মঙ্গলবার ২২ জানুয়ারি ২০০৮ দিন ২৮৫আমি আগেই যা বলেছিলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় শেষ পর্যন্ত সরকারের আত্মসমর্পণ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। এখন পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটিয়ে তারা তা-ই করতে যাচ্ছেন। মামলা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন অধ্যাপক ও ১১ জন ছাত্রকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এর আগে পলাতক চারজন ছাত্রকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা প্রদর্শন করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন ছাত্রকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তদন্তাধীন মামলাগুলো করা হয়েছে প্রত্যাহার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের ৫ মাস ধরে জেলে রাখার ক্ষত এতো সহজে শুকাবার নয়।
পরিস্থিতির এখনো পুরোপুরি সমাধান ঘটেনি। সামরিক যানবাহন পোড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত সকল ছাত্র এখনো খালাস পায়নি।
সরকারের বাহিনীসমূহের সমন্বয়ের অভাবে এখন এই বিষয়টি পরিণত হয়েছে তামাশায় এবং দুর্ভোগের শিকার হয়েছে শিক্ষক ও শত শত শিক্ষার্থী।
বুধবার ২৩ জানুয়ারি ২০০৮ দিন ২৮৬জরুরি আইনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শহীদ মিনারে শিক্ষক ও ছাত্রদের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা বলেছেন, স্থগিত ঘোষিত মামলাসমূহ থেকে সকল ছাত্রের অব্যাহতি ও সাজাপ্রাপ্তদের সাজা প্রত্যাহার না করা অবধি তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বেশি বেশি কথা বলেন। প্রত্যেক দিন তাদেরকে টিভি চ্যানেল ও খবরের কাগজের পাতায় আসা চাই। তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের কথা বিবেচনায় রেখে তাদের উচিত জনগণের দৃষ্টির বাইরে থাকা, কম কথা বলা ও বেশি কাজ করা।
বৃহস্পতিবার ২৪ জানুয়ারি ২০০৮ দিন ২৮৭দাঁতের চিকিৎসার জন্য আমি গিয়েছিলাম পিজি হাসপাতালে।
আমিসহ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে প্রচারমাধ্যমগুলো এখনো তাদের চরিত্রহননের খেলা চালিয়ে যাচ্ছে। আজ দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় ৬ কলামব্যাপী হেডলাইনে বলা হয়েছে, যে বাড়িটিতে আমি গত ২৮ বছর ধরে বাস করছি তা সরকারের এবং আমি তা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছি। বিশাল এক সংবাদ- কেবলমাত্র জনসমক্ষে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই বাড়ির ছবিসমেত দুরভিসন্ধিমূলক, মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদটি প্রকাশ করা হয়েছে। জেলখানা থেকে আমি এর কোনো প্রতিবাদ করতে পারছি না বা মানহানির জন্য ক্ষতিপূরণের মামলাও দায়ের করতে পারছি না।
দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় কয়েকজন রাজনীতিবিদের ছবিসহ একটি সংবাদে আজ প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তারা কেন ঘনঘন অসুস্থ হচ্ছেন এবং তাদের কেন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সেখানে প্রথমেই স্থান পেয়েছে আমার একটি ছবি, কিন্তু আমার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা নিয়মিত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন, তাদের নিয়ে কোনো ছবি বা খবর বের করা হয়নি। এতে বোঝা যায়, অবৈধ একটি সরকারকে খুশি করতে গিয়ে একটি সংবাদপত্র কী পরিমাণে নিজেদের দুর্বলতা প্রদর্শন করতে পারে।
শুক্রবার ২৫ জানুয়ারি ২০০৮ দিন ২৮৮এক ধরনের শৈত্যপ্রবাহ চলছে। শীত এখন আমার একেবারেই সহ্য হয় না। আমার অসুখ বেড়ে যায়। উপরন্তু, দু’দিন ধরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।
মৃত্যুর খবর সংবাদপত্রসমূহে প্রকাশিত হচ্ছে, কিন্তু আসলে মানুষ মারা যাচ্ছে অনাহারে। প্রায় ছয় কোটি লোক বাস করে দারিদ্র্যসীমার নিচে যার মধ্যে দুই কোটি লোক নিপতিত চরমতম দারিদ্র্যে, যাদের বাঁচার কোনো অবলম্বনই নেই। ওদের জন্য কথা বলার কে আছে?
টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে আজ শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমা। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এ ধর্মীয় মহাসম্মেলনে সারা বিশ্বের প্রায় ২০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান। মোনাজাতে শরিক হন। তারা সবাই আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চান।
শনিবার ২৬ জানুয়ারি ২০০৮ দিন ২৮৯বৃষ্টি এবং শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। দু’দিন ধরে পানি-বিদ্যুৎ নেই। কল্পনাতীত অসুবিধা ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের, কিন্তু এ দুর্দশা লাঘবে জেল কর্তৃপক্ষের বিন্দুমাত্র টনক নড়ছে না। মোমবাতির আলোতে সব কাজকর্ম সারতে হচ্ছে।
আজ দর্শনার্থীদের আসার দিন। সারা সপ্তাহ আমি এই দিনটির অপেক্ষায় থাকি। আমি খোকনকে বলেছি দৈনিক যুগান্তরের বিরুদ্ধে একটা মানহানির মামলা রুজু করতে। যারা আমাকে দেখতে এসেছে ভেতরে ঢোকার এবং বাইরে বের হবার সময় তাদের তন্ন তন্ন করে তল্লাশি করা হয়েছে।
রবিবার ২৭ জানুয়ারি ২০০৮ দিন ২৯০সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ডেভস ইকোনমিক ফোরামে ১৯৯০ সালে আমি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম। দুঃখজনকভাবে, এ বছর প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদকে আমেরিকার তাঁবেদার তিন দেশ ইরাক, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে একটি প্যানেলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দেশগুলোর মূল নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তালেবান ও ইসলামী সন্ত্রাসবাদীরা- কনফারেন্সের প্রাথমিক এজেন্ডা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কাঠামো বিশ্লেষণের সঙ্গে যাদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। অথচ আমার মনে পড়ে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের স্থান ছিল বিশ্বের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় দেশের নেতাদের সঙ্গে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল, বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে তা বিশ্লেষণ করে আমি একটি প্রতিবেদন পেশ করেছিলাম যা উপস্থাপনের পর সহর্ষ করতালির মাধ্যমে। আমার ধারণাকে অভিনন্দিত করা হয়েছিল।
দৈনিক যুগান্তরে আমার বসতবাড়ি নিয়ে প্রচারিত মিথ্যা ও বানোয়াট খবরটি এখন ধারাবাহিকভাবে দৈনিক ইত্তেফাক, ডেইলি স্টার ও অন্যান্য পত্রিকায়ও প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের নিজেদের করা রিপোর্ট থেকেই এখন স্পষ্টত প্রতীয়মান হচ্ছে যে, বাড়িটি সরকারের কোনো সম্পত্তি নয়। ইংল্যান্ডে বসবাসকারী আমার ভাই বাড়িটির মালিক।
সোমবার ২৮ জানুয়ারি ২০০৮ দিন ২৯১দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিতে গতকাল বিদ্যুৎ ছিল না। এর ফলে কেবলমাত্র অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, দেশের ভাবমূর্তিও প্রবলভাবে বিনষ্ট হয়েছে। হাজার হাজার যাত্রী হয়েছেন অবর্ণনীয় দুর্দশার শিকার। বিদেশী এয়ারলাইন্সসহ আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো হয়েছে বিলম্বিত।
আমি এখন বাংলাদেশে গণতন্ত্র বইটি লেখার কাজ প্রায় শেষ করে এনেছি। ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনটি গণতান্ত্রিক শাসনামলের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই বইটিতে।
মঙ্গলবার ২৯ জানুয়ারি ২০০৮ দিন ২৯২মিথ্যা, বানোয়াট, চাঞ্চল্যকর, কুরুচিপূর্ণ ইয়োলো জার্নালিজম এখন চরমে পৌঁছেছে। সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় এসব খবর প্রকাশ করা হচ্ছে। আমাদের গুলশানের বাড়িটি খালি থাকায় তার ওপর কতিপয় জেনারেলের লোভাতুর দৃষ্টি পড়েছে। সম্ভব হলে বাড়িটির দখল নিতে চাইছে তারা।
মানবজমিন পত্রিকায় মার্কিন পত্রিকা নিউজ উইককে উদ্ধৃত করে কীভাবে দেশের জনগণ দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের ভোট দিয়ে থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরো কতিপয় দেশে ক্ষমতাসীন করেছে সে বিষয়ে এক সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
বুধবার ৩০ জানুয়ারি ২০০৮ দিন ২৯৩মোস্তফা কামাল নামে একজন মেজরের নেতৃতে টাস্কফোর্সের একটি টিম নাইকো মামলা সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসেছিল। আগের মতো আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম আইনের কোন বিধানবলে তারা আমাকে জিজ্ঞেস করতে এসেছে- কিন্তু তারা এ ব্যাপারে আমাকে কিছু বলতে পারেনি। আমি দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ১১নং ধারা উল্লেখ করে ওদের বলেছি, এর জন্য আমাকে অভিযোগসহ লিখিত নোটিশ দিতে হবে এবং আমাকে আমার আইনজীবীর উপস্থিতিতে লিখিতভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দিতে হবে। এরপরই তারা চলে যায় এবং পরবর্তীতে আর তাদের দেখা পাইনি।
(চলবে...)