× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সিলেটে নোমান এখনো লাপাত্তা

এক্সক্লুসিভ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১০ মে ২০২১, সোমবার

বিতর্কিত ঘটনায় বহিষ্কৃত এস আই আকবরের ঘনিষ্ঠজন ছিল কোম্পানীগঞ্জের সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান। এস আই আকবর যখন সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ ছিলেন তখন নোমান ছিল তার অন্যতম সহযোগী। বন্দরবাজারকেন্দ্রিক নানা বিতর্কিত ঘটনায় আকবর নিজেকে রক্ষা করতে সহযোগিতা চাইলে ঝাঁপিয়ে পড়তো নোমান। এমনকি রায়হান খুনের ঘটনার পরদিন বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ডাক পড়ে নোমানের। সে গিয়ে ফাঁড়ির সিসিটিভি ফুটেজ মুছে দিতে কম্পিউটারের যন্ত্রাংশও সরিয়ে ফেলে। এরপর আকবরকে ভারতে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করে। এমনকি এস আই আকবরের সঙ্গে ভারতেও চলে গিয়েছিল নোমান। সেই থেকে লাপাত্তা সে।
তার কোনো খবর নেই। তবে- কোম্পানীগঞ্জের স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নোমান ৭ মাস ধরে ভারতেই অবস্থান করছে। গ্রেপ্তারের ভয়ে সে দেশে আসছে না। গত বছরের ১০ই অক্টোবর সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে মারা যায় নগরীর নেহারীপাড়ার যুবক রায়হান আহমদ। ইয়াবা বেচা-বিক্রি ও পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় বন্দরবাজার ফাঁড়ির পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ফাঁড়িতে এনে নির্মম নির্যাতন করেন। এ ঘটনায় পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। দীর্ঘ ৭ মাস তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই চার্জশিট দাখিল করেছে। চার্জশিটে অভিযুক্ত ৬ জনের মধ্যে ৫ পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। কারণ- ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সময় পিবিআই যাদের সম্পৃক্ততা পেয়েছিলো সেসব পুলিশ সদসকে গ্রেপ্তার করে। ভারত থেকে বিশেষ কৌশলে কানাইঘাটের দুর্গম সীমান্ত এলাকায় এনে আকবরকে ঘটনার এক মাসের মাথায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সিলেট জেলা পুলিশ এ অভিযানে কৃতিত্ব দেখিয়েছিল। পুলিশের জন্য পলাতক থাকা এস আই আকবরকে গ্রেপ্তার করা ছিল চ্যালেঞ্জ। অবশেষে সিলেট জেলা পুলিশ সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এস আই আকবরকে সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান। সে পলাতক। পিবিআইও তাকে ধরতে পারেনি। সিলেট পিবিআই’র পুলিশ সুপার মো. খালেদুজ্জামান গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন- নোমান এখনো পলাতক। তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ কারণে চার্জশিটে পলাতক দেখানো হয়েছে। দেশে না বিদেশে আছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয় বলে দাবি করেন পিবিআই এসপি। গত বুধবার সিলেটের আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর আওলাদ হোসেন রায়হান খুনে প্রত্যক্ষ ঘটনার সঙ্গে চারজনের সংশ্লিষ্টতা ও দু’জন প্রধান আসামিকে পালিয়ে যেতে সহায়তাকারী ও মামলার আলামত নষ্টকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সহায়তাকারী দু’জনের মধ্যে একজন হচ্ছে- গ্রেপ্তার হওয়া এস আই হাসান ও পলাতক সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান। এস আই হাসানকে ঘটনার এক মাসের মাথায় সিলেটের পুলিশ লাইনে ক্লোজ থাকাকালে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। এরপর গ্রেপ্তার হওয়া এস আই আকবর ও হাসানের মুখ থেকে জানা যায় নোমানের নাম। ফলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নোমানকে চার্জশিটে আসামি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন। সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমানের বাড়ি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বুড়িডর গ্রামে। তার পিতা ইসরাইল আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। নোমান কোম্পানীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ছিল। এ ছাড়া সিলেটের একটি স্থানীয় দৈনিক ও অনলাইন পোর্টালে সে কাজ করতো। তবে আকবরের সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে নোমান পালিয়ে যাওয়ার আগে সিলেট নগরীর আম্বরখানা এলাকায় বসবাস করতো। কোম্পানীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আবিদুর রহমান মানবজমিনকে জানিয়েছেন- বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নোমানকে কোম্পানীগঞ্জ প্রেস ক্লাব থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন তার সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ প্রেস ক্লাব কিংবা কোনো সাংবাদিকদের সম্পর্ক নেই। স্থানীয় সূত্র জানায়- রায়হান খুনের ঘটনার দিন বিকাল পর্যন্ত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ছিল এস আই আকবর। এ সময় ফাঁড়িতে তার সঙ্গে নোমানও ছিল। সন্ধ্যার পর নোমান ও আকবর পুলিশ লাইন এলাকায় যায়। সেখান থেকে আকবর ও নোমান যায় কোম্পানীগঞ্জে। এক মহিলা জনপ্রতিনিধির সহায়তায় এস আই আকবরকে নিয়ে ১১ই অক্টোবর রাতেই কোম্পানীগঞ্জের মাঝেরগাঁও সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পাড়ি জমায় নোমান। এরপর থেকে নোমান ভারতের মেঘালয়েই রয়েছে। ঘটনার পর যখন আকবর পালিয়ে যায় তখন থেকেই নোমানের নামও আলোচিত হয়। নোমানকে ধরতে পুলিশ কোম্পানীগঞ্জে একাধিকবার অভিযান চালালেও খোঁজ পায়নি। দফায় দফায় তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও সন্ধান তারা দিতে পারেননি। আইনজীবীরা জানিয়েছেন- রায়হান হত্যার ঘটনায় পিবিআইয়ের দায়ের করা চার্জশিট যদি বিচারে যায় তবে নোমানকে পলাতক রেখেই মামলার বিচার শুরু হবে। যদি এরমধ্যে সে এসে আদালতে হাজির হয় তাহলে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন আদালত। নতুবা তাকে বাইরে রেখে মামলার রায় পর্যন্ত যেতে পারবে। কেউ পলাতক থাকলে তার জন্য মামলার চলমান গতি থমকে যায় না।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর