অনলাইন

গোপনে ভিডিওধারণ, ব্ল্যাকমেইল, অতঃপর...

শুভ্র দেব

২০২১-০৫-১৩

ঢাকার নামী-দামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাবিলা হাসান (ছদ্মনাম)। ২১ বছর বয়সী এই মেধাবী তরুণী দেখতে সুন্দর। অভিজাত পরিবারের মেয়ে। বাবা অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকতা। মা একটি স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক। বয়সের চাপে দু’জনের শরীরে অসুখ ধরেছে। এই দম্পতির একমাত্র মেয়ে নাবিলা। আর একমাত্র ছেলে কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। গুলশানের একটি বাসায় মা-বাবার সঙ্গে নাবিলা থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষেই তার ওপর চোখ পড়ে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আরেফিন সোহমের (২৭)। তারপর থেকে নানাভাবে তাকে পটানোর চেষ্টা করে সোহম। কিন্তু নাবিলা কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। নিজের পারিবারিক-সামাজিক ও লেখাপড়ার সমস্যার কথা বলে সোহমকে বুঝানোর চেষ্টা করছিলেন। নাছোড়বান্দা সোহম একের পর এক কৌশল অবলম্বন করে নাবিলাকে প্রস্তাব করে। এভাবেই কেটে যায় এক বছর। দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার পর নাবিলা নাছোড়বান্দা সোহমের প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া দিতে বাধ্য হন। শুরুতে বেশ ভালোই চলছিল তাদের প্রেমের সম্পর্ক। ক্লাস শেষে ঘুরতে যাওয়া, রেস্টুুরেন্টে খাওয়া, বিশেষ বিশেষ দিন উদযাপন, একে-অন্যকে উপহার দেয়া সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল।
এক বছরের সম্পর্ক শেষ হতে না হতে নাবিলার প্রেমিক সোহম বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চাকরি নেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে। এরইমধ্যে তাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। নাবিলাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় সোহম। নাবিলাও তাতে রাজি হয়ে যান। সোহম বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নাবিলার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। কয়েক মাসের ভেতরে তাদের মধ্য একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়। তারপর হঠাৎ করেই টুকটাক বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি শুরু হয়। মান-অভিমান ভেঙে দু’দিন পরপর তারা আবার দেখা করেন, কথা বলেন। কিন্তু না সোহম ইতিমধ্য অন্য এক তরুণীর প্রেমে পড়ে যান। সেটি বুঝতে দেরি হয়নি নাবিলার। রাতভর ফোন ওয়েটিং, দেখা করতে অনিহা। তুচ্ছ জিনিস নিয়ে অহেতুক নাবিলাকে বকাঝকা শুরু করেন সোহম। এভাবে প্রায় প্রতিদিনই তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকতো। নাবিলা তাকে নিয়ে থাকতে চাইলেও সোহম বিষয়টি এড়িয়ে যেতেন। একসময় তারা দু’জনেই সিদ্ধান্ত নেন সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটাবেন। প্রায় আনুষ্ঠানিকভাবেই সম্পর্কটা শেষ হয় তাদের।
এদিকে বিচ্ছেদের তিন মাসের মাথায় ফের সোহম নাবিলার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুনরায় যোগাযোগে নাবিলা অনিচ্ছা প্রকাশ করলে ক্ষেপে যান সোহম। নাবিলা সাফ জানিয়ে দেন তার পক্ষে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। ঘরে বাবা-মা দু’জনেই অসুস্থ। লেখাপড়ার পাশপাশি তাদেরকে সময় দিতে হয়। চিকিৎসা-ওষুধ এমনকি তাদের সেবাযতœ করতে হয়। এজন্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা তার পক্ষে অসম্ভব। সোহম সাবেক প্রেমিকা নাবিলার এসব অজুহাত মানতে পারছিল না। তাই একদিন রাতে নাবিলার ইনবক্সে একটি ভিডিও পাঠায়। সেই ভিডিও দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে যান নাবিলা। সম্পর্ক থাকাকালীন সময়ে সোহমের সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও এটি। নাবিলা তখন সঙ্গে সঙ্গে সোহমকে ফোন দিয়ে জানতে চান এসবের মানে কি। এসব ভিডিও সে কীভাবে করেছে। অবশ্য নাবিলার বুঝতে বাকি ছিল না ব্ল্যাকমেইল করার জন্য হয়তো সোহম এসব ভিডিও গোপনে ধারণ করেছে। একই সঙ্গে নাবিলার শেয়ার করা ব্যক্তিগত কিছু বিশেষ ছবিও সোহম তাকে পাঠায়। সোহমের দাবি ফের তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে হবে। না হলে নাবিলার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এমনকি পর্নোসাইটে এসব ভিডিও ছবি ছেড়ে দেয়া হবে।
নাবিলা তার প্রেমিককে নানাভাবে অনুনয়-বিনয়, কাকুতি-মিনতি করে বুঝানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সোহম এসব কথায় কর্ণপাত করেননি। তার এককথা শারীরিক সম্পর্ক করতে হবে। যখন বলবে তখনই তার সঙ্গে মিলিত হতে হবে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে নাবিলা ফের তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। নাবিলা বুঝতে পারেন প্রেমিক সোহমের সঙ্গে যেভাবে আগে মিলিত হয়েছিলেন এখন ঠিক এমনটি হচ্ছে না। শারীরিক সম্পর্কের নামে রীতিমতো অত্যাচার করছিল সোহম। বিছানায় নানাভাবে নিজের বিকৃত রুচির পরিচয় দেন সোহম। নিজের দুর্বলতার জন্য সেটি মেনে নিচ্ছিলেন নাবিলা। ঘরে অসুস্থ মা-বাবাকে রেখে সাবেক প্রেমিকের যৌন লালসা মেটাচ্ছিলেন। সোহমের এসব অত্যচার এখানেই থামেনি। কিছুদিন পর সোহম নাবিলাকে আরও জঘন্য একটি প্রস্তাব করে বসে। তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে হবে। এ সম্পর্কে জড়াতে নাবিলা অপারগতা প্রকাশ করলে সোহম হুমকি দেয় পর্নোসাইটে গোপন ভিডিও ছবি ছেড়ে দিবে। তবুও রাজি হননি নাবিলা। ক্ষুব্ধ সোহম তখন নাবিলার এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর কাছে একটি ভিডিও পাঠান। সেই বান্ধবী এসব বিষয়ে নাবিলাকে জিজ্ঞেস করেন। নিজের সম্মান বাঁচাতে নাবিলা নরপশু প্রেমিকের জঘন্য কু-প্রস্তাবেও রাজি হয়ে যান। দুই বন্ধুর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নাবিলা একসময় ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একাউন্ট বন্ধ করে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। তবুও রেহাই মিলেনি। একদিন বাসায় এসে হাজির হয়ে সোহম হুমকি-ধমকি দিতে থাকে।
নাবিলা বলেন, আমার হাত-পা বাঁধা। গোপনে সেই ভিডিও করে সেগুলোই দিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে। আমি ভুল করে আমার কিছু ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করেছিলাম। সেগুলোও এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গিয়েছিলাম। তারা বলেছেন আপাতত জিডি করার জন্য। পরে মামলা করতে হবে। আমি তাতে রাজি হইনি। মামলা হলে লোক জানাজানি হবে। এছাড়া মামলা করলে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে। ঘরে অসুস্থ মা-বাবা। তারা যদি এসব বিষয়ে জানে তাহলে তাদের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হবে। আমার এক বান্ধবীর মাধ্যমে সোহমকে বুঝানোর চেষ্টা চলছে। আশাকরি তার অত্যাচার থেকে মুক্তি পাবো।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status