রাজধানীর লালবাগ থেকে মেয়েকে নিয়ে শাড়ি কিনতে এসেছেন জোসনা বেগম। বয়স ৫৮ বছর। ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেট, নিউমার্কেট, গাউছিয়া ঘুরে কোথাও শাড়ি পছন্দ হচ্ছে না। রোজা রেখে অনেকটা ক্লান্ত হয়েই মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন জোসনা। কথা হয় জোসনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার আগেই পুরান ঢাকার স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বড় মেয়ের বিয়ে হয়। সে ইডেন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। মেয়ের শ্বশুরের বাসার আত্মীয়দের জন্য শাড়ি কিনতে এসেছি।
মেয়ের বিয়ের পর এটাই প্রথম ঈদ। তাছাড়া মেয়ে জামাই বাড়ির লোকদের তো আর যেনতেন শাড়ি উপহার দেয়া যায় না। আজ তেমন কোনো শাড়ি পছন্দ হয়নি। আবার হয়তো আসতে হবে। করোনায় স্বাস্থ্যবিধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে কোনো কিছুর জন্যই জীবন তো আর থেমে থাকে না। জন্ম-মৃত্যু, মহামারি এসব নিয়েই আমাদের জীবন। তবে করোনার এই সময়ে যেখানে আমাদের প্রতিবেশী দেশে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে সেখানে আমরা সচেতন না হলে আমাদেরও পরিস্থিতি যেকোনো সময় খারাপ হতে পারে।
বিথী একটি সরকারি হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক। করোনার কারণে হাসপাতালে তাকে দুই শিফটে ডিউটি করতে হয়। বাসা থেকে বের হন সকালে। এবং বাসায় ফেরেন রাতে। কাজের চাপে শপিং মলে যাওয়ার সুযোগ কোথায়। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই অনলাইন প্ল্যাটফরমে কেনাকাটায় ঝুঁকতে হচ্ছে। তাছাড়া একজন চিকিৎসক হয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি না মানলে রোগী তথা সাধারণ মানুষকে মানাবো কীভাবে। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বিথী। এই চিকিৎসক বলেন, এবার হয়তো গ্রামের বাড়িতে সকলের সঙ্গে ঈদ পালন করার সুযোগ হবে না। তাই এখন থেকে যতটুকু পারছি ঘরে বসে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ থেকে নিজের ও পরিবারের সবার জন্য পছন্দের পোশাক অর্ডার দিচ্ছি। ইতিমধ্যে বাবা-মায়ের ঈদ উপহার কিনে ফেলেছি। এতে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। এছাড়া যেহেতু নিজে রান্না করতে পারছি না, তাই শুধু পোশাক কেনাকাটাই নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, অনলাইন ফুডসহ যাবতীয় জিনিসপত্র ক্রয় করছি। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর হঠাৎ করে চাকরি হারিয়ে বন্ধুদের পরামর্শে একটি অনলাইন গ্রোসারি প্ল্যাটফর্মে পণ্য কেনাবেচা শুরু করেন মো. হাবিব। হাবিব বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে চাকরি করলেও হঠাৎ করে চাকরিটা চলে যায়। যেহেতু পরিবারের ৫ জন সদস্য আমার আয়ের ওপর নির্ভর করে তাই অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই ব্যবসা শুরু করি। প্রথম দিকে খুব একটা সাড়া না পেয়ে হতাশ হই। কিন্তু কয়েক মাসের মাথায় কাছের বন্ধু-বান্ধব থেকে শুরু করে পরিচিতজনরা অনলাইনে পণ্য ক্রয় শুরু করেন। এখন ব্যবসা অনেকটাই দাঁড়িয়ে গেছে। নতুন করে আর কোনো চাকরির কথা ভাবছি না। কারণ, আমার প্রতিষ্ঠানেই এখন প্রায় দুই থেকে তিনজন কর্মচারী কাজ করছে। এদিকে দ্বিতীয় দফা লকডাউনের কারণে ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা থাকায় রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে তাদের কর্মী ও ডেলিভারি কর্মীর সংখ্যা বাড়িয়েছে। একইভাবে খাবারের অ্যাপভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে করোনাকালে খাদ্যরসিকরা প্রচুর অর্ডার দিচ্ছেন। হোটেল-রেস্টুরেন্টে বসে খাবার গ্রহণে বিধিনিষেধ থাকায় অনলাইনে ফুড ডেলিভারির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর অলিগলিতে এখন অহরহ ফুড ডেলিভারিম্যান চোখে পড়ছে।