অনলাইন

মানসিক সমস্যায় শিশুরা

বাবা অফিসে, মা ফেসবুকে

মরিয়ম চম্পা

২০২১-০৫-১২

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন নাহিদ সুলতানা। স্বামীর ফার্নিচারের ব্যবসা রয়েছে। থাকেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। একমাত্র শিশু সন্তান নাহিয়ানকে নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই বাবা-মা দু’জনের। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকাতে কিছুটা সময় পেলেও করোনার ভয়ে বাসার বাইরে যেতে পারছেন না। নাহিদ সুলতানা বলেন, ছেলের বয়স ২৩ মাস। কিন্তু এখনো কারো সঙ্গে ঠিকভাবে কথা বলে না। হাটতে চায় না। সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে মুঠোফোনে কার্টুন দেখে। আর মাঝে মধ্যে নিজ থেকেই কিছু একটা বলে ওঠে। যেটা আমরা বুঝতে পারি না। শুধুমাত্র ঘুমানোর সময় বাদ দিয়ে সারাক্ষণ নাহিয়ান মুঠোফোন নিয়ে থাকে। হাত থেকে মুঠোফোন নিলেই প্রচণ্ড চিৎকার করে। তিনি বলেন, ওর বয়সি শিশুরা পুরো ঘরময় দৌড়ে বেড়ায়। কথা বলে কান ঝালাপালা করে। কিন্তু নাহিয়ান কোনো কথাই বলছে না। শম্পার বাবা পেশায় একজন চিকিৎসক। সম্প্রতি মেয়ের পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কারণ, নিয়মিত ঘরবন্দি আর অনলাইন ক্লাসের কারণে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন বলে জানান এই চিকিৎসক পিতা। তিনি বলেন, ইদানীং আমার মেয়ে অনলাইনে নিয়মিত ক্লাস করলেও এ বছর তার ফলাফল আগের বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। অর্থাৎ -১.৭৫। যেটা খুবই খারাপ। করোনা মহামারীতে শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সিরাই এখন ঘর বন্দি সময় পার করছে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়ছে। ফলে চলমান সময়ের সঙ্গে শিশুরা খাপ খাওয়াতে পারছে না। শিশুদের মধ্যে দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতাসহ বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা থেকে অস্থিরতা, রাগ, বিরক্তি, ভয়, ঘুমের সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। বাসার বাইরে যেতে না পারায় একটানা টেলিভিশন দেখা, পাশাপাশি ইন্টারনেটের প্রভাবতো রয়েছেই। এই সময়টাতে শিশুদের মানসিক সমস্যামুক্ত রাখতে এবং বিনোদনের অন্যতম অনুসঙ্গ হিসেবে সন্তানকে নিয়ে কাছে-পিঠে ঘোরাঘুরির বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে মানবজমিনের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এ. এস. এম শাহরিয়ার। তিনি বলেন, করোনার এই ঘরবন্দি সময়টাতে বাবা-মা দুজনকেই শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। শিশুকে নিয়ে একটু ছাদে বেড়িয়ে আসা। বাসার পাশে খোলা জায়গা থাকলে একটু ঘোরোঘুরি করা। সেটা হতে পারে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় রেখে খোলা রাস্তা কিংবা ঝুঁকিমুক্ত স্থানে হাটাহাটি। এছাড়া যে সকল স্থানে লোকসমাগম কম হয় সেখানে প্রতি সপ্তাহে কিংবা দুই সপ্তাহ, ১৫ দিন পরপর ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে। এবং তাদেরকে সময় দেয়া। কারণ, এখনতো বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের ওভাবে সময় দেয় না। এছাড়া মুঠোফোন, ট্যাব, টেলিভিশনসহ এ ধরনের ডিভাইস থেকে যতদূর সম্ভব শিশুদের দূরে রাখা যায় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। বাচ্চাদের এই সময়ে ডিভাইসের প্রতি আসক্তি খুব বেশি। ডা. শাহরিয়ার বলেন, শুধুমাত্র করোনাকালীন সময়ে নয়, শিশুদের মানসিক সমস্যা সবসময় আছে। বাবা থাকেন অফিসে, মা থাকেন ফেসবুকে আর বাচ্চা থাকে তার মতো। যার সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট অনেক বেশি। এখন একটু প্রকট হয়েছে যদিও। কিন্তু এগুলো আগেও ছিল। দেখা যাবে বাচ্চাদের তার বাবা-মায়ের প্রতি সেরকম অনুভূতিটা নেই। কখনো কখনো দেখা যায় বাবা-মা দু’জন চাকরি করার কারণে বাচ্চাকে রাখা হয় ডে-কেয়ার সেন্টারে। করোনাকালীন এই সময়ে বাচ্চাদের জন্য বিনোদনের জন্য কি কি ব্যবস্থা করা যেতে পারে? জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, তাদেরকে বেশি বেশি সময় দিতে হবে। সময় পেলেই তাদেরকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে নেয়া যেতে পারে। রাজধানীতে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান আছে সেগুলো মাঝে মধ্যে নিয়ে যাওয়া। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এখন শিশুরা ফেসবুক, ইউটিউবের যত অনুসঙ্গ আছে সেগুলো যেভাবে চিনছে জাতীয় জাদুঘর, উদ্যান, শিশু একাডেমি এগুলো সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না। ফলে তাদের সাধারণ জ্ঞান প্রায় শূন্য।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status