ইয়েমেনি সাংবাদিকদের কঠিন ও বাস্তব ট্রাজেডির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। দেশটিতে মত প্রকাশের স্বাধীনতার যে অভাব রয়েছে, তা দেশটিকে সাংবাদিকদের জন্য অনিরাপদ করে তুলেছে। গালফ সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের এক রিপোর্টে এমনটাই জানানো হয়েছে। সম্প্রতি সংস্থাটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে ওই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, গত ৬ বছর ধরে যুদ্ধ চলছে ইয়েমেনে। দেশটিতে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর একের পর এক আঘাত এসেই চলেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীণতাও প্রতিনিয়ত কমছে। সামাজিকভাবে বাঁধার মুখে পড়তে হচ্ছে দেশটির সাংবাদিকদের।
কেউ যখন নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে, তখন কেউ না কেউ তার দিকে তেড়ে আসছে। দেশটির বর্তমান অবস্থার জন্য তাকে দায়ি করা হচ্ছে। এমনকি কেউ যদি ক্রিড়া সাংবাদিকও হয়ে থাকেন, তাহলেও তাকে নানাভাবে হেনস্থা করা হয়। সব মিলিয়ে ইয়েমেনে সাংবাদিকরা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন। সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও সাংবাদিকদের টার্গেট করে হেনস্থা করে।
দেশটিতে হুথিদের নেতৃত্বে বিদ্রোহ মাথাচারা দিয়ে ওঠার পর এ অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হুথি সাংবাদিকদের বাধ্য করে প্রোপ্যাগান্ডা ছড়াতে। তবে সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকা স্থানগুলোর অবস্থাও ভাল কিছু নয়। সরকারি কর্মকর্তারাও প্রায়ই সাংবাদিকদের সঙ্গে সহিংস আচরণ করেন। সব মিলিয়ে, ইয়েমেনে সবাইইক সাংবাদিকদের শত্রু হয়ে উঠেছে। দেশটির বিভিন্ন শক্তি সাংবাদিকদের ক্ষমতা স¤পর্কে জানে। তাই তারা তাদেরকে ভয় পাচ্ছে। নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে তারা সাংবাদিকদের টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে, মৃত্যুদ- দিচ্ছে।
এছাড়া সাংবাদিকরা অর্থনৈতিক সমস্যায়ও রয়েছেন। একজন কর্মী হিসেবে সাধারণ সুযোগটুকু তারা পাচ্ছেন না। অনেক প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকরা ঠিক মতো বেতন পাচ্ছেন না। এমনকি সরকারি গণমাধ্যমে কাজ করা সাংবাদিকদেরও একই অবস্থা। ফলে সাংবাদিকরা বাধ্য হচ্ছেন অন্য পেশায় চলে যেতে।
সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবথেকে ঝুকিপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর একটি ইয়েমেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতায়ও শেষের দিকে রয়েছে দেশটি। ২০২১ সালের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইন্ডেক্স অনুযায়ী, বিশ্বের ১৮০ দেশের মধ্যে ১৬৯তম স্থানে রয়েছে ইয়েমেন। গত এক বছরে মিডিয়া ফ্রিডম সেন্টার গণমাধ্যমের ওপর আঘাতের ১৪৩টি ঘটনা রেকর্ড করেছে। এসব ঘটনায় হুথি এবং সরকার উভয়ই জড়িত। ২০২০ সালে ৩ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া নারী সাংবাদিকরা রয়েছেন আরো ঝুঁকিতে। তাদেরকে নানা বৈষম্যের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। তারা বেতন কম পান এবং নেতৃত্বস্থানীয় পদে তাদেরকে সুযোগও কম দেয়া হয়। তাদের জন্য আলাদা কোটা ব্যবস্থার দাবি করেছে গালফ সেন্টার্স ফর হিউম্যান রাইটস।