× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ট্রায়ালেই যেতে পারছে না ‘বঙ্গভ্যাক্স’

প্রথম পাতা

সিরাজুস সালেকিন
৫ মে ২০২১, বুধবার

সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও করোনাভাইরাসের টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্সের’ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যেতে পারছে না গ্লোব বায়োটেক। বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) থেকে নীতিগত অনুমোদন না পাওয়ায় ট্রায়াল শুরু করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। গত জানুয়ারিতে বঙ্গভ্যাক্সের ট্রায়াল শুরুর জন্য বিএমআরসি’র ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স চেয়ে আবেদন করে গ্লোব বায়োটেক। চার মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত বিএমআরসি’র ইথিক্যাল কমিটি কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। ফলে বঙ্গভ্যাক্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। কোভিড-১৯ নির্মূলে দেশব্যাপী ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হয় গত ফেব্রুয়ারিতে। এ কার্যক্রমে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সরবরাহকৃত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনিকার ভ্যাকসিন ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু ভারতে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় ভ্যাকসিনের চালান আসা বন্ধ হয়ে যায়।
আগামী জুলাইয়ের আগে সেরাম থেকে ভ্যাকসিন পাওয়া অনিশ্চিত। ফলে বিকল্প উৎস থেকে ভ্যাকসিন আনার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সরকার। এজন্য চীন ও রাশিয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বৃত্ত ভ্যাকসিন সংগ্রহের চেষ্টাও চলছে। এ প্রেক্ষাপটে নতুন করে আবার আলোচনায় এসেছে দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের উদ্ভাবন করা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বঙ্গভ্যাক্স। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সকল প্রস্তুতি থাকলেও বিএমআরসি’র ইথিক্যাল কমিটির ছাড়পত্র না পাওয়ায় ট্রায়াল শুরু করা যাচ্ছে না। সিআর?ও লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি গ্লোব বায়োটেকের হয়ে টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কাজটি করবে। এই ট্রায়াল হবে একটি সরকারি হাসপাতালের একটি ইউনিটে। গ্লোব বায়োটেকের হয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনাকারী দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, ইথিক্যাল কমিটি আমাদের আবেদনটি গ্রহণ করেছে। পরবর্তীতে তারা প্রায় ১০০টি বিষয়ে প্রশ্ন করেছিল সেগুলোর সন্তোষজনক উত্তর আমরা লিখিতভাবে দিয়েছি। কিন্তু তারা পরবর্তীতে আর কিছু জানায়নি। গ্লোব বায়োটেকের হেড অব কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন গতকাল মানবজমিনকে বলেন, বিএমআরসিতে আবেদন জমার চার মাস পার হলেও আমরা কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। এরমধ্যে তাদের কিছু প্রশ্ন ছিল যেগুলোর জবাব আমরা দিয়েছি। তিনি বলেন, ইথিক্যাল কমিটির কাছে মূলত ফেজ-১ ও ফেজ-২ এর ট্রায়ালের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। তারা ছাড়পত্র না দেয়ায় ট্রায়াল শুরু করা যাচ্ছে না। বিএমআরসি ছাড়পত্র না দিলেও গ্লোব বায়োটেককে ট্রায়ালের জন্য ভ্যাকসিন উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গত বছরের ২৮শে ডিসেম্বর এ অনুমোদন দেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে ড. মহিউদ্দিন বলেন, আমাদের যদি ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা না থাকতো তাহলে ওষুধ প্রশাসন এ ছাড়পত্র দেয়ার কথা না। তারপরও আমাদের যদি কোনো ঘাটতি থেকে থাকে সেটা বিএমআরসি আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে জানাতে পারে। কিন্তু আমাদের এ সম্পর্কে কিছুই অবগত করা হচ্ছে না। বিএমআরসি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

গ্লোব বায়োটেকের দেয়া তথ্য অনুসারে, বিশ্বব্যাপী চলমান করোনাভাইরাসের প্রকোপে সারা বিশ্বের মানুষ যখন বিপর্যস্ত ওই সময় কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট, ভ্যাকসিন এবং ওষুধ আবিষ্কার সংক্রান্ত গবেষণা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২রা জুলাই কোভিড-১৯ এর টিকা উদ্ভাবনের ঘোষণা দেয় গ্লোব বায়োটেক। ভ্যাকসিনটির অ্যানিম্যাল ট্রায়ালে এক ডোজেই কার্যকর অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও অনুরূপ ফলাফল পাওয়া যাবে মনে করছেন গবেষকরা। ভ্যাকসিনটি ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১ মাস এবং -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। এটি সিন্থেটিক্যালি তৈরি হওয়ায় তা ভাইরাস মুক্ত এবং শতভাগ হালাল। গ্লোব বায়োটেকের আবিষ্কৃত এমআরএনএ ভ্যাকসিনকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। গবেষণাগারে করোনাভাইরাসের সম্পূর্ণ জিনোম সিকুয়েন্স করে প্রতিষ্ঠানটির গবেষকরা। এনসিবিআই ভাইরাস ডেটাবেস-এ প্রাপ্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোভিড-১৯ এর সকল সিকুয়েন্স বায়োইনফরমেটিক্স টুলস-এর মাধ্যমে বিশদ পর্যালোচনা করে তারা ভ্যাকসিনটির লক্ষ্য নির্ধারণ করে। ফলে বাংলাদেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বে ভ্যাকসিনটি অধিক কার্যকরী হবে বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির গবেষকরা। ভ্যাকসিনের টার্গেটের সম্পূর্ণ কোডিং সিকুয়েন্স এনসিবিআই ডেটাবেসে জমা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটি আরো দাবি করেছে, অত্যাধুনিক এনিম্যাল সেন্টারে বঙ্গভ্যাক্সের পূর্ণাঙ্গ প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। যার ফলাফল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বায়ো-আর্কাইভে প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধটি ইতিমধ্যে ৮৫০০ জন বিজ্ঞানী পর্যালোচনা করে খুবই কার্যকরী ভ্যাক্সিন ক্যান্ডিডেট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। নিবন্ধটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাবলিশার্স এলসেভিইয়ারের ভ্যাক্সিন জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু অনুমোদন পেতে দেশের বিদ্যমান আইনি কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারছে না গ্লোব বায়োটেক। শুরুতে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর,বি’র সঙ্গে কাজ শুরু করে তারা। কিন্তু আইসিডিডিআর,বি’র প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়ালের সুবিধা না থাকায় ক্লিনিক্যাল রিসার্স অর্গানাইজেশন (সিআরও) লিমিটেড নামে নতুন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ট্রায়াল সম্পন্নের চুক্তি করে গ্লোব। গত ১৭ই জানুয়ারি সিআরও’র মাধ্যমে বঙ্গভ্যাক্সের ফেজ-১ ও ফেজ-২ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রটোকল ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্সের জন্য বিএমআরসি’তে জমা করা হয়। ইথিক্যাল কমিটি প্রটোকল পর্যালোচনা করে প্রায় শতাধিক বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়ে বিএমআরসি ৯ই ফেব্রুয়ারি একটি চিঠি দেয়। সকল প্রশ্নের যথাযথ উত্তরসহ সংশোধিত প্রটোকল ও প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পুনরায় বিএমআরসিতে জমা দেয় গ্লোব বায়োটেক দেয়। পরবর্তীতে বিএমআরসি থেকে কোনো অগ্রগতি জানা যায়নি বলে গণমাধ্যমকে জানায় গ্লোব বায়োটেক কর্তৃপক্ষ। গ্লোব বায়োটেকের পরিচালক আহমেদ হোসেন বলেন, মডার্নার এমআরএনএ কোভিড ভ্যাকসিনের ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স পেতে মাত্র ৪ দিন সময় লেগেছে। আর আমরা ৪ মাসেও ক্লিয়ারেন্স পাচ্ছি না। আজ আমেরিকা তাদের এমআরএন ভ্যাকসিন দিয়ে করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। আমরা যদি সময়মতো গ্লোব বায়োটেকের এমআরএন ভ্যাকসিন বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে আশানুরূপ ফলাফলের ভিত্তিতে টিকা কার্যক্রম শুরু করতে পারতাম, তাহলে হয়তো আমাদের দেশেও করোনার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হতো। টিকা ট্রায়ালে সফল হলে উৎপাদন প্রক্রিয়া কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তখন সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। সরকার অনুমতি দিলে ভ্যাকসিন রপ্তানির সক্ষমতাও গ্লোবের রয়েছে বলে এই পরিচালক দাবি করেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর