× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাইডেন প্রশাসন মানবিক বিবেচনায় নয়, ইসরাইলি লবির প্রভাবে পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেছে

মত-মতান্তর

অধ্যাপক আলী রীয়াজ
১৭ মে ২০২১, সোমবার

গাজায় ইসরাইলের হামলা অব্যাহত আছে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে। এই হামলায় নিহত হচ্ছেন ফিলিস্তিনি নাগরিকরা, যার মধ্যে শিশুদের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৫৫ জন ছাড়িয়েছে। নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন বেসামরিক ব্যক্তিরা, বিমান আক্রমণের লক্ষ্যবস্ত থেকে গণমাধ্যম বাদ যায়নি। একই ভবনের সাতটি গণমাধ্যমের অফিস, স্টুডিও গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর বিপরীতে গাজা থেকে হামাসের রকেট নিক্ষেপ অব্যাহত আছে।

২০১৪ সালের পরে গাজায় এতো বড় আকারের হামলা হয়নি। হতাহতের সংখ্যা বাড়ছেই। ২০১৪ সালে ৫০ দিন এই হামলা চলেছে।
এক বছর পরে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বিবাদমান দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিলো। কিন্ত হতাহতের সংখ্যা থেকেই বোঝা যায়, কার দায় কতটুকু। ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছিলেন ২২৫১ জন, যার মধ্যে বেসামরিক ব্যক্তি ছিলো ১৪৬২ জন; অন্যদিকে ইসরাইলের ৬৭ জন সৈন্য এবং ৬ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছিলো।

এই দফায় আর কত দিন এই হামলা চলবে তা বলা মুশকিল। ইসরাইলের এই আগ্রাসী হামলা আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠি প্রদর্শন; অথচ আন্তর্জাতিক সমাজের কোন প্রতিক্রিয়া নেই। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে কোনও উদ্যোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের অতীতের ধারাবাহিকতায় ইসরাইলের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়ে কার্যত ইসরাইলের এই অমানবিক অপরাধের ভাগীদার হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ভিন্ন কোনও ভূমিকা নেবেন বলে যারা আশা করেছিলেন তাঁরা হতাশ হয়েছেন। কিন্ত মার্কিন রাজনীতির কাঠামো এবং ইসরাইল বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির সঙ্গে যারা পরিচিত তাঁরা এটা সহজেই অনুমান করতে পেরেছিলেন যে, বাইডেনের পক্ষে নতুন কোন ধরণের নীতি গ্রহণ করা সম্ভব হবেনা।

যে যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ইসরাইলকে প্রায় ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার সামরিক সাহায্য দেয় এবং যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে, মিসাইল প্রতিরক্ষা গবেষণায় ব্যয় করে সেই যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের ওপর কোনও প্রভাব বিস্তার করতে পারে তা নয়, বরঞ্চ ঘটে উল্টোটা। এখানে ইসরাইল লবির প্রভাব এতটাই যে, ফিলিস্তিনিদের জমি দখল থেকে বাস্তচ্যুত করা, তাঁদের ওপরে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া, নির্যাতন-নিপীড়ন অব্যাহত রাখা স্বত্বেও এই সাহায্যের ব্যত্যয় ঘটানো সম্ভব হয়নি। ফলে বাইডেন প্রশাসন এই আক্রমণের সময় মানবিক বিবেচনা দিয়ে প্রভাবিত হয়নি, ইসরাইলি লবির প্রভাবে তৈরি পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করেছে।

২০১৬ সালে ইসরাইলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাক্ষরিত সহযোগিতা স্মারকে বলা হয়েছে, আগামী দশ বছরে যুক্তরাষ্ট্র ৩৩ বিলিয়ন ডলার দেবে; আর ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে। কিন্ত এই ধরণের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে অতীতে মূলধারার রাজনীতিতে প্রশ্ন না উঠলেও গত বছর থেকে এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গাজায় হামলার বিরুদ্ধে কংগ্রেসে ইসরাইলের সমালোচনা হয়েছে এবং বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিনেট এবং হাউসের সদস্যদের মধ্যে অনেকেই দাবি তুলেছেন বাইডেন প্রশাসন যেন আরও সক্রিয় ভূমিকা নেয়। ডেমোক্রেটদের একাংশ এই নিয়ে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবেই অবস্থান নিয়েছে। সিনেটের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান রবার্ট মেনেনডেজ গতকাল একটি বিবৃতিতে ইসরাইলের যে সমালোচনা করেছেন তা আগে কখনোই দেখা যায়নি।

হোয়াইট হাউস থেকে বলা হচ্ছে, দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্ততা করার জন্যে ইতিমধ্যেই হেডি এমির ইসরাইল পৌঁছেছেন। কিন্ত তাঁর পক্ষে যে কোনও ধরণের মধ্যস্ততার সুযোগ নেই, কেননা হামাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ধরণের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই, মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনায় কোনও ফলোদয় হবেনা। অন্যদিকে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর উদ্দেশ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এই সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখবে। তদুপরি যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে আগে যেমন মধ্যস্ততাকারী ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে তেমনি এবারও কোনও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে না। কেননা যুক্তরাষ্ট্র এখানে ইসরাইলের স্বার্থের প্রতিনিধিত্বই করে। ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যেকার চাপে আশু এই নীতি বদলাবে না। তবে আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে এখন ফিলিস্তিনীদের প্রতি সমর্থন বাড়ছে। ইসরাইলের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে।

এই সংকটে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ইউরোপের দেশগুলো যারা অতীতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সরব এবং সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে তারাও এখন অবধি সমন্বিত কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি। মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠক ডাকা হয়েছে। কিন্ত সেই বৈঠকের ফলে ইসরাইলের হামলা বন্ধ হবে, কিংবা হামাসের পক্ষ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে বিরতি দেয়া হবে এমন আশাবাদের কোনও কারণ দেখিনা। যার অর্থ হচ্ছে, আরও প্রাণনাশ ঘটবে। দীর্ঘ মেয়াদে তা না ইসরাইলের জন্যে, না যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে ইতিবাচক কিন্ত এই দুই দেশের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে সেই বোধোদয় নেই। ফিলিস্তিনিদের এই অবস্থার অবসান কবে হবে কেউ তা বলতে পারেনা।

আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট।

(লেখাটি লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর