মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন স্থানে আজ মুসলিমদের সবচেয়ে বড় আনন্দ উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। আর এ দিনটিতে ফিলিস্তিনের গাজাবাসী ঘুম থেকে জেগেছেন একবুক শোক আর আতঙ্ক নিয়ে। ইসরাইলের নৃশংস বিমান হামলায় কমপক্ষে ৬৯ জন স্বজন হারানোর শোকে স্তব্ধ তারা। নিহতদের মধ্যে ১৭টি শিশু। ৮ জন নারী। গাজায় পুলিশের সদর দফতর এবং নিরাপত্তা বিষয়ক ভবন বোমায় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে ইসরাইল। সব মিলে গাজায়, ফিলিস্তিনে ঈদের আনন্দ নেই। আছে স্বজন হারানোর যন্ত্রণা, নিজেদের ভূমি থেকে তাদেরকে উৎখাত করে সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপনের বেদনা।
অবৈধভাবে আস্তে আস্তে বসতি সম্প্রসারণের নাম দিয়ে ফিলিস্তিনি ভূখন্ড দখল করে নিচ্ছে ইসরাইল। এর প্রতিবাদ করতে গেলেই তাদের বুকে সরাসরি গুলি করা হচ্ছে। আর তাজা রক্তে সয়লাব হচ্ছে শুষ্ক মাটি। এ থেকে যে ক্ষোভ, যে যন্ত্রণা তার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে যখন রকেট ছোড়া হয়, ইটপাটকেল ছোড়া হয় তখন ফিলিস্তিনি মানুষ, বিশেষ করে সব দোষ হয়ে দাঁড়ায় হামাসের। এই অজুহাতে আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো বোমা ফেলে ৬৯টি মানুষের জীবন কেড়ে নেয়া যায়। ৯/১১ স্টাইলে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া যায় একাধিক ভবন। তারপরও বিশ্বের বিভিন্ন নেতা যুক্তি দেখান, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। কিন্তু যেখানে ৯/১১ স্টাইলে ভবন গুঁড়িয়ে দেয়া হয়, কমপক্ষে ৬৯ জন মানুষকে হত্যা করা হয়, তাদের কি কোন অধিকার নেই! আইসিসির প্রকিসিউটর ফাতু বেনসুদার মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছে, ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধ হয়ে থাকতে পারে। এমন এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় আজ সন্তানের লাশ, তাদের কবরের পাশে অঝোরে কাঁদছেন পিতামাতা, স্বজন। তাদের কাছে আজকের ঈদে এটাই ইসরাইলের উপহার। এখানেই থেমে থাকেনি ইসরাইল। উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সবে তো শুরু। এমন হামলা চালাবো, যা তারা কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। তারই ধারাবাহিকতায় গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে আজ সকালেও ইসরাইলি বাহিনী বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল। এ অবস্থায় ইসরাইলের ভিতরেই আরবপন্থিরা এবং ইহুদিদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না নিলে সেখানে দাঙ্গা লাগার যথেষ্ট আলামত দেখা গেছে। আল জাজিরার সাংবাদিক সাফওয়াত আল কালআউট বলেছেন, আজ ঈদের রাতেও রাতভর এবং খুব ভোরে গাজায় বোমা হামলা চলছিল। ফলে গাজার বেশির ভাগ এলাকা জেগে আছে। তিনি বলেন, সময়ে সময়ে আপনি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাবেন। ভবনগুলো কেঁপে উঠছে। হামাস নিশ্চিত করেছে যে, তাদের গাজা সিটি কমান্ডার বাসেম ইসা বুধবারের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া নিহত হয়েছেন আরো সিনিয়র নেতারা। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছেন, ইসরাইলের যুদ্ধবিমান ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গ্রুপগুলোর দখলে থাকা স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলা করেছে। গাজা সিটির তেল আল-হাওয়া এলাকায় রীমা তেলবানি নামের একজন অন্তঃসত্ত্বা ও তার সন্তান ইসরাইলের বোমা হামলায় তাদের বাড়িতে নিহত হয়েছেন। শেখ জায়েদ এলাকায় এক প্রবীণ দম্পতি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে জীবন হারিয়েছেন। গাজায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সর্বশেষ হিসেবে অনুযায়ী, ১৭টি শিশু, ৮ জন নারী সহ ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৯। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৯০ জন।