নিলুফার জাহান ১৯৬৮ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। শারীরিক, পারিবারিক, সামাজিক কিংবা বন্ধুমহলের সকল অবজ্ঞা অবহেলা কাটিয়ে তিনি সফলতার স্বর্ণ-শিখরে অবস্থান করছেন।
বাবা মায়ের সাত সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় হচ্ছে নিলুফার জাহান। ছোটবেলা থেকেই মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় এক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে দীর্ঘ ৭ মাস বিছানায় পড়ে ছিলেন। অধীর আগ্রহ আর মায়ের অনুপ্ররেণায় বিছানায় শুয়েই পড়াশুনা চালিয়ে যান। পরবর্তী অসুস্থতা নিয়েও ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
শারীরিক সমস্যার কারণে যদিও স্কুলে আসা যাওয়া কষ্ট হতো তবুও তিনি নিয়মিত পড়াশুনা করেছেন। অসুস্থ শরীর নিয়ে কুমিল্লা সরকারি ফয়জুন্নেসা স্কুল থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে ১৬ স্থান অধিকার করেন।
শারীরিক সমস্যাকে নিজের সঙ্গী করে ধীরে ধীরে এভাবেই সামনে এগিয়ে যান তিনি। পরবর্তীতে কুমিল্লা উইমেন্স কলেজ থেকে ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে পড়াশুনা করেন।
তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে স্বাস্থ্যগত সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করতো। খুব কষ্ট করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতাম। তবুও কখনো ভেঙ্গে পড়েননি। লক্ষ্য অনেক দূর যেতে হবে। দমে গেলে চলবে না।
অবশেষে সব বাধা প্রতিকূলতা পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ৭ম তম হয়ে গৌরবের সঙ্গে পড়াশুনা শেষ করেন। ১৩ তম বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া পর আবারও শারীরিক সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করে। ফলে দুর্ভাগ্যক্রমে ১৩তম বিসিএস দিতে পারেননি। পরবর্তীতে ১৪ তম বিসিএস এ তিনি শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে সাতকানিয়া সরকারি কলেজে চাকরি করেন। বর্তমানে কবি নজরুল সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সমাজের বতর্মান প্রেক্ষাপট, নারীদের অবস্থান ও শিশুদের নিয়ে লেখালেখী করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রঙ্গিন অক্ষরে অঙ্কিত’ (২০১৭)। প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘তবুও সুখী’ এবং প্রথম শিশুসাহিত্য ‘পরীর বেশে ছড়ার দেশে’। তিনি বিভিন্ন প্রকাশনী কর্তৃক শিশু সাহিত্য পুরস্কার সহ নানান সম্মাননা পেয়েছেন।
সফলতার সজ্ঞায় নিলুফার জাহান বলেন, ইচ্ছে শক্তিই সফলতার মূলমন্ত্র। কখনো হতাশ হওয়া যাবে না। সকল বাঁধা উপেক্ষা করে যেকোনো মূল্যে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। আর ভাল মানুষ হতে হবে।