অনলাইন

চিকিৎসার জন্য ভারতে থাকা বাংলাদেশিদের ভয়ঙ্কর সময়

পিয়াস সরকার

২০২১-০৫-১৫

করোনার সংক্রমণ  ও মৃত্যুর মিছিলে দিশেহারা প্রতিবেশী ভারত। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ দেশটিতে যান উন্নত চিকিৎসার জন্য। সেবা নিতে যাওয়া রোগী ও স্বজনরা ভয়ঙ্কর এই পরিস্থিতিতে শঙ্কায় সময় পার করছেন। কেমন কাটলো তাদের ঈদ?

চেন্নাইয়ের ভেলরে খ্রীস্টিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত আছেন আজিজুর রহমান চৌধুরী। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও দুই ছেলে। প্রায় চার মাস যাবৎ সেখানেই অবস্থান তাদের। বড় ছেলে সজীব চৌধুরী বলেন, বাবার কেমো থেরাপি চলছে। হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের ভয়ঙ্কর  হাল। করোনা আক্রান্ত ছাড়া অন্যান্য রোগীদেরও খুব সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে হাসপাতালের বাইরে গেলে মনেই হয়না দেশটার অবস্থা এতো খারাপ। পুলিশের দেখা পেলে মানুষ মাস্ক পরে, অন্য সময় মাস্ক ছাড়াই চলাফেরা তাদের।

ঈদের নামাজটাও আদায় করবার সুযোগ মেলেনি সজীবের। তিনি বলেন, সারারাত হাসপাতালে ছিলাম। ভোরে আমার ছোট ভাই হাসপাতালে আসে। আামি ভাড়া বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে যাই। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নামাজ আদায় করতে পারিনি। এবারের ঈদটা স্বাভাবিক আট-দশটা দিনের মতো আমার কাছে।

একই হাসপাতালে ব্ল্যাড ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিনের চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছেন আদিত্য রহমান। এই পরিবারটি ডিসেম্বরে সেখানে যায়। আদিত্য বলেন, আমার স্ত্রী প্রায় সুস্থ। কেমো থেরাপি দেয়া সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে আমরা দুজনই করোনায় আক্রান্ত হই। ও (তার স্ত্রী) আগে থেকেই হাসপাতালে ছিলো এরপর দুইজনকেই করোনা ইউনিটে নেয়া হয়। এখন দুজনই নেগেটিভ।

তার স্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। ঈদের দিনটা কেমন কাটলো? এর উত্তরে তিনি বলেন, একটা মসজিদে নামাজ পড়েছি। এটাই ঈদ। সার্বক্ষণিক ভয়ের মাঝে আছি। নামাজ পড়তেও হয়তো যেতাম না আমার স্ত্রী বারবার বলাতে গিয়েছি। দিনটা বিশেষ কোন খাবার না খেলেও সবার সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেই কেটেছে।

দিল্লির একটি হাসপাতালে বিছানায় শুয়ে জানতে পেরেছেন বাবার মৃত্যুর সংবাদ। ঈদের দিনে এমন সংবাদ শুনে মুর্ছা গেছেন বারবার। রংপুরের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি হাতের চিকিৎসা করাতে গেছেন সেখানে। এই শিক্ষক বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় হাত ভেঙ্গে যায় আমার। দেশে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করানোর পর উন্নত চিকিৎসার জন্য দিল্লিতে আসি। আমার বাবা মারা গিয়েছেন ১০ই মে। সংবাদটি আমার কাছে লুকিয়ে রেখেছিলেন আমার সঙ্গে থাকা স্ত্রী। ঈদের দিন জানতে পারি। এবার বোঝেন বাবার মুত্যুর খবর শুনেছি ঈদের দিন, কেমন কেটেছে আমার ঈদ?

মাকে শেষ দেখা দেখতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন নিরঞ্জণ চন্দ্র সাহা। এখন ভর্তি হাসপাতালে। তিনি বলেন, কলকাতায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন তার মা-বাবা। এরপর করোনা আক্রান্ত হয়ে মায়ের মৃত্যু হয়। আমি মাকে দেখতে যাই। এরপর কড়াকড়ি দেয়া হয় সীমান্তে। বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় আছি। বাবাও যেতে পারছেন না। করোনা আক্রান্ত অবস্থাতেও তিনি ঈদের শুভেচ্ছা জানান, দেশে থাকা সকল মুসলিম বন্ধু ও পরিচিতদের।

মায়ের চিকিৎসার জন্য ভেলরে গিয়েছিলেন সিদরাতুল মুরসালিন ভাষা। ব্ল্যাড ক্যান্সারে আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হন বাবা নজরুল ইসলাম বকশি। আর সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। আক্রান্ত হয়েছিলেন ভাষার মা লুৎফা বকশিও। বাবাকে হারানো দুই সন্তান ভেলরে অবস্থান করছেন মায়ের পাশে। ভাষা বলেন, মা এখন করোনা মুক্ত। ১০দিনের কোয়ারেন্টিনে আছে মা। এরপর আবার কেমো থেরাপি দেয়া শুরু হবে।

ভাষা আরো বলেন, ঈদের দিন যে গেছে টেরই পাইনি। আর এখানে লকডাউন দেয়া হয় দুপুর ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত। আর মুসলিমদের সংখ্যা কম থাকায় কোথা দিয়ে ঈদ গেলো বুঝতেই পারিনি।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status