× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ৯ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

করোনা সহিষ্ণু গ্রাম মডেল শহরেও বাস্তবায়নের আহ্বান

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
১১ মে ২০২১, মঙ্গলবার

করোনা সহিষ্ণু গ্রাম মডেল শহরগুলোতে বিস্তৃত আকারে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সোমবার ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’ আয়োজিত করোনাভাইরাস সহিষ্ণু গ্রাম সৃষ্টির অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা এ আহ্বান জানান। ভার্চ্যুয়াল এ সভায় সারা দেশের প্রায় ৫ শতাধিক কমিউনিটি সহায়ক অংশ নেন। সভার মূল উপস্থাপনায় জানানো হয়, করোনা সংক্রমণ রোধে  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুসরণ করে ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’ গ্রামগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। তারা এই কার্যক্রমের আওতায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১ লাখ ১৭ হাজার ৮৫৪টি পরিবারকে সচেতন করেছে। এই কাজে প্রায় ১২০০ কমিউনিটি সহায়ক নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ কার্যক্রমের আওতায় থাকা গ্রামগুলোতে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় ছিল। বেশির ভাগ গ্রামে করোনা ছড়াতে পারেনি।
তারা সফলভাবে করোনা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। সভায় অংশ নিয়ে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এই মডেল শহরাঞ্চলে বিস্তৃত করতে হবে। এটা শহরে বাস্তবায়ন হলে এক মাসে করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবার্তা পৌঁছানোর কাজটি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কথা খুবই কার্যকর। এই মুহূর্তে তিনটি কাজ খুবই প্রয়োজন। প্রথমত, করোনার সংক্রমণের নিম্নগামী ঢেউ ধরে রাখা, ঢেউ যেন না বাড়ে। যেসব কেস শনাক্ত হচ্ছে তাদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান এবং আইসোলেশনে রাখা। সংক্রমণের চিহ্নিত উৎস থেকে সংক্রমণ রোধ করা। তিনি আরো বলেন, ভ্যাকসিন এই মুহূর্তে কম আছে। সবাই যেন নিতে পারে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা দরকার।
প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, এটা একটা সর্বাঙ্গীণ প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামটা যেভাবে করা হয়েছে যদি সমস্ত গ্রামে করা গেলে সোনার গ্রাম করা যাবে। করোনা বাইরে থেকে আসছে। এর পথের দিকে নজর দিতে হবে। করোনা শহর থেকে আসে কিংবা চেকপোস্ট দিয়ে আসে। তাই এর উৎসে গিয়ে কাজ করতে হবে। গত এক বছরে আমাদের ব্যর্থতা আমরা এটা করতে পারিনি। শহরেও এমন প্রোগ্রাম চালু হওয়া দরকার। বর্তমানে শহর হচ্ছে করোনার নার্সারি। ঈদ কিংবা বিশেষ সময়ে করোনা বেশি ছড়ায়। সোনার গ্রামে সচেতনতামূলক থাকলে ঈদে মানুষ গ্রামে গেলেও ছড়াবে না। শহরে এ মডেল কার্যকর করতে পারলে সোনার বাংলাদেশ বলতে পারবো।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, করোনা সহিঞ্চু গ্রামে যারা কাজ করছেন বড় চোখে ছোট মনে হতে পারে। প্রত্যেকটি কাজই মূল্যবান। জনস্বাস্থ্য সমস্যায় জনসম্পৃক্ততা না থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত দিয়ে বসে থাকলে কাজ হবে না। সকল করোনা রোগীর কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন নিশ্চিত করতে পারতাম। করোনা সহিষ্ণু গ্রামের মডেল শহরেও যদি চালু করা যায় তবে করোনা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোশতাক চৌধুরী বলেন, করোনা সহিঞ্চু গ্রামের মডেল বাস্তবায়নে অন্য সংস্থাগুলোরও এগিয়ে আসা দরকার। পাশাপাশি এটি পুরো বিশ্বের জন্য মডেল হতে পারে।
এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক রাশেদুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস সহিঞ্চু গ্রাম প্রোগ্রাম একটি চমৎকার উদ্যোগ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারকে সম্পৃক্ত করা এবং সত্যিকারের দরিদ্রদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেয়ার কাজ প্রশংসনীয়। এনজিও সরকারের প্রতিপক্ষ না, সহায়ক শক্তি। এটার বাস্তব উদাহরণ এই প্রোগ্রাম। আশা করবো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এই মডেল উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা ও  জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মুজাহেরুল হক বলেন, এই কার্যক্রম জাতির জন্য গর্বের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুরুতে বলেছে, কমিউনিটি অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড এনগেজমেন্ট এই দুটো বিষয় জরুরি। এটা একটা আদর্শ উদ্যোগ। সরকারের উচিত পার্টনারশিপে এসে এই উদ্যোগ সারা দেশে বাস্তবায়ন করা যায়।
সভায় দি হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি শুধু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নয়, এটা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকির সমাধান করলে সব ঝুঁকি চলে যাবে। করোনা সহিঞ্চু গ্রাম মডেলের মাধ্যমে এই ঝুঁকি হ্রাস সম্ভব। আমরা করোনা মোকাবিলায় শুধু অবকাঠামোগত সুবিধার চিন্তা করছি। কিন্তু এটার সঙ্গে সামাজিক সচেতনতাও জরুরি। সভায় কমিউনিটি সহায়করা তাদের নিজ গ্রামে কীভাবে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করেছেন সে বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানান। বিশ্ব ভলান্টিয়ার দিবসে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সম্মানিত টাঙ্গাইলের শিক্ষক আনজু আরা ময়না বলেন, আমরা ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট টিমের নেতৃত্বে করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রম শুরু করি। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে গ্রাম পর্যায়ে সচেতনতামূলক কাজ করেছি আমরা। এই কাজে শুধু হাঙ্গার প্রজেক্ট নয় পর্যায়ক্রমে সরকারের দপ্তরগুলো যোগ হয়েছে। ফলে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে করোনা রোগী থাকলেও আমার গ্রামে করোনা রোগী নেই।
রাজশাহীর মোহনপুরের ধুরল ইউনিয়ন থেকে যুক্ত হয়ে আব্দুল আলিম শেখ ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠনের অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, আমরা ভলান্টিয়াররা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করে করে ৩০ সদস্যবিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি গঠন করি। গ্রাম পর্যায়ে হাত ধোয়া, মাস্ক পরিধান করা ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আমরা সক্ষম হয়েছি। এ ছাড়া মসজিদভিত্তিক কার্যক্রম ও  কমিউনিটি ক্লিনিক ম্যানেজমেন্টের সহায়তা গ্রহণ করেছি আমরা।
বরিশাল, আগৈলঝড়া থেকে সুমা কর বলেন, এই কার্যক্রমে আমি ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। গ্রামে ভলান্টিয়াররা উঠোন বৈঠক করেছি। করোনাভাইরাস কি ধরনের রোগ সে বিষয়ে সচেতন করেছি। ২০ জন করে গ্রুপ করে আমরা কাজ করেছি। মানুষকে নিয়মনকানুন শিখিয়ে দিয়েছি। হাটবাজারে লিফলেট, মাস্ক বিতরণ করেছি। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে দোকানের সামনে চক দিয়ে দাগ দিয়েছি। মাইকিং করে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করেছি।
গাংনী থেকে পলাশ আহমেদ বলেন, ঢাকা থেকে দেশের বাইরে থেকে আসা মানুষকে চিহ্নিত করে হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করেছি আমরা। গার্মেন্টস শ্রমিকদের যাদের বাড়িতে সম্ভব হয়নি তাদের স্কুলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। গরিবদের ১৪ দিনের খাবার দিতে পেরেছি। বিশিষ্ট ডাক্তাররা ফোনের মাধ্যমে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিয়েছেন। আমরা টেস্ট করানোর জন্য সহায়তা করেছি। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘৃণা করা হতো। সচেতনতা সৃষ্টি করে মানবিক আচরণ যেন করা হয় তাদের প্রতি সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করেছি। প্রত্যেক পাড়ায় কমিটির মোবাইল নম্বর ছিল। বাইরে থেকে কেউ আসলে ফোন আসতো। ভয়ঙ্কর অবস্থা ছিল হাটের। ঝুঁকি ছিল। স্কুল মাঠে হাট স্থানান্তর করিয়েছি প্রশাসনের সহায়তায়।
রংপুরের  গঙ্গাচড়া থেকে রায়হান কবীর বলেন, গ্রাম উন্নয়ন দল থেকে এলাকার করোনা প্রতিরোধ কমিটি তৈরি করি। হতদরিদ্রদের তালিকা তৈরি করি। ৬৫ পরিবারকে চিহ্নিত করে ৫০০ টাকার প্যাকেজ দিয়েছি। সরকারি  অনুদান তালিকা তৈরি করেছি আমরা। সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাসায় বাসায় গিয়ে জরিপ করি। সরকারের ২৫০০ টাকা সুষ্ঠুভাবে বণ্টনে সহায়তা করেছি। শুরুতে কোভিড-১৯ টিকা মানুষ গ্রহণ করতে চাচ্ছিল না। ভয় কাটাতে ইয়ুথদের মধ্যে একজন নারী ভলান্টিয়ার টিকা গ্রহণ করে। পরে আমাদের মাধ্যমে ৫ হাজার জন টিকার রেজিস্ট্রেশন করেছে।
যশোরের পারভীন আক্তার বলেন, আমরা গ্রামভিত্তিক হতদরিদ্রদের তালিকা ও দাতাদের তালিকা তৈরি করি। লিস্টভিত্তিক সরকারের মানবিক সহায়তা কর্মসূচি থেকে সহায়তা করি। সচ্ছল সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করে। আমরা কৃষকের কাছ থেকে সবজি কিনে বিতরণ করি। প্রান্তিক চাষিদের বিনামূল্যে সবজি বীজ বিতরণ করেছি। বাইরের শ্রমিক না ঢুকায় স্বেচ্ছাসেবকরা ধান কেটে ও মাড়াই করে দিয়েছে কৃষকদের। মানিকগঞ্জের দিঘি ইউনিয়নের চেয়ার?ম্যান আবদুল মতিন মোল্লা ও স্থানীয় এমপি ও মাননীয় মন্ত্রী নিয়মিত দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। মাস্ক পরতে আমরা অভ্যস্ত ছিলাম না। আমার ইউনিয়নে কেউ করোনা আক্রান্ত হয়নি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর