বিদেশ যেতে ইচ্ছুক যাত্রীদের করোনা টেস্ট করানোর অনুমতি চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করেছিল ২০ প্রতিষ্ঠান। সক্ষমতা যাচাইয়ের পর এসব আবেদন মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে পাঠিয়েছে অধিদপ্তর। কিন্তু মাসের পর মাস পার হলেও এসব প্রতিষ্ঠানের আবেদন নিস্পত্তি করছে না মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ৩৫টি প্রতিষ্ঠান বিদেশ গমনেচ্ছুদের করোনা টেস্ট করছে সেগুলোর মোটামুটি সবই ঢাকা কেন্দ্রিক। নতুন করে অনুমোদন না দেওয়ায় বিদেশ গমনেচ্ছু ও প্রবাসীদের ঢাকায় এসে টেস্ট করাতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বিদেশগামীদের করোনা টেস্টের অনুমতি চেয়ে করা বেশ কিছু আবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। এই সংখ্যা ২০-এর অধিক হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব আবেদন যাচাই বাছাই করেছে এবং সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ল্যাব পরিদর্শন করেছে। এসব আবেদনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সুপারিশও রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার একটি ডায়াগনস্টিক ল্যাবের পরিচালক মানবজমিনকে বলেন, আমাদের মতো অনেকেই আবেদন করে অনুমতির অপেক্ষা করছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে তাদের আরও সময় প্রয়োজন। আমাদের কাছে বহু মানুষ আসে যারা বিদেশ যাত্রার জন্য করোনা টেস্ট করাতে চায়। কিন্তু অনুমোদন না থাকায় আমরা তা করতে পারছি না। আমাদের বিশ্বমানের আরটি-পিসিআর মেশিন এবং ল্যাব আছে, যা ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিদর্শন করেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে যেসব আবেদন এসেছিল সেগুলো যাচাইয়ের পর মহাপরিচালক মহোদয়ের সম্মতিতে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৪৫৪টি ল্যাবে করোনা টেস্ট হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারী ৫২টি ও বেসরকারী ৭৬টি ল্যাবে আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে টেস্ট হচ্ছে। এছাড়া ৩৩টি সরকারী ও ২টি বেসরকারী ল্যাবে জিন এক্সপার্ট পদ্ধতিতে টেস্ট হচ্ছে। আর র্যাপিড এন্টিজেন পদ্ধতিতে টেস্ট হচ্ছে ২৯১টি ল্যাবে। বেসরকারী কোনো ল্যাবে র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টের অনুমোদন নেই। বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের করোনা টেস্টের জন্য ৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের আরটি-পিসিআর ল্যাবে করোনা টেস্টের ফি পুনঃনির্ধারণ করেছে সরকার। দেশে অবস্থানরত সাধারণ জনগণ ৩০০০ টাকা ফি দিয়ে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে করোনা টেস্ট করাতে পারবেন। আর বাসায় স্যাম্পল দিলে এই ফি’র পরিমাণ হবে ৩৭০০ টাকা। এর আগে হাসপাতালে নমুনা দিলে ৩৫০০ টাকা এবং বাসায় নমুনা দিলে ৪৫০০ টাকা ফি দিতে হতো। বিদেশ গমনেচ্ছু যাত্রীরা হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দিলে ২৫০০ টাকা ফি দিতে হবে। পূর্বে এই ফি ছিল ৩০০০ টাকা। বিদেশ গমনেচ্ছুদের বাসায় স্যাম্পল প্রদানের সুযোগ নেই। বর্তমানে বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা টেস্টের অনুমোদন যে ৩৪টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০টিই ঢাকা কেন্দ্রিক। ফলে সারাদেশ থেকে বিদেশ গমনেচ্ছুরা ঢাকায় ভিড় জমাচ্ছে। টেস্ট ও ফলাফলের জন্য তাদের অবস্থান করতে হচ্ছে। ফলে চাপ বাড়ছে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। নতুন করে যেসব প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে সেগুলোর বেশ কয়েকটি ঢাকার বাইরের। ফলে নতুন করে অনুমোদন দিলে বিদেশগমনেচ্ছুদের চাপ কিছুটা কমতো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে বিদেশগামী যাত্রী ও প্রবাসীদের ভোগান্তিও কমতো।