× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

করোনার বিরুদ্ধে গোবর-গোমূত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্কতা চিকিৎসকদের

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(২ বছর আগে) মে ১১, ২০২১, মঙ্গলবার, ১১:০১ পূর্বাহ্ন

গোশালায় লাইন। গোবর আর গোমূত্রের জন্য অপেক্ষা। এসব হাতে এলে তা একসঙ্গে মিশ্রিত করে পুরো গায়ে লেপন করে তা শুকানো হয়। এরপর গরুর কাছে গিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। গরুকে সম্মান করা হয়। তারপর দুধ দিয়ে পুরো শরীর গোসল করার মতো পরিষ্কার করা হয়। ভারতের কিছু হিন্দুর মধ্যে এমন রীতি প্রচলিত। তারা বিশ্বাস করেন, গোবর, গোমূত্র করোনা সারায়।
তাদের এমন বিশ্বাস বা ধারণার বিরুদ্ধে সতর্কতা দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, গোবর ও গোমূত্র কোভিড-১৯ সারায় এমন কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ নেই। এর কার্যকারিতা সম্পর্কেও কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। উল্টো এর ফলে অন্যান্য রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে। উল্লেখ্য, করোনা মহামারি ভারতকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এ যাবত সেখানে কমপক্ষে ২ কোটি ২৬ লাখ ৬০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন দুই লাখ ৪৬ হাজার ১১৬ জন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে এসব সংখ্যা ৫ থেকে ১০ গুন বেশি। কারণ, সারাদেশে আক্রান্ত ব্যক্তিরা, তাদের স্বজনরা হাসপাতালে একটি বেড, অক্সিজেন, ওষুধের জন্য লড়াই করছেন। অনেকে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। এসব খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।


ওদিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে অনেকে বিশ্বাস করছেন গোবর বা গোমূত্র করোনা ভাইরাস সারায়। তাই অনেকেই গরু রাখার স্থান বা গোয়ালঘরে সপ্তাহে কমপক্ষে একবার ঢুঁ মারছেন। তারা সারা গায়ে গোবর ও গোমূত্র লেপন করছেন। তাদের বিশ্বাস এতে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং তাদেরকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রেহাই দেবে। এমন বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করেছে রয়টার্স। তাতে দেখা যায় কেউ গোয়ালঘরে গিয়ে সারাগায়ে গোবর লেপন করেছেন। এরপর গরুর কাছে গিয়ে প্রার্থনা করছেন যেন তারা নিরাপদে থাকেন। দলবদ্ধভাবে লাইন দিয়ে বসে গেছেন একদল মানুষ। তাদের সামনে বালতিতে গোবর রাখা। তা তারা পুরো গায়ে লেপন করছেন। তারপর তারা দু’হাত তুলে প্রার্থনা করছেন।

হিন্দুদের কাছে গরু হলো জীবন এবং পৃথিবীতে একটি পবিত্র প্রতীক। তাই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বাড়ি পরিষ্কার করার কাজে এবং প্রার্থনার আনুষ্ঠানিকতায় হিন্দুরা গোবর ব্যবহার করে আসছেন। তাদের ধারণা, এতে ওষুধি গুন আছে। এন্টিসেপটিক ক্ষমতা আছে। ভারতে একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানির এসোসিয়েট ম্যানেজার গৌতম মনিলাল বরিসা বলেন, আমরা দেখতে পেয়েছি এই গোবর লেপন বা গোমূত্রের ব্যবহার করছেন চিকিৎসরা পর্যন্ত। তাদের বিশ্বাস এই থেরাপি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে। একবার গোবর, গোমূত্র গায়ে মাখলে তাদের আর কোনো ভয় থাকে না। তারা নিরাপদ হয়ে যান। গত বছর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন মনিলাল বরিসা। তিনি বলেছেন, এই রীতি অনুসরণ করে কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়েছেন। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত শ্রীস্বামীনারায়ণ গুরুকুল বিশ্ববিদ্যা প্রতিষ্ঠানম-এ যান। এটি পরিচালনা করেন হিন্দু পুরোহিতরা। ভারতে নিজেদের মতো টিকা উৎপাদনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে জিডাস ক্যাডিলা নামের প্রতিষ্ঠান। এর ঠিক বিপরীতে অবস্থিত শ্রীস্বামীনারায়ণ গুরুকুল বিশ্ববিদ্যা প্রতিষ্ঠানম। সেখানে যেসব মানুষ গোবর, গোমূত্র ব্যবহারের জন্য যান তারা অপেক্ষা করেন। এক সময় গরু গোবর দেয়, গোমূত্র ত্যাগ করে। এই দুটি উপাদান মিশ্রিত করে তারা শরীরে মাখেন। তারপর তা শুকাতে দেন। এক পর্যায়ে সেখানে থাকা গরুগুলোকে আলিঙ্গন করেন অথবা গরুর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। শেষ পর্বে তাদের গায়ের এই মিশ্রণ দুধ বা বাটারমিল্প দিয়ে ধুয়ে ফেলেন।

কিন্তু ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীরা বার বার সতর্ক করেছেন এই রীতি চর্চার বিরুদ্ধে। তারা বলেছেন, গোবর-গোমূত্র নিরাপত্তা বাড়ায় এমন ধারণা ভুল। উল্টো এতে স্বাস্থ্যগত সমস্যা জটিল থেকে জটিল হতে থাকে। ইন্ডিয়ান মেডিকেল এসোসিয়েশনের ড. জেএ জয়লাল বলেন, গোবর ও গোমূত্র যে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে এমন কোনো সুদৃঢ় বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ নেই। যা করা হচ্ছে তা একান্তই ব্যক্তিগত বিশ্বাস থেকে। এর ফলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। পশুর দেহ থেকে নানা রকম রোগের বিস্তার ঘটতে পারে মানবশরীরে। আহমেদাবাদে আরেকটি গোশালার ইনচার্জ মধুচরণ দাস বলেন, এই চর্চায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা সীমিত হয়ে আসছে।  

অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর