ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ ও হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। সংঘাত পরিহার করে শান্তি আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন অনেকেই। আবার অনেক রাষ্ট্রপ্রধান পক্ষ বেছে নিয়ে অপর পক্ষের নিন্দা করছেন। সব মিলিয়ে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে নতুন করে বাড়তে থাকা উত্তেজনা নিয়ে সরব হয়েছেন বিশ্ব নেতারা।
সাম্প্রতিক উত্তেজনা নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, হামাসকে অবশ্যই অতি দ্রুত রকেট হামলা বন্ধ করতে হবে । তিনি আরও বলেন, দুই পক্ষকেই শান্ত থাকতে হবে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি একই রকম ভাবে বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সংঘর্ষের ব্যাপারে গুরুতরভাবে উদ্বিগ্ন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দুর্বলতার কারণেই মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, তার শাসন আমলে গৃহীত মধ্যপ্রাচ্য নীতির কারণে শান্তি বিরাজ করছিল। তার আমলে ইসরায়েলের শত্রুপক্ষের জানা ছিল যুক্তরাষ্ট্র দেশটির পক্ষে শক্তভাবে রয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগীদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব টুইট করে বলছেন, হামাসকে রকেট হামলা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করা বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, পশ্চিম তীর, গাজা এবং পূর্ব জেরুসালেমে গুরুতর সংঘর্ষ হচ্ছে, যা তাৎক্ষনিকভাবে বন্ধ করা প্রয়োজন। গাযা থেকে ইসরায়েলের বেসামরিক লোকের উপর যে ভাবে হামলা করা হয়েছে, তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য না।
উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তুরস্ক। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলা ‘আত্মরক্ষার্থে’ বিবেচনা করায় যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করেছে দেশটি। তুরস্কের যোগাযোগ বিষয়ক পরিচালক ফাহরেত্তিন আলতুন বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করা ও তাদের ভূমিদখল, মসজিদে হামলা, নিরপরাধ শিশুদের হত্যা। এসব নৃশংসতা কি আত্মরক্ষার্থে? এসব হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিক্রিয়া আছে? ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। তিনি পুতিনকে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতি আচরণের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ইসরায়েলকে ‘একটি শক্তিশালী ও প্রতিরোধমূলক শিক্ষা দিতে হবে’। তবে এতে পুতিন এরদোগানকে সায় দিয়েছেন বলে জানা যায়নি। তুরস্কের এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জেরুজালেমের চলমান উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় এই দুই নেতা বুধবার টেলিফোনে কথা বলেছেন। ইসরায়েলকে একটি শক্তিশালী ও প্রতিরোধমূলক শিক্ষা দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন এরদোগান এবং এই বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের হস্তক্ষেপ কামনা করে ইসরায়েলকে ‘দৃঢ় ও স্পষ্ট বার্তা’ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এ পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের পক্ষে রয়েছেন বলে টুইট করেছেন। এতে তিনি লিখেন, আমি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং আমরা গাজার সাথে আছি, আমরা ফিলিস্তিনের সাথে আছি। এর সাথে বিখ্যাত মার্কিন বুদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কির একটি লেখাও জুড়ে দিয়েছেন ইমরান।