× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

করোনায় কর্মসংস্থান হারিয়েছেন ৬২ ভাগ মানুষ

প্রথম পাতা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৬ মে ২০২১, বৃহস্পতিবার

করোনাভাইরাসের প্রভাবে গত এক বছরে বিভিন্ন সময়ে ৬২ শতাংশ মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। যার বড় অংশ ২০২০ সালের এপ্রিল ও মে মাসে কর্মহীন হয়েছেন। পরে অনেকেই কাজে ফিরলেও আগের মতো চাকরি আর ফিরে পাননি। তাদের আয় কমেছে। পাশাপাশি করোনার প্রভাবে ৭৮ শতাংশ মানুষ তাদের ব্যয় কমিয়ে দিয়েছেন। অনেকের ঋণের বোঝা বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর।
গতকাল ‘কোভিডকালে আয় ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি: কীভাবে মানুষগুলো টিকে আছে’ শিরোনামের খানা জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও অক্সফাম বাংলাদেশ যৌথভাবে জরিপটি পরিচালনা করে। অনলাইন সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী। সংলাপটি পরিচালনা করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিক ইসলাম খান জরিপের ফলাফলের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আর্থিক সহায়তায় ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। জরিপের ফলাফলের ওপর গতকাল অনলাইনে সংলাপের আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ১৬টি জেলা এবং শহর ও গ্রাম মিলিয়ে বাছাইকরা ২৬০০ পরিবারের তথ্য নিয়ে জরিপ পরিচালিত হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে জরিপ কাজ শেষ হয়।
জরিপের পরিসংখ্যান তুলে ধরে সিপিডির তৌফিক ইসলাম বলেন, ৬২ শতাংশ মানুষ করোনা শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। যার বড় অংশ ২০২০ সালের এপ্রিল ও মে মাসে কর্মহীন হয়েছেন। পরে অনেকেই কাজে ফিরলেও আগের মতো চাকরি আর ফিরে পাননি। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা যখন জরিপ করি তখন প্রায় সবাই চাকরি ফেরত পেয়েছেন। সে হিসাবে মোট কর্মসংস্থানের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। নতুন কর্মসংস্থানের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি, এ কর্মসংস্থানটা এসেছে মূলত কৃষিখাত থেকে। কৃষিখাতে কর্মসংস্থার প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। সেই তুলনায় আমাদের সেবা খাত যেটা কর্মসংস্থানের সব থেকে বড় জায়গা, সেখানে আমরা দেখছি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্রায় দেড় শতাংশের মতো কমে গেছে। শিল্পখাতে কর্মসংস্থানের প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে।
রিসার্চ ফেলো তৌফিক বলেন, আমরা দেখেছি এই যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলো তার প্রায় ৯০ শতাংশ হয় স্বনিয়োজিত খাতে গেছে অথবা তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করছেন। অথবা দৈনিক শ্রমিকের কাজ করছেন। ফলে যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, তা মূলত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে হয়েছে।
জরিপে সিপিডি জানায়, কর্মসংস্থান হলেও আয় কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আয় কমেছে কৃষি খাতে। এই খাতে ১৬.৫০ শতাংশ আয় কমেছে, এরপরই উৎপাদন খাতে কমেছে ১২.৭৫ শতাংশ। পরিবহন ও নির্মাণসহ সব খাত মিলিয়ে ১১.৯২ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে।
অপরদিকে করোনার প্রভাবে ৭৮ শতাংশ মানুষ তাদের ব্যয় কমিয়ে দিয়েছেন, ৫২ শতাংশ খরচ কমাতে গিয়ে খাদ্যাভ্যাস কিছুটা পরিবর্তন করেছেন। জরিপে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি মানুষের ঋণের বোঝা বেড়েছে। প্রায় অর্ধেক পরিবার জানিয়েছে, তারা সঞ্চয় কমিয়ে দিয়েছেন। প্রায় অর্ধেক পরিবার জানিয়েছে ঋণ বেড়েছে। প্রায় ৫ শতাংশ জানিয়েছে, সম্পদ বিক্রি করে দিতে হয়েছে।
জরিপে উঠে এসেছে, নতুন যে কর্মসংস্থান হয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশ যুবক, যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। নতুন কর্মসংস্থানের প্রায় ৬৫ শতাংশ এই বয়সীদের। ৩০-৬৪ বছরের বয়সীদেরও বড় অংশ নতুন কর্মসংস্থানে যুক্ত হয়েছে, এ ক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ৩২ শতাংশের ওপরে। এদের বড় অংশ নারী। এই নারীদের অনেকে কৃষিখাতেও যুক্ত হয়েছেন।
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা তপন চৌধুরী বলেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা না গেলেও এটা নিশ্চিত যে প্রথম ঢেউয়ের ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠা গেছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান প্রশ্ন তোলেন, সরকার কি এ ধরনের জরিপের ফলাফল শুনছে? নাকি নিজেদের মতো করেই বা নিজেরা যা ভাবছে, সেভাবেই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে?
সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, কোভিডের কারণে মানুষ খাওয়া কমিয়েছে। নব্য গরিব হয়েছেন অনেকে। বৈষম্য বাড়ছে। কোভিডের অভিঘাত সবচেয়ে বেশি পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর। অথচ আমরা প্রবৃদ্ধি-আসক্তিতে ভুগছি। তথ্য-উপাত্তই যেখানে নেই, সেখানে প্রবৃদ্ধি খুঁজতে যাওয়া মানে অন্ধকারে কালো বিড়াল খোঁজা।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) শ্রম খাতবিষয়ক সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা রিজওয়ানুল ইসলাম বলেন, আমরা অতিমাত্রায় প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছি। সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম হয়েছি কিনা। অথচ প্রবৃদ্ধির ফল মুষ্টিমেয় লোক ভোগ করছে। রিজওয়ানুল ইসলামের প্রশ্ন, প্রবৃদ্ধি অবশ্যই চাই- কিন্তু এই প্রবৃদ্ধি কি অন্তর্ভুক্তিমূলক? এ দিয়ে বেকারত্বের হার কতটা কমাতে পেরেছি? দারিদ্র্যের হার কতটা নামিয়ে আনতে পেরেছি? বৈষম্য কমাতে কি করেছি?
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর