ইসমাইল হোসেন সুমন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাশ করেন। এরপর তিনি চাকরির পেছনে না ছুটে ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। ২০১৩ সালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকায় ছোট একটি দোকানে বাচ্চাদের খেলনা ও কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। শুরুতে ভালই চলছিলো। ব্যবসাও হতো মোটামুটি। এরপরই বদলে যেতে থাকেন সুমন। রাতারাতি বিত্তশালী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ করায় ইংরেজিতেও মোটামুটি দক্ষ।
বেশ স্মার্ট। সুমন ছোট দোকানটিতেই কম্পিউটার বসান। সংযোগ করেন ইন্টারনেট। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি। পা দেন অন্ধকার জগতে। যোগাযোগ করতে থাকেন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জুয়াড়ির সঙ্গে। নিজেও জড়িয়ে পড়েন জুয়াড়িতে। শুরু করেন অবৈধ বিট কয়েনের ব্যবসা। বাড়তে থাকে তার ব্যবসার পরিধি। গড়ে তোলেন বেসিক বিজ মার্কেটিং নামে অনলাইন আউট সোর্সিং প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুমনের প্রভাব-প্রতিপত্ত বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা। পরিচিত লোকজন তাকে ডাকে কয়েন সুমন নামেও। শুরুতে সুমনের একটি ছোট অফিস থাকলেও তা বড় হয়। বাড্ডায় তিনটি ফ্লোর ভাড়া নেন। ৩২ জন কর্মচারী নিয়োগ দেন। দেন আকর্ষণীয় বেতন। প্রতিষ্ঠানটি তিনটি শিফটে ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। অবৈধ বিট কয়েনের ব্যবসা করে সুমন রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে যান। অবৈধ ব্যবসা দিয়েই সুমন হয়ে যান কোটিপতি। সুমনের রয়েছে একাধিক ভার্চুয়াল ওয়ালেট। যেখানে মজুত রয়েছে লক্ষাধিক ডলার যা প্রায় কোটি টাকার সমান। শুধু তাই নয়, বিট কয়েন ব্যবসার মাধ্যমে গড়েছেন ফ্ল্যাট, প্লট, সুপার শপসহ নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে, ঢাকায় দু’টি ফ্ল্যাট, প্লট ও সুপার শপের ব্যবসা রয়েছে তার। গত এক বছরে তিনি বিট কয়েনের মাধ্যমে অবৈধভাবে কমপক্ষে ১৫ লাখ ডলার লেনদেন করেছেন। জানা গেছে, সুমন বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ই-মার্কেটিং সাইটে আকর্ষণীয় মূল্যে বিজ্ঞাপন দিতেন। পরবর্তীতে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করতেন। কেউ তার পণ্য ক্রয় করতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে তা তিনি তা হ্যাক করতেন ও টাকা আত্মসাৎ করতেন। এভাবেই আন্তর্জাতিক জুয়াড়িতে পরিণত হন সুমন। ২রা মে রাতে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকার বেসিক বিজ মার্কেটিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে দেশে অবৈধ বিট কয়েন ব্যবসার মূলহোতা ও অনলাইনে প্রতারণার অভিযোগে ইসমাইল হোসেন সুমনসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাইব-১ এর একটি দল। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৯টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, তিনটি ল্যাপটপ, ১৫টি মোবাইল ফোন, একটি ট্যাবলেট ও বিবিধ নথিপত্র জব্দ করা হয়। তাদের নামে রাজধানীর বাড্ডা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় তাদের রিমান্ড শেষে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। ওই মামলার তদন্ত করছেন বাড্ডা থানার সাব ইন্সপেক্টর খায়রুল ইসলাম। তিনি মানবজমিনকে বলেন, মামলার তদন্ত কাজ চলছে। বেশ কিছু তথ্য আসামীদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে।