× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

খালেদার বিদেশযাত্রা /২০ ঘণ্টা নানা তৎপরতা, অপেক্ষা

প্রথম পাতা

শাহনেওয়াজ বাবলু
৭ মে ২০২১, শুক্রবার

গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবেদন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমণ্ডির বাসায় যান শামীম এস্কান্দার। এরপর থেকেই শুরু হয় নানামুখী তৎপরতা। আবেদন করার ২০ ঘণ্টা পর গতকাল বিকাল সাড়ে চারটায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক খোলাসা করেন যে এদিন আর কোনো অগ্রগতি হবে না। তিনি জানান, আইন মন্ত্রণালয় দ্রুতই মতামত দেবে। সন্ধ্যায় তিনি মানবজমিনকে বলেন, রোববারের আগেই মতামত দেয়া হবে।  হয়তো সরকারিভাবে রোববারের আগে তা কার্যকর হবে না।

ওদিকে বুধবার রাতেই গুঞ্জন উঠে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়া হচ্ছে। তবে কখন নেয়া হবে তা নিয়ে স্পষ্ট কেউ কিছু বলতে পারছেন না।

সূত্র বলছে, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আরো দুইদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার আবেদনের বিষয়ে সরকার ইতিবাচক।

বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পরিবারের একাধিক সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ার বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে বেশ কয়েকদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। কিছুটা সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের করোনা পরবর্তী কিছু জটিলতা রয়েছে। তবে বুধবার দুপুর পর্যন্ত সবকিছুই ঠিক ছিল। কিন্তু বেলা তিনটার দিকে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এ সময় তিনি কিছুটা বুকে ব্যথাও অনুভব করেন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি গত কয়েক দিনে নেই বললেই চলে। এর মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা হওয়ায় শারীরিক পরিস্থিতি খানিকটা অবনতি হয়। সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করেই মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার সুপারিশ করে।
এদিকে করোনামুক্ত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার সকালে তার করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে। খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের এক চিকিৎসক বলেন, ম্যাডামের করোনা টেস্টের ফল নেগেটিভ এসেছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। শ্বাসকষ্ট রয়েছে। ডায়াবেটিকসের মাত্রা ওঠানামা করছে।

জানা যায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দেয়া লিখিত আবেদনে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানানো হয়েছে চিঠিতে। কোন্‌ দেশে খালেদা জিয়াকে তার পরিবার নিতে চায়, সে সম্পর্কে চিঠিতে কিছু লেখা নেই বলে জানা গেছে।

খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার বিষয়ে বিএনপি’র তিনজন স্থায়ী কমিটির সদস্যের সঙ্গে কথা হয় মানবজমিনের। তারা জানান, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নেয়া হবে। সেখানে তার ছেলে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা রয়েছেন। সরকার অনুমতি দিলেই পরবর্তী প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। বিশ্ব পরিস্থিতিতে এই মুহূর্তে লন্ডনের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। চিকিৎসার জন্য সেখানে খালেদা জিয়াকে নিতে হলে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। এ ছাড়া, তার ভ্রমণসংক্রান্ত কিছু প্রক্রিয়া এখনো বাকি। ফলে সরকারিভাবে অনুমতি পাওয়ার পরই এ কাজগুলো সম্পন্ন হবে। লন্ডনে যেতে হলে ওই দেশের সব রকম প্রসিডিউর মেনটেইন করে যেতে হবে। ফলে সরকার অনুমতি দিলেও সেটা কিছুটা সময়সাপেক্ষ হবে বলে জানান তারা।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু মানবজমিনকে বলেন, সরকার এখনো অনুমতি দেয়নি। সরকারের সিগন্যাল পাওয়ার পর আমাদের যা যা করণীয় তা করতে পারবো। হাইকমিশনে যাওয়া, যে দেশে যাবেন, সে দেশে যোগাযোগ করা ইত্যাদি কার্যক্রম আমরা শুরু করতে পারবো। তবে আগে সরকারের অনুমতি লাগবে। এটার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।

খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্টে যা আছে: বিশ্বস্ত সূত্র থেকে মানবজমিনের হাতে আসা খালেদা জিয়ার কিছু মেডিকেল রিপোর্টের তথ্যে দেখা যায়, High Sensitive Troponin-১ রিপোর্ট ভালো আসেনি। এ ক্ষেত্রে একজন নারীর স্বাভাবিক রেফারেন্স মাত্রা ধরা হয় ১৫.৬-এর কম। বেগম খালেদা জিয়ার সেই মাত্রা ২১.২। এই রিপোর্টের মাধ্যমে তার হার্টের অবস্থা নির্ণয় করা হয়।

রক্ত জমাট বাঁধছে কিনা জানতে D-Dimer পরীক্ষা করা হয়। এর স্বাভাবিক রেফারেন্স মাত্রা ৫০০-এর নিচে। বেগম জিয়ার তা ২১৩৪.৩। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে তা রক্ত জমাট বাঁধার ইঙ্গিত দেয়। তার হিমোগ্লোবিন মাত্র ৭.৭। স্বাভাবিক অবস্থায় তা ১১.৫-১৬.৫-এর মধ্যে থাকার কথা।

NT- pro BNP পরীক্ষাও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। স্বাভাবিকভাবে ১২৫-এর কম থাকতে হয়। বেগম খালেদা জিয়ার রক্ত পরীক্ষায় তা ২২৩৮ এসেছে। এই পরীক্ষার রিপোর্ট তার হার্ট ও ফুসফুসের অস্বাভাবিক অবস্থা বোঝাচ্ছে।

এ ছাড়া CA ১২৫ পরীক্ষার উচ্চমাত্রা একটি জটিল রোগের ঝুঁকি নির্ণয় করে। ওই পরীক্ষার স্বাভাবিক মাত্রা ১২৫-এর নিচে হলেও বেগম জিয়ার তা ৯৬২। এ দ্বারা শুধু ওই জটিল রোগের ঝুঁকির মাত্রা বোঝায়।
করোনা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এ সমস্যাগুলো যেকোনো সময় তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। তাছাড়া তার ডায়াবেটিক বেশ উঠানামা করছে। এ পর্যন্ত দুইবার ফুসফুস থেকে অতিরিক্ত পানি অপসারণ করা হয়েছে।

যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে পরিবারের আবেদন প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ সুযোগ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ডাক্তাররা অভিমত দিয়েছেন তাকে বিদেশে নেয়া প্রয়োজন। যদিও আমরা ডাক্তারদের কাছ থেকে শুনি নাই। প্রধানমন্ত্রী এসব ব্যাপারে অত্যন্ত উদার। আমরা পজিটিভলি এই ব্যাপারটি দেখবো।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের সাক্ষাৎ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে অনেকগুলো আইনি বিষয় জড়িত। কোর্টের কোনো নির্দেশ লাগবে কিনা? সেটাও দেখতে হবে। সেজন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। প্রসেস শুরু হয়েছে। তাদের মতামত এলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা অবশ্যই পজিটিভলি দেখছি। পজিটিভলি দেখছি বলেই তার দণ্ড আদেশ স্থগিত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

যা বললেন আইনমন্ত্রী: খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার বিষয়ে বৃহস্পতিবার কয়েক দফায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে তিনি মানবজমিনকে বলেন, খালেদা জিয়ার বিষয়ে রোববারের মধ্যে হয়তো অভিমত দিবো। তবে রোববারের আগে হয়তো সিদ্ধান্তটা কার্যকর হবে না।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকালে সাংবাদিকদের আনিসুল হক বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার আবেদনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের অভিমত যথা শিগগিরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর