ডাকাতি ও খুনের মামলায় ১৯৫৩ সালে যখন কারাগারে ঢোকেন জো লিগন। তখন তার বয়স মাত্র ১৫। এরপর কারাগারে ছিলেন দীর্ঘ ৬৮ বছর। অবশেষে মুক্তি পেলেন ২০২১ সালে। এখন তার বয়স ৮৩ বছর। কৈশোর ফেলে যৌবন, যৌবন শেষে বৃদ্ধ প্রায় পুরো জীবনটাই কেটে গেছে বদ্ধ জেলখানায়। পৃথিবীর মুক্ত আলো-বাতাস ফিরে পেতে জীবন থেকে একে একে হারিয়ে গেছে ৭টি দশক। তবুও মুক্তির পর খুশি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের জো লিগন।
নতুন জগতে প্রবেশ করতে পারার অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, সুন্দর, খুবই সুন্দর। আমি এখন অনেক বড় হয়েছি। আর শিশু নই। আমি কি শুধু একজন বড় মানুষই, একজন বৃদ্ধও। প্রতিদিন আরও বৃদ্ধ হচ্ছি।
জো লিগন গত ১১ ফেব্রুয়ারি পেনসিলভানিয়ার একটি কারাগার থেকে প্রায় সাত দশক পর মুক্তি পান। কয়েক কিশোরের হাতে ডাকাতি ও ছুরিকাঘাতে দুই ব্যক্তিকে খুনের মামলায় তাকে এই জেল খাটতে হয়। লিগন মনে করেন, তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বয়স্ক ও কিশোর অপরাধের জন্য দীর্ঘ কারাভোগের ইতিহাসের সাক্ষী। যদিও লিগনের আইনজীবী ব্র্যাডলি ব্রিজ বলেন, ১৯৫৩ সালে এই শিশুরা যে অপরাধ করেছে তার আর কোনো অস্তিত্ব নেই। ৬৮ বছর পর কারাগার থেকে বেরিয়ে আসা জো লিগন এখন ৮৩ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধ। তিনি অনেক বড় হয়েছেন, বদলে গেছেন। সমাজের জন্য তিনি আর হুমকি নন।
যে ক্ষতি তিনি করেছেন তা সমাজকে পুরোপুরি শোধ করে দিয়েছেন। জীবনের বাকি বছরগুলো স্বাধীনভাবে কাটাতে পারবেন, তিনি এর যোগ্য। যদিও সত্তরের দশকে জো লিগন ও তার সহযোগীদের পেনসিলভানিয়ার গভর্নরের কাছ থেকে অনুকম্পা হিসেবে প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। দুজনে এ প্রস্তাব গ্রহণ করলেও লিগন তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। পরবর্তীকালে ২০১৩ সালের আরও একটি প্যারোল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। তখন বলেছিলেন, এত দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকার কারণে তিনি বের হয়ে আর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন না। ২০১৮ সালে কিশোর অপরাধের শাস্তি হিসেবে আজীবন সাজা অসাংবিধানিক ঘোষিত হয়। ফলে লিগনের মুক্তিতে আর কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল না।
তার সামনে মুক্তির অনেক পথ খুলে যায়। তবুও কারাবাস ছাড়তে নারাজ লিগন। পরে অনেক বুঝিয়ে মুক্তির স্বাদ দেন তার আইনজীবী ব্রিজ, জেলের এক সময়ের সঙ্গী পেস ও ফিলাডেলফিয়াভিত্তিক কিশোর সংশোধনীর একটি প্রকল্পসহ অনেকেই। তাদের আশ্বাসে সায় দিয়ে বন্দিজীবনকে বিদায় জানান লিগন।