হেলিকপ্টারের প্রতি সব সময়ই অনীহা ছিল অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের। কিন্তু ২০১৮ সালের গ্রীষ্মে আকস্মিকভাবে সেই হেলিকপ্টারের প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেল তার। নিজের মহাকাশ বিনোদন বিষয়ক ব্লু ওরিজনে টেস্ট ফ্লাইট ধারণের জন্য ব্লাক ওপস-এর হেলিকপ্টার ভাড়া করেন তিনি। এতে অ্যামাজন নির্বাহীদের মনে সন্দেহ ঘনীভূত হতে থাকে। এ ঘটনা থেকেই আস্তে আস্তে তথ্য বেরুতে থাকে যে, ব্লাক ওপস এভিয়েশনের মালিক ও হেলিকপ্টার পাইলট লরাঁ সানচেজের সঙ্গে গোপন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন তাদের বস জেফ বেজোস। এ খবর দিয়েছে অনলাইন নিউ ইয়র্ক পোস্ট। এতে বলা হয়, এক পর্যায়ে কোম্পানির নির্বাহীরা দেখতে পান ওই ব্লাক ওপসের নামে বাজেটে বিল রাখা হয়েছে। ব্লু অরিজিনে গোপনে টেস্ট ফ্লাইটের ছবি ধারণ করতে জেফ বেজোস ভাড়া করেছিলেন ব্লাক ওপস-এর হেলিকপ্টার।
এতে কোম্পানির নির্বাহীরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। ‘অ্যামাজন আনবাউন্ড: জেফ বেজোস অ্যান্ড দ্য ইনোভেশন অব এ গ্লোবাল এম্পায়ার’ বইয়ে এসব কথা লিখেছেন ব্রাড স্টোন। বইটি মঙ্গলবার বাজারে এসেছে। তিনি লিখেছেন, জেফ বেজোস হেলিপ্টার চোখ পেতে দেখতে পারতেন না। সবাই তা জানতেন। কিন্তু তিনি সেই হেলিকপ্টারেই আসক্ত হয়ে ওঠেন। এটা এক অপ্রতিরোধ্য বিষয় ছিল। ২০১৩ সালে ‘দ্য এভরিথিং স্টোর: জেফ বেজোস অ্যান্ড দ্য এইজ অব অ্যামাজন’ বইটি লেখেন ব্রাড স্টোন। তার এই বইটি বেস্ট সেলার হয়। এরপর থেকে তাকে অ্যামাজন এক্সিকিউটিভদের ফলো করতে অনুমতি দেয়া হয়।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে টেক্সাসে বিশাল এক অঞ্চলে অবস্থিত ব্লু অরিজিনে ‘নিউ শেপার্ড’ রকেটে করে নবম মাসে টেস্ট ফাইটে ছিলেন জেফ বেজোস। এ সময় লস অ্যানজেলেসের ফক্স নিউজের সাবেক উপস্থাপিকা লরাঁ সানচেজ তার সঙ্গে ছিলেন। ওই সময়ে সানচেজও জেফ বেজোসের মতো ছিলেন বিবাহিতা। তার স্বামী ছিলেন এন্ডেভার ট্যালেন্ট এজেন্সির চেয়ার প্যাট্রিক হোয়াইটসেল। ২০১৬ সালে তিনি নিজের স্ত্রী লরাঁকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন জেফ বেজোসের সঙ্গে। কিন্তু লরাঁ-বেজোস প্রেম কাহিনী কবে, কখন থেকে আসলে শুরু সে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যায়নি।
এ ঘটনার বেশ কয়েক মাস পরে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এনকুইরার পত্রিকা লরাঁ ও বেজোসের মধ্যে গোপন প্রেমের কাহিনী প্রথম প্রকাশ করে। এ সময় জেফ বেজোস তার স্ত্রী ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে ছিলেন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ। তাদের ২৫ বছরের ঘরসংসার। ম্যাকেঞ্জি চার সন্তানের মা তখন। ২০১৮ সালের এপ্রিলে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনী জেফ বেজোস তার পরিবারকে ম্যাকেঞ্জির জন্মদিন উদযাপনের জন্য নরওয়েতে বরফে তৈরি আইস হোটেলে নিয়ে যান। এসব লিখেছেন ব্রাড স্টোন। তিনি আরো লিখেছেন, কিন্তু ২০১৮ সালের শেষের দিকে অ্যামাজনের নির্বাহীরা লক্ষ্য করেন তাদের বসের মধ্যে অত্যন্ত অস্বাভাবিকতা। তিনি অন্যমনষ্ক থাকেন। কখন কোথায় থাকেন তা জানা খুব কঠিন হয়ে যায় তাদের জন্য। তারা আরো লক্ষ্য করলেন, তাদের বস এক সময় হেলিকপ্টারের নামই শুনতে পারতেন না। অথচ এ সময়ে তিনি হেলিকপ্টারের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে জেফ বেজোসের কোম্পানি একটি হেলিকপ্টার কিনে ফেলে। অ্যামাজনের অজনপ্রিয় একটি প্রস্তাব আসে হেলিপ্যাড নিমাণের। এটা লং আইল্যান্ড সিটির দ্বিতীয় সদরদফতরে নির্মাণের কথা বলেন। শীর্ষ স্থান থেকে এই প্রস্তাব এলেও ২০১৯ সালে তা বাতিল করা হয়।
ন্যাশনাল এনকুইরারের তথ্য প্রকাশের পর জেফ বেজোস সরাসরি বলে দেন- এই নারীর সঙ্গে আমার রিলেশনশিপ আছে। এরই মধ্যে এনকুইরার প্রকাশ করে দিয়েছে লরাঁ ও জেফ বেজোসের অন্তরঙ্গ কিছু ছবি ও রগরগে টেক্সট বিনিময়। জেফ বেজোস বলেন, কিন্তু এনকুইরার যে কাহিনী প্রকাশ করেছে তা পুরোপুরি ভুল এবং নিয়মের বাইরে। ম্যাকেঞ্জি এবং আমার মধ্যে সুন্দর, সুস্থ প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যেমন কথোপকথন হয়, তেমন কথা হয়। সে খুব চমৎকার। তার বাচ্চারাও সুন্দর। এসবই অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর। সুতরাং এ বিষয়ে দৃষ্টি দেয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
২০১৯ সালের ৯ই জানুয়ারি ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবনের বিচ্ছেদ ঘটানোর ঘোষণা দেন জেফ বেজোস। লরাঁর সঙ্গে এমন সম্পর্কের কারণে ডজন ডজন বর্তমান ও সাবেক কর্মী বিস্মিত ও হতাশ।