বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে স্টাইলিশ নায়কদের অন্যতম জাফর ইকবাল এবং সালমান শাহ। অকালমৃত্যু ঘটেছিল দুজনের ক্ষেত্রেই। যথাক্রমে মাত্র ৪১ এবং ২৫ বছর বয়সে মারা যান দুজন।
জাফর ইকবাল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের আগেই তিনি চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। তার অভিনীত প্রথম ছবির নাম ‘আপন পর’। এই ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন কবরী। তার সাথে জনপ্রিয় অভিনেত্রী ববিতা জুটি হয়ে প্রায় ৩০টির মত ছবি করেন।
আর সালমান শাহ’র জন্মই হয়েছিল ১৯৭১ সালে, অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে। তার নাম রাখা হয়েছিল শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন।
টেলিভিশন নাটক দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু হলেও ১৯৯৩ সালে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তি পায়। একই ছবিতে নায়িকা মৌসুমী ও গায়ক আগুনেরও অভিষেক হয়। বলাবাহুল্য তুমুল জনপ্রিয়তা পায় ছবিটি। জানা যায়, স্কুলে চিত্রনায়িকা মৌসুমী তার সহপাঠী ছিলেন।
জাফর ইকবাল ১৯৬৬ সালে একটি ব্যান্ড দল গড়ে তোলেন। সিনেমায় তার প্রথম প্লে-ব্যাক করা গান ছিল ‘পিচ ঢালা পথ’। তার গাওয়া “হয় যদি বদনাম হোক আরো ” গানটি একসময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তিনি ভালো গিটারবাদকও ছিলেন।
উল্লেখ্য জয় বাংলা বাংলার জয়, একবার যেতে দে না, একতারা তুই দেশের কথা ইত্যাদি গানের সুরকার আনোয়ার পারভেজ তার ভাই এবং এক নদী রক্ত পেরিয়ে, একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়ে, একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল, প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, আমায় যদি প্রশ্ন করে, যে ছিল দৃষ্টির সীমানায় ইত্যাদি গানের গায়িকা শাহনাজ রহমতুল্লাহ তার বোন।
অন্যদিকে আশির দশকে ইত্যাদিখ্যাত হানিফ সংকেতের গ্রন্থনায় ‘কথার কথা’ নামের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে ‘নামটি ছিল তার অপূর্ব’ নামের একটি গানের মিউজিক ভিডিওতে প্রধান চরিত্র অপূর্ব’র ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে সালমান শাহ মিডিয়াতে প্রথম আলোচিত হন। তখন অবশ্য তাকে সালমান শাহ নামে কেউ চিনতো না। মিউজিক ভিডিওটি জনপ্রিয়তা পেলেও নিয়মিত টিভিতে না আসার কারনে দর্শক ধীরে ধীরে তাকে ভুলে যায়। পরে অবশ্য তিনি আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় ‘পাথর সময়’ নাটকে একটি ছোট চরিত্রে এবং কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছিলেন।
জাফর ইকবাল ১৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। যার বেশিরভাগই ছিল ব্যবসা সফল। সালমান শাহ সর্বমোট ২৭টি চলচ্চিত্র অভিনয় করেন এবং সবকটি ছবিই ছিল ব্যবসাসফল।
নায়ক জাফর ইকবাল সনিয়া নামে একজনকে বিয়ে করেন। ববিতার সঙ্গে তার জুটি ছিল দর্শক নন্দিত। এই জুটির বাস্তব জীবনে প্রেম চলছে বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ায় হতাশ হয়ে জাফর ইকবাল অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জোর গুঞ্জন উঠেছিল।
বলা হয়ে থাকে, পারিবারিক অশান্তির কারনে জাফর ইকবাল মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। পরবর্তীকালে মদ্য পানসহ অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের ফলে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তার হার্ট এবং কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। ১৯৯১ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।