টিভি রোগে আক্রান্ত হয়ে গত দু’মাস ধরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার লিয়াকত হোসেন (৫৭)। এবারের ঈদ তাকে হাসপাতালেই কাটাতে হবে। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারের ঈদ আর তাকে ছুঁয়ে যাবে না। হয়তো সুস্থ হওয়ার প্রবল ইচ্ছাটাই তাকে ঈদের আনন্দ কিছুটা হলেও ভুলিয়ে রাখবে। তার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরাটাই হবে এবার পরিবারের কাছে ঈদের আনন্দের মতো।
লিয়াকত হোসেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের দুই নম্বর ওয়ার্ডের অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জারি বিভাগের ২৪ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি জানান, স্ত্রী এবং চার ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। জীবনের অর্ধেক সময় কেটেছে প্রবাসে।
দেশে ফেরার কিছুদিনের মধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে জানতে পারেন টিভি রোগে আক্রান্ত। কথা বলার একপর্যায়ে কেঁদে দু’চোখ ভেজান তিনি। বালিশের কোণে মুখ লুকিয়ে বলতে থাকেন হাসপাতালে থাকতে আর ভালোলাগেনা। ইচ্ছা হয় উড়াল দিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে চলে যাই। কিন্তু ঈদের আগে আর বাড়িতে যাওয়া হবে না তার। এই রোগ সারতে আরো অনেকদিন হাসপাতালে থাকতে হবে তাকে। তিনি আরো জানান, অনেক বেশি মন খারাপ হচ্ছে পরিবারের জন্য। সারাজীবন বিদেশের মাটিতে কাটিয়ে দিয়েছি। এখন পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে ঈদের দিন কাটাবো সেটিও হলো না। ছোট ছেলেটি আমার সঙ্গে হাসপাতালে থাকে। ঈদের দিন পরিবারেরও সবার মন খারাপ থাকবে। আমাকে হাসপাতালে রেখে তাদের ঈদও এবার হবে না। আমার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়াটাই হবে তাদের কাছে এবার ঈদের আনন্দ।
শুধু লিয়াকত হোসেন নয়, এ রকম শত শত মানুষের ঈদ কাটবে হাসপাতালের বিছানায়। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসারত রোগীদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা যায়।
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের কোভিড-১৯ এর ১ নম্বর ওয়ার্ডে দুই সপ্তাহ ধরে করোনার চিকিৎসা নিচ্ছেন সোবহান মিয়া। তিনি একটি মামলার আসামি। কাশিমপুর কারাগার থেকে তাকে এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমার আবার ঈদ কিসের। একটি মামলায় জেল খাটতে খাটতে জীবন পার করছি। এরমধ্যে আবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। শরীরে কোনো জটিলতা নেই। সুস্থ হলে এখান থেকে আবার জেলে গিয়ে বন্দি জীবন-যাপন করতে হবে। এবার ঈদের খুশি আমাকে আর ছুঁয়ে যাবে না।
রাজধানীর সায়েদাবাদে বন্ধুদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন রাজু। ঘটনার এক পর্যায়ে বন্ধুদের দেয়া লাঠির আঘাতে তার মাথা ফেটে যায়। শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে ভর্তি হন তিনি। রোগীর বড় ভাই সাজু বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে মারামারি করে তার মাথা ফেটে যায়। হাসপাতালেই তাকে কাটাতে হবে এবারের ঈদের আনন্দ।
মিরাজুল ইসলাম একটি জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য বাগেরহাটের রামপাল থেকে ঢাকায় আসেন। ইবনে সিনা হাসপাতাল থেকে তাকে করোনা টেস্ট করার জন্য বলা হয়। ডাক্তারের কথা অনুযায়ী তিনি করোনা টেস্ট করান। ফলাফল পজেটিভ আসে। মিরাজুলের স্ত্রী রাবেয়া বেগম বলেন, করোনা পজেটিভ আসার পর ২৮ তারিখে ঢাকা মেডিকেলের কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড ইউনিটে তাকে ভর্তি করানো হয়। তিনি সুস্থ আছেন। শরীরে কোনো ধরনের জটিলতা নেই। মাঝে মাঝে একটু শাসকষ্ট দেখা যায়। ঈদের আগে আর বাড়িতে যাওয়া হবে না আমাদের। হাসপাতালেই এবার ঈদ কাটাতে হবে। অসুস্থ মানুষ নিয়ে এত ভিড়ের মধ্যে যাওয়াটা আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। ঈদের আনন্দের চেয়ে তার সুস্থ হওয়াটা জরুরি।