জয়নাল শেখ। বয়স চল্লিশের ওপরে। বাড়ি বরিশালে। ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। সপ্তাহখানেক ধরে কাজ বন্ধ। উপার্জনের টাকায় এ কয়দিন বসে খেতে হয়েছে তাকে। পাননি কোনো সহায়তা। ফুরিয়ে আসছিল কষ্টার্জিত টাকা।
মিরপুর থেকে কয়েক দফা গাড়ি পাল্টিয়ে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত আসতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৫০০ টাকার মত।
সরকারি নির্দেশনার কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে রাগে বলে উঠলেন, ‘কাম নাই, খাওন নাই, ঢাহায় কি আঙ্গুল চুষমু’। এখন তিনি পড়েছেন আরেক বিপদে, মাওয়া ঘাটে আসার পরে দেখছেন শেষ সম্বল ফেরিটাও বন্ধ করে রেখেছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। এখন বাড়ি ফিরবেন কি করে সেই হতাশায় নদীর ধারে বসে বড় বড় চোখে করে দেখছেন কিছু পাওয়া যায় কিনা।
শুধু জয়নাল নয়, তার মতো হাজারো যাত্রী মাওয়া ঘাটে ফেরিতে পার হতে না পেরে বিড়ম্বনা আর ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এদিকে সকাল ৯টার দিকে বাংলাবাজার ঘাট থেকে একটি ফেরি বেশ কয়েকটি এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে মাওয়া ঘাটে এসে পৌঁছায়। ঘাটে ভিড়তে না ভিড়তেই হাজার হাজার জনতা ওই ফেরিতে উঠতে শুরু করে। পরে বাধ্য হয়ে ঘাট কর্তৃপক্ষ ফেরিটি বাংলাবাজার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়। এছাড়া পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। দেখা গেছে অনেকেই আবার নোঙ্গর করা ফেরিতে উঠে বসে আছে, কখন ছাড়বে সেই অপেক্ষায়।
বিআইডব্লিউটিসি ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে সাধারণত ১৬টি যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে পারপার হয়।চলমান করোনাভাইরাসের লকডাউনে চলায় ১৪ই এপ্রিল থেকে সীমিত করা হয় ফেরি চলাচল। লকডাউনের শুরুতে দিনের বেলায় ২ থেকে ৩টি ফেরি ছাড়া হলেও শুক্রবার থেকে যাত্রী ও জরুরি প্রয়োজনে আসা যানবাহনের চাপ বেশি থাকা প্রায় সব কয়টি ফেরি চলাচল করে এ নৌপথে। এসব ফেরিতে জরুরি প্রয়োজনে আসা যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী ট্রাক, কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপারের কথা থাকলেও সাধারণ যাত্রীরাই বেশি পারাপার হতে দেখা যায়। এ কারণে বিআইডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে শনিবার সকাল থেকে দিনের বেলায় ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছে।তবে রাতে জরুরী পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে চলবে ফেরি।
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাত ৩টা থেকে আমরা আর কোন ফেরি ছাড়বো না। কাল থেকে বন্ধ থাকবে ফেরি চলাচল। আপতত এর থেকে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আজ সকালে কয়েকটি এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে মাওয়া ঘাটে পৌঁছালে উৎসুক ঘরমুখো জনতা ঐ ফেরিটিতে উঠতে শুরু করে। পরে বাধ্য হয়ে শিমুলিয়াঘাট থেকে বাংলাবাজার ঘাটে আসতে হয়। তবে এখন বন্ধ রয়েছে।