লাখো বিষয় নিয়ে লেখার আছে। হাজারো বিষয় নিয়ে কথা বলার আছে। দু’চোখে তাকালে শুধু বিষয় আর বিষয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো- এ মুহূর্তে কোনটা রেখে কোনটা লিখবো? এই যে ধরুন, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা গিলে খাচ্ছে বিশ্বকে। কেড়ে নিয়েছে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ। অর্থনীতির চাকার গতি নিমিষেই থমকে দিয়েছে। নতুন করে বহু মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে গেছে। স্বপ্নের মতোই।
তাদের মুখে হাসি নেই। ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোড়জোড়। অবশেষে টিকা এলো। কিন্তু এরই মাঝে করোনা যেন দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়লো অসহায় মানুষের ওপর। বাড়ির পাশে ভারতকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে। অক্সিজেন লুটের ঘটনা ঘটেছে। অক্সিজেনের জন্য মানুষ কত কিছুই না করেছে। চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে মানুষের কি হুঁশ হয়েছে? অবস্থা দেখে তো তা মনে হয় না। আসলে মানুষের গা সওয়া হয়ে গেছে সব। বাংলাদেশের কথাই ধরুন না। মাঝখানে প্রতিদিন একশ’র উপরে মানুষ করোনায় মারা গেছে। তারপরও কারো হুঁশ হয়নি। যে যেভাবে পারে ফ্রি স্টাইলে চলছে। মার্কেটে গেলে পা ফেলার জায়গা নেই। লকডাউনে রাজধানীতে তীব্র জ্যাম। এও কি ভাবা যায়। সিএনজি ও রিকশাওয়ালাদের যেন উৎসব লেগেছিল। বাসে যেখানে ১৫ টাকা ভাড়া, সেখানে সিএনজি অটোরিকশায় যেতে হয়েছে ৫০০ টাকায়। স্বাভাবিক সময়ে সিএনজি অটোরিকশার ভাড়াও ছিল ১৫০ টাকা। অসহায় মানুষ জীবনের তাগিদে বেশি ভাড়া দিয়েই গন্তব্যে গেছেন। সাধারণ মানুষ তো উপায়হীন। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের কারসাজি নতুন কোনো ঘটনা নয়। আফসোস, যখন বাজারে পিয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৩২ থেকে ৩৫ টাকা কেজি তখন মন্ত্রী ঘোষণা দেন ৪০ টাকা কেজি’র বেশি পিয়াজ বিক্রি করা যাবে না। আবার তেল যখন ১১০ কিংবা ১১৫ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছিল দোকানে দোকানে তখন ঘোষণা আসে ১৩০ টাকা লিটার তেল বিক্রি করতে হবে। ব্যবসায়ীরা পেয়ে গেছেন মওকা। তারা আরও দশ টাকা বাড়িয়ে ১৪০ টাকা লিটার বিক্রি শুরু করেন। লেখার ইস্যু তো অনেক। ভারতের ক’টি রাজ্যে হয়ে গেছে বিধানসভার ভোট। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে এবার ভোট নিয়ে যা হয়েছে ভারতের ইতিহাসে তা নজির সৃষ্টি করেছে। তবে নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গঠন করলেও বিজেপি এগিয়েছে বেশ। তারা প্রধান বিরোধী দল। এটাও তাদের জন্য বিশাল পাওয়া। তারপরও নির্বাচনে কাদা ছোড়াছুড়ি হয়েছে । হচ্ছে। নির্বাচনের পর এখন পরিস্থিতি থমথমে। ওদিকে আমেরিকার নির্বাচন নিয়েও এবার বেশ চমক দেখা গেছে। আবার ট্রাম্পের কৌশল নিয়েও বিশ্বজুড়ে হয়েছে আলোচনা। শেষ পর্যন্ত সেখানে গণতন্ত্রেরই জয় হয়েছে। আসলে বর্তমান বাস্তবতায় নিরাশার চোরাবালিতে ডুবছে মানুষের আশা। ভরসার জায়গা হারিয়ে যাচ্ছে গভীর সমুদ্রে। চাঁদ-সুরুজ দু’ভাই দূর দেশে বসে দেখছে তামাশা। নিত্যনতুন কৌশলে ফায়দা লুটার ব্যর্থ চেষ্টা দেখে ভেংচি কাটছে পাখিরা। আর জীবজন্তুরা বনে বসে ধ্যান করছে, প্রার্থনা করছে সুমতি দেয়ার। তবুও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। যদি হতোই, তাহলে তো স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দিনে কেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামে আগুন জ্বলবে। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে বর্বর ঘটনা ঘটেছে তা যেন একাত্তরের হানাদার বাহিনীকেও ছাড়িয়ে গেছে। ঘটনার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে পড়ে এক পোড়া শহর। বিধ্বস্ত এক জনপথ। রেল স্টেশনের আধুনিক সব যন্ত্রপাতির ওপর আক্রমণ কি বুঝিয়ে গেছে আমাদের? আরও লিখতে হবে? হ্যাঁ, লিখতে গেলে এবার লিখতে হবে করোনাকালের শিক্ষা ব্যবস্থার বিপর্যস্ত চিত্র নিয়ে। লিখতে হবে, ঘরে ঘরে বেকার যুবকদের হাহাকার নিয়ে। কত শিক্ষিত যুবক তাদের স্বপ্ন ছাইচাপা পড়ার শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অপেক্ষা করছে তাদের প্রিয় শিক্ষার্থীদের জন্য। কিন্তু করোনা যে এতে বাধা। তারপরও কিন্তু রাজনীতি বন্ধ নেই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির মেয়াদের শেষ দিনে প্রায় দেড়শ লোককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে ঘটে গেছে নানা ঘটনা। শেষ দিনে নিয়োগ দিয়ে যাওয়া আবার কোন রাজনীতি? জানতে খুব মন চায়। ওদিকে নানা ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে উঠছে মানুষের নির্ভরতার প্রতীক। এওতো এক ভয়ঙ্কর তথ্য। এটা কেন হচ্ছে? ভাববার সময় এসেছে। অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীকে বেহুদা জল ঘোলা করছে কেউ কেউ। এতো বিষয় থাকতে তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন সরগরম। আসলে মানুষে মানুষে হিংসা, হানাহানির ঘটনা আদিম যুগকেও ছাড়িয়ে গেছে। এসব থেকে ফেরাবে কে? লিখতে তো কত কিছুই মনে চায়। কিন্তু মাথায় যে আর কাজ করে না। আরও কিছু লিখবো? বলি, না। থাক। এ মুহূর্তে কিছুই না লিখি।