× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

রাজধর্মে সনিষ্ট মমতা, তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী, খড়দহ থেকে লড়ার প্রস্তুতি

প্রথম পাতা

জয়ন্ত চক্রবর্তী, কলকাতা থেকে
৪ মে ২০২১, মঙ্গলবার

একটা সময় নিদারুণ দারিদ্র্যের মধ্যে কেটেছে তার। বাবা প্রমীলেস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় গত হয়েছেন। অভুক্ত ভাইবোনদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার দায়িত্ব মমতা এবং বড়দা অজিতের।  মা গায়েত্রী দেবী খড়কুটোর চুলা জ্বালিয়ে বসে থাকতেন। অজিত আলুটা,  মূলোটা নিয়ে আসতেন। যোগমায়া দেবী কলেজে মর্নিং ক্লাস করে,  দুধের ডিপোতে কাজ করে দৈনিক পারিশ্রমিকের টাকায় মমতা আনতেন চাল।  তারপর রান্না চাপতো। সেই পাশের বাড়ির মেয়ে তৃতীয়বারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মসনদে  বসছেন। বুধবার শপথ। সোমবার সর্বসম্মতিক্রমে তাকে পরিষদীয় দলের নেতার পদে মনোনীত করেন নবনির্বাচিত  বিধায়করা।
তৃতীয়বার রাজধর্ম পালনে মমতা যে সনিষ্ট তা তিনি বোঝান তার বক্তব্যে।  তিনি বলেন, বিজেপি অনেক অত্যাচার করেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী অনেক অত্যাচার করেছে।  কিন্তু আপনাদের কাছে অনুরোধ-  সংযত থাকুন।  আইন নিজের হাতে নেবেন না। প্রয়োজনে পুলিশে জানান।  মমতা এদিন বক্তব্য রাখেন অত্যন্ত সংযতভাবে। তার মুখে রাজধর্ম কথাটাও শোনা যায়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে বিভিন্ন এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বকে নির্দেশ দেন কর্মীদের সংযত রাখতে। কোভিড যে তার প্রথম অগ্রাধিকার তাও বোঝান মমতা। তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকছে না কোনো আড়ম্বর। প্রথমে বিজেপির ভাইরাস, এরপর করোনাভাইরাস পশ্চিমবঙ্গ থেকে দূর করতে তিনি বদ্ধপরিকর। অন্যদিকে নন্দীগ্রাম নিয়ে আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি। খড়দহে সম্ভবত তিনি উপনির্বাচনে  লড়বেন। কোভিড ফল ঘোষণার আগেই মারা গেছেন মমতার দুষ্টু ছেলে বলে কথিত  কাজল সিনহা। কাজলের জন্য এর থেকে ভালো স্মৃতি-তর্পণ আর কি হতে পারে!   
                             
শরীর বাংলায়, চোখ দিল্লির দিকে:
বাংলায় বিজেপিকে ধূলিসাৎ করার পর তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শরীর যদিও বা বঙ্গে, তবু চোখ নিশ্চিতভাবেই দিল্লির দিকে। রোববার দুপুরে তৃণমূলের জয়ের ইঙ্গিত পেতেই বিজেপি বিরোধী সর্বভারতীয় রাজনৈতিক নেতারা শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানো আরম্ভ করেন মমতাকে। প্রথম বার্তাটি আসে সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ সিং যাদবের কাছ থেকে। তারপর একের পর এক শুভেচ্ছা বার্তা। তার মধ্যে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ’র বার্তাও ছিল বটে, কিন্তু বিরোধী নেতাদের বার্তায় ছিল অন্য সুর। বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বিরোধীদের প্রধান মুখ হতে পারেন তার ইঙ্গিত যেন ছিল এসব বার্তায়।

কেরালায় পিনারাই বিজয়নের ৪৪ বছরের রেকর্ড ভেঙে উপর্যুপরি দ্বিতীয় জয় কিংবা তামিলনাড়ুতে ডিএমকের স্তালিনের জয় বিরোধীদের আরো উদ্বুদ্ধ করে। মোদির বিরুদ্ধে সার্বিক লড়াইয়ে সোনিয়া গান্ধী অথবা রাহুল গান্ধী যে মুখ নয়, তা বুঝেই মোদিবিরোধীরা দিদির পতাকাতলে দাঁড়াতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে কোভিডের এই দ্বিতীয় সার্জে মোদির ব্যর্থতাটা তারা তুলে ধরতে চাইছেন। জয়ের পর মমতার প্রথম ভাষণেই তার ইঙ্গিত আছে। তিনি বলেছেন, কেন্দ্রকে বিনামূল্যে কোভিড ভ্যাকসিন দিতে হবে। ১৪০ কোটি মানুষের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ৩০ হাজার কোটি রুপি ব্যয় করতে সমস্যা থাকার কথা নয়। গান্ধী মূর্তির পাদদেশ থেকে এই নিয়ে আন্দোলনের কথাও বলেছেন মমতা। কেন্দ্রের ভ্যাকসিন নীতি নিয়ে মমতা কোভিডের দ্বিতীয় সার্জ একটু কমলেই সর্বভারতীয় কনক্লেভ বা সমঝোতামূলক সভা ডাকলে বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না। অবধারিতভাবেই মোদির বিকল্প মুখ হয়ে উঠছেন মমতা। শুধু সময় ও সুযোগের অপেক্ষা এখন। অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখ এখন দিল্লির দিকে। তিনি পশ্চিমবঙ্গ জয় করে দেখিয়েছেন, বিজেপি তার কাছে ধর্তব্য নয়। তবে কেন নয় দিল্লিমুখী!

নন্দীগ্রামের রিটার্নিং অফিসারের কাতর এসএমএস দেখালেন মমতা:
বিপুল ভোটে জেতার পর সোমবার দুপুরে  নিজের বাড়িতে একটি সংবাদ সম্মেলন করে চাঞ্চল্যকর  অভিযোগ এনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, নন্দীগ্রামের রিটার্নিং অফিসার তার এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মীকে এসএমএস করে জানিয়েছিলেন, তিনি  রিকাউন্টিংয়ের নির্দেশ দিলে প্রাণে বাঁচতেন না। কিংবা তাকে  সুইসাইড করতে হতো। মমতা এসএমএসটি সাংবাদিকদের পড়েও  শোনানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, নন্দীগ্রাম নিয়ে তারা আদালতে যাচ্ছেন।  তিন ঘণ্টা সার্ভার বন্ধ হয়ে গেল। ৪০ মিনিট বিদ্যুৎ বন্ধ থাকলো। আদালতে আমরা পুনর্গণনার দাবি জানাবো। তবে মমতা স্পষ্ট করে দেন যে, তার প্রথম অগ্রাধিকার এখন কোভিড। কেন্দ্রের কাছে তিন কোটি ভ্যাকসিন চেয়েছেন। এক কোটি প্রাইভেট হাসপাতালে দেবেন। দু’কোটি দেয়া হবে সরকারি হাসপাতালে। মমতা জানান, নতুন বিধায়কদের এবং মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে  অনাড়ম্বর। এদিন পুলিশকে সতর্ক করে মমতা বলেন, কারা আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন আমরা জানি। যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এল ক্লাসিকোকেও হার মানায় নন্দীগ্রাম  নাটক:
রোববার রাত ১১টার সময় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট সারাদিন নানা বিভ্রান্তিকর খবর দিয়ে অবশেষে থিতু হলো। তারা ঘোষণা দিলো,  নন্দীগ্রামে বিজেপি’র প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী জিতেছেন ১৯৫৬ ভোটে। এর আগে সন্ধ্যা সাতটা ৫৪ মিনিটে শুভেন্দু অধিকারী তার অফিসিয়াল টুইটার থেকে টুইট করেন-  নন্দীগ্রামে তিনি জিতেছেন ১৭৩৪ ভোটে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজেন্ট সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ জানান। কারণ বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিট নাগাদ ঘোষণা হয়ে গেছে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১২০০ ভোটে জিতেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সংবাদ সম্মেলনে জানান, নন্দীগ্রামে রিকাউন্টিংয়ের জন্য দল আবেদন জানাবে। প্রয়োজনে তৃণমূল আদালতে যাবে। কারণ নন্দীগ্রামে অনেক কারচুপি হয়েছে। ভুয়া ব্যালট পড়েছে। টেম্পারিং হয়েছে। অবশ্য পাশাপাশি তিনি বলেন, বাংলা বিজেপিকে উৎখাত করার রায় দিয়েছে। একটা নন্দীগ্রাম না হয় জোচ্চুরি করে নেয়াই হলো।

নন্দীগ্রামের রিটার্নিং অফিসার পুনর্গণনার আবেদন নাকচ করার পর ডেরেক ওব্রায়েন, ফিরহাদ হাকিম, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও অতীন ঘোষকে নিয়ে গড়া  তৃণমূলের একটি সিনিয়র টিম রাত ৯টা নাগাদ চিফ ইলেকশন অফিসার আরিজ আফতাবের সঙ্গে দেখা করে রিকাউন্টিং-এর আবেদন জানান। সিইও তাদের জানান, পিপলস রিপ্রেজেন্টেশন অ্যাক্ট  ১৯৫১ অনুযায়ী, আদালতে গিয়ে শুধুমাত্র রিকাউন্টিংয়ের আদেশ আনা যেতে পারে। রাতেই তৃণমূল কংগ্রেস আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নন্দীগ্রামের ফলাফল নিয়ে দিনভর ছিল নাটক আর উত্তেজনা, যা এল ক্লাসিকোকেও হার মানায়। সারাদিনই শুভেন্দু এগিয়ে থাকলেও ১৬ রাউন্ড শেষে মমতা এগিয়ে যান তিন হাজার ১১০ ভোটে। ১৭ নম্বর রাউন্ডটি ছিল এক নম্বর ব্লকের সোনাচূড়ার। এই সোনাচূড়ার ভোট নিয়েই এল ক্লাসিকো জমে গেল।

কাঁকুড়গাছিতে খুন বিজেপি কর্মী:
পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ফল প্রকাশের পরই তীব্র অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে। কলকাতার কাঁকুড়গাছিতে খুন হয়েছেন বিজেপি কর্মী ৩০ বছরের অভিজিৎ সরকার। ভাঙ্গুরে দুই তৃণমূল কর্মী প্রহৃত হয়ে হাসপাতালে। কদম্বগাছিতে এক আইএসএফ কর্মী প্রহারে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে। সল্টলেকের সুকান্তনগরে এক বিজেপি সমর্থকের বাড়ি আক্রান্ত হয়েছে। পাথরঘাটায় বিজেপি পার্টি অফিসে ভাঙচুর হয়েছে। আরামবাগে বিজেপি পার্টি অফিসে আগুন লাগানো হয়েছে। কান্দিতে বিজেপি নেত্রীর বাড়িতে বোমা ফেলা হয়েছে।

এর মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য কাঁকুড়গাছির ঘটনাটি। বিজেপি ট্রেড ইউনিয়ন নেতা অভিজিৎ সরকার ফেসবুক লাইভে অভিযোগ করেন- তৃণমূলের লোকেরা এলাকায় ভাঙচুর চালাচ্ছে, তার পোষা কুকুরটিকেও মেরে ফেলা হয়েছে। এরপরই একদল লোক অভিজিতের বাড়ি চড়াও হয়ে তার গলায় সিসিটিভির তার জড়িয়ে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে বলে অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ সরকার অভিযোগ জানান। ভাঙ্গুরে আইএসএফ-তৃণমূল সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয় এলাকা। দুই তৃণমূল সদস্যকে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মেট্রো সেন্ট্রাল স্টেশন সংলগ্ন এক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে ঢুকে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। এই সব ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দলীয় কর্মীদের সংযত থাকতে বলেছেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর