সাকিব আল হাসান যেন দেশের ক্রিকেটে ঝড়ের নাম। মাঠে কিংবা বাইরে নাম-খ্যাতির সঙ্গে বিতর্ক চলে সমান তালে। চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে তিনি যখন মোহামেডানের হয়ে মাঠে তখন থেকেই শুরু হয় নানা গুঞ্জন। তবে কারো চিন্তাতেই ছিল না এত বড় ঘটনার জন্ম দেবেন তিনি। শুক্রবার আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে তার বলে এলবিডাব্লিউর আবেদন করেন। কিন্তু ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীমকে আউট দিলেন না আম্পায়ার। ব্যাস! লাথি মেরে স্টাম্প ভেঙে দিলেন সাকিব! একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করলেন কিছুক্ষণ পর, এবার দুই হাত দিয়ে স্টাম্প উপড়ে তুলে নিলেন। এমন ঘটনায় শাস্তি হবে সেটাতো নিশ্চিত ছিল, হলোও তাই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিস (সিসিডিএম) ম্যাচ রেফারির সুপারিশে ৩ ম্যাচ নিষিদ্ধ ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে।
এমন শাস্তি মেনেও নিয়েছেন দেশের সেরা এই অলরাউন্ডার। তবে তার ক্লাব চুপ থাকছে না। এরই মধ্যে বিসিবির সভাপতি বরাবর আবেদন জানিয়েছে শাস্তি মওকুফের। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এই চিঠি নিয়ে বিসিবির পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়নি। এ বিষয়ে বিসিবির মিডিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস দৈনিক মানবজমিনেকে বলেন, ‘আমরা চিঠি নিয়ে এখনো কিছু জানি না। শাস্তি মওকুফ হবে কিনা এ নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। বিসিবি সভাপতি বরাবর চিঠি। আমরা কিছু বলতে পারবো না।’ অন্যদিকে আজ মোহামেডান ক্লাব সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। তবে সেখানে সাকিব উপস্থিত না থাকলেও তার লিখিত মতামত তুলে ধরা হবে বলে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে মোহামেডানের ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘যেহেতু সাকিব আল হাসান বায়ো বাবলে আছেন, তার সংবাদ সম্মেলনে থাকার কোনো কারণ নেই। তবে তার পক্ষ থেকে ক্লাবের দায়িত্বশীল কেউ লিখিত বক্তব্য তুলে ধরবেন। এছাড়াও ভিডিও কনফারেন্সেও কথা বলতে পারেন।’ শাস্তির পর গতকাল অষ্টম রাউন্ডে নিয়মিত অধিনায়ককে ছাড়াই মাঠে নামে মোহামেডান। তার পরিবর্তে নেতৃত্ব দেন শুভাগত হোম। আবাহনীর সঙ্গে বিতর্কের ম্যাচ বৃষ্টি আইনে জিতেছিল সাকিবের দল। গতকালও বিকেএসপিতে ডিওএইচএসের বিপক্ষে বৃষ্টি আইনে জয় পায় দলটি। এরই মধ্যে ১০ পয়েন্ট নিয়ে দলটির অবস্থান তালিকার চার নম্বরে। শেষ তিন ম্যাচের দুটি জিতলেই তাদের সুপার লীগে খেলা নিশ্চিত হয়ে যাবে।
অন্যদিকে গতকাল মোহামেডান ক্লাবের পক্ষ থেকে বিসিবি’র সভাপতি বরাবর চিঠিতে আর্থিক জরিমানা বহাল রেখে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মোহামেডান অধিনায়ক ‘জনাব সাকিব আল হাসান গভীরভাবে অনুতপ্ত’ উল্লেখ করে বিসিবি সভাপতিকে দেয়া চিঠিতে মোহামেডানের ডাইরেক্টর ইন-চার্জ অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি লিখেছেন, ‘বিসিবির খেলোয়াড় শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে সাকিব আল হাসানের ওপর আনিত শাস্তির অর্থদণ্ড বহাল রেখে ৩ ম্যাচ খেলা থেকে বিরতি থাকার বিষয়টি প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’ চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, ‘বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন টি-টোয়েন্টি লীগে বাকি খেলাগুলো চলাকালে সাকিব আল হাসানের এরূপ ঘটনার ন্যুনতম পুনরাবৃত্তি হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে (স্থগিত নিষেধাজ্ঞা) তার শাস্তি বহাল থাকবে।’ এ বিষয়ে ক্লাবের ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সাকিবের শাস্তি মওকুফের জন্য আবেদন করেছি। বিসিবি যদি চায় তাকে খেলার সুযোগ দিতে পারে। যদি শাস্তি মওকুফ নাও করে তাহলে সেটি কিছুদিন পর কার্যকর হয়।’ অন্যদিকে এই চিঠি পাওয়ার বিষয়ে সিসিডিএমের সদস্য সচিব আলী হোসেন বলেন, ‘আমরা চিঠিটা পেয়েছি। আমাদের কাছে চিঠি পাঠালেও এটা সিসিডিএম বরাবর দেয়া হয়নি। মোহামেডান কর্তৃপক্ষ বিসিবি সভাপতি বরাবর আবেদন করেছে। তাই এটা আর আমাদের হাতে নেই। এটা এখন বিসিবির সিদ্ধান্ত। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’