই করছেন তার স্ত্রী ও কন্যাশিশু। এই হাসপাতালে ফুরিয়ে যাচ্ছিল অক্সিজেন। কোনোমতে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালটি অক্সিজেন সরবরাহ পায়। তা দিয়ে তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি সামাল দেয়া গেলেও পরে কি হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন আলতাফ। তিনি বলেন, কে বলতে পারে এ দিনের পরের দিন কেমন যাবে? তার এই উদ্বেগের মধ্যে আরো উদ্বেগ বাড়ে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়ে দেয়, তাদের অক্সিজেন ও স্টাফ যথেষ্ট পরিমাণে নেই। তাই তার স্ত্রীকে অন্য কোনো হাসপাতালে স্থানান্তর করাতে হবে। এর অর্থ হলো- তার স্ত্রীর অক্সিজেন এবং জ্বর নিজেকেই দেখাশোনা করতে হলো। আলতাফ বলেন, আমি যে যন্ত্রণার ভিতর দিয়ে যাচ্ছি তা কল্পনাও করতে পারবেন না।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর