× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মহামারিতে রেস্তোরাঁ খাতে ক্ষতি ৫০ হাজার কোটি টাকা

অনলাইন

এম এম মাসুদ
(২ বছর আগে) মে ১৩, ২০২১, বৃহস্পতিবার, ২:২৬ অপরাহ্ন

গত এক দশকে দেশে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এ সময়ে ঢাকাসহ সারা দেশে গড়ে উঠেছে কয়েক হাজার রেস্তোরাঁ। তবে গত বছর মহামারি করোনাভাইরাস শুরু হলে দেশের অন্যান্য খাতগুলোর মতো হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতও চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতি পোষাতে অনেকেই কর্মী ছাঁটাই করেন। আবার অনেকের রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে দেউলিয়া হয়েছে। করোনার প্রথম ডেউয়ে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে ৩০ শতাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ দেউলিয়া হয়েছে পড়েছে। আর দ্বিতীয় ডেউয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা না হলেও প্রায় ৯৯ শতাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত। সব মিলিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় ডেউয়ে সারা দেশে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো আর্থিক ক্ষতির স্বীকার হয়েছে হোটেল-রেস্তোরা সেক্টর।
বাংলাদেশ রোস্তোরাঁ মালিক সমিতির হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর করোনা উপলক্ষে সরকারের দেয়া সাধারণ ছুটির পরে জুলাইয়ের পর রেস্তোরাঁগুলো চালু করা হয়। কিন্তু জিনিসপত্রের বাড়তি দামের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন তারা। রমজানকে কেন্দ্র করে নতুন স্বপ্নের বীজ বুনতে থাকেন সবাই। ইফতারি বিক্রি ও বিভিন্ন ইফতার পার্টি, ইফতার পরবর্তী বেচাকেনা করে সারা বছরের ক্ষতি পোষায় রেস্টুরেন্টগুলো। কিন্তু এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে সারা দেশে লকডাউন শুরু হলে অন্ধকার দেখেন তারা। দুই বছর ধরে লোকসান টানতে টানতে অনেক ব্যবসায়ী এখন নিঃস্ব।
বাংলাদেশ রোস্তোরাঁ মালিক সমিতির তথ্য বলছে, রাজধানীতে প্রায় আট হাজার রেস্তোরাঁ রয়েছে। যার মধ্যে ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় সাড়ে চার হাজার। উত্তর সিটিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। রেস্তোরাঁগুলোতে সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই লাখ শ্রমিক কাজ করেন। আর রাজধানীসহ সারা দেশে ৭০-৮০ হাজার রেস্তোরাঁ রয়েছে। এতে কাজ করছেন প্রায় ২০ লাখের মতো শ্রমিক-কর্মচারী।
সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ক্রেতা না থাকায় সারা দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ রেখেছে মালিকরা। আর যে ২০ শতাংশ রেস্তোরাঁ খোলা আছে, তারাও ক্রেতা পাচ্ছে না। এর ফলে প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
রোস্তোরাঁ মালিক সমিতির তথ্য মতে, করোনার প্রথম ডেউয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ সম্পূর্ণভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। আর দ্বিতীয় ডেউয়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়নি। তবে আনুমানিক ৯৯ শতাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা লোকসানে। এ সময়ে ৯৮ শতাংশ ব্যবসায়ী বাড়ি বা দোকান ভাড়া পরিশোধ করতে পারছেন না। ভাড়া পরিশোধ না করায় বেড়েই চলেছে ঋণের বোঝা। এ কারণে হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাড়িওয়ালারা অমানবিক আচরণ করছেন বলে জানায় সমিতি।
তথ্যে আরো বলা হয়, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে ৯৮ শতাংশ ব্যবসায়ীরা। ধার-দেনা করেও বিলগুলো পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকার পরেও কর্মচারী-স্টাফদের বেতন-বোনাস দিতে হচ্ছে সম্পদ বিক্রি করে বা ধার-দেনা করে।
পার্সেল টেকওয়ে, অনলাইন ডেলিভারি হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের সংখ্যা মাত্র ২ শতাংশ, যা শুধুমাত্র শহরভিত্তিক। এদের যে বেচাকেনা তা দিয়ে স্টাফদের বেতন দেয়া যাচ্ছে না। আবার এদের থেকে ইএফডি মেশিনের মাধ্যমে ভ্যাট ট্যাক্স আদায় করছে এনবিআর। এ যেন- মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। অনলাইন ডেলিভারির কারণে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত।
ব্যবসায়ীদের ৯৮ শতাংশ ইএফডি মেশিনের আওতার বাইরে। অসম এই ভ্যাট আদায়ের সিস্টেম পরিবর্তন করে স্লাব নির্ধারণের মাধ্যমে, ৪টি ক্যাটাগরি করে, ভ্যাট আদায় করলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। অপরদিকে হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদান করতে আগ্রহী হবে। ইএফডি মেশিনকে স্বাগত জানানো যায়, তবে তা অবশ্যই ১০০ ভাগ হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসাতে হবে। সব মিলিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় ডেউয়ে বিভাগীয় ও জেলা শহরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁ সেক্টর।
বাংলাদেশ রোস্তোরাঁ মালিক সমিতি মহাসচিব ইমরান হাসান মানবজমিনকে বলেন, বহু রেস্টুরেন্ট বন্ধ হওয়ায় অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। প্রণোদনা তো দূরের কথা একটি টাকাও পায়নি। শ্রমিকরা কোনো ত্রাণও পায়নি। তাই সরকারের কাছে দাবি, বিনা জামানতে, কম সুদে এসএমই খাতের ঋণ দিন নয়তো উদ্যোক্তারা পথে বসবে। শুধু টেকওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারির পরিবর্তে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে, হোটেল রেস্তোরাঁ, তার স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী খোলা রাখতে চাই। এ খাতের শ্রমিকদের আর্থিক সাহায্যের জন্য এবং রুগ্ণ হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকদের আর্থিক সাহায্যের জন্য প্রণোদনা চাই। রেস্তোরাঁ সেক্টরকে মনিটরিং করার জন্য ১২টি সংস্থার পরিবর্তে ১টি মাত্র সংস্থা চাই। বাড়িওয়ালাদের সহনীয় আচরণ/ দেরিতে ভাড়া নেয়া বা মওকুফ করার বিষয়ে-সরকারি নির্দেশনা চাই। করোনাকালীন সময়ে, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল প্রদানে অনুরূপ সার্চ চার্জ ছাড়ের সময় চাই। হোটেল রেস্তোরাঁয় কর্মরত শ্রমিকদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টিকা প্রদান করতে হবে বলে দাবি জানান তিনি।
রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আবার গত ৫ বছরে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সব কিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু আমরা হুট করে খাবারের দাম বাড়াতে পারি না। এই ব্যবসা নিয়ে আমরা বহু বিপদে আছি। তিনি বলেন, লকডাউন আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু রেস্তোরাঁয় বসে যে ইফতার করা যাচ্ছে না, এতে বিশাল ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের সরকার প্রণোদনা দেবে বলেছে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগও করেছি। ব্যাংকেও গিয়েছি। কিন্তু কোথাও ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ব্যবসা বন্ধ থাকায় এই মানুষগুলো মহাসংকটে পড়েছে। আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। কর্মচারীরাও সংকটে পড়েছে। দেশে সবকিছু চলছে। বাজারে মানুষ চলাচল করে আর রেস্টুরেন্টে বসে মানুষ খেতে পারবে না।
রাজধানীর উত্তরার উত্তরখানে চাপের বাপ নামের একটি রেস্টুরেন্ট খোলেন আতিক। ভালো সাড়া পাওয়ায় ধীরে ধীরে এর কলেবর বাড়তে থাকে। তবে গত বছরের করোনার পর ধুঁকে ধুঁকে চলছে রেস্তোরাঁটি। আতিক বলেন, স্টাফদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। অবস্থা ভালো হলে তাদের আসতে বলেছি। কারণ ১৪ জন স্টাফ মিনিমাম ২ হাজার টাকা করে খাবার খরচ ধরলেও মাসে ৩০ হাজার টাকার বেশি আসে। তাই এখন খাবার পার্সেল, ডেলিভারিতেই চলছে। তিনি বলেন, আমরা তো কোথাও পালাতে পারছি না। গত কয়েক মাসের দোকান ভাড়া দিতে পারিনি। লোকসানের উপর দিয়ে যাচ্ছে, এভাবে কতদিন টিকে থাকতে পারবো জানা নেই।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর