× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

তিন কারণে বাড়ছে রেমিট্যান্স

দেশ বিদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৪ জুন ২০২১, সোমবার

করোনা মহামারির মধ্যেও রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৭০ লাখ (২২.৮৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এই রেমিট্যান্স ৩৯.৪৯ শতাংশ বেশি। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আসেনি। এভাবে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণ হিসেবে মোটা দাগে তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এ ছাড়া আরও কয়েকটি কারণে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির ধারা বেড়েছে বলে জানান তারা। প্রধান কারণগুলো হলো- প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে সরকারের প্রণোদনা। হুন্ডির পরিবর্তে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স আহরণ এবং প্রবাসীরা করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক মন্দায় চাকরি হারানোর কারণে সব সঞ্চিত অর্থ দেশে প্রেরণ করছেন।
তবে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। মহামারির কারণে রেমিট্যান্স কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হলেও বাস্তবে তা ঘটেনি। মহামারির আঁচ বিশ্বের অর্থনীতিতে লাগার পর বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছিল, কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার রেমিট্যান্স ২২ শতাংশ কমবে। বাংলাদেশে কমবে ২০ শতাংশ। তবে দেখা গেছে, পাশের দেশ ভারতে ৩২ শতাংশ হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৮.৬৬ শতাংশ।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, প্রবাসীদের বেশির ভাগই দেশে পরিবার-পরিজন রেখে যান। তাই তারা বিদেশে যা আয় করেন, তার সবই দেশে পাঠিয়ে দেন। এ ছাড়া ঈদের সময়টাতে বিদেশ থেকে যাকাতের টাকা এসেছে। আবার কেউ কেউ অনুদানও পাঠিয়েছেন। এই কারণে দেশে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে। এ ছাড়া প্রবাসী আয় বিতরণে এখন ব্যাপকভাবে এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে বিদেশ থেকে দেশে আসা অর্থ বিতরণ আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। আবার করোনার কারণে বিদেশে যাতায়াত সীমিত হয়ে পড়ায় বৈধ পথেই এখন বেশি আয় আসছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত মে মাসে ঈদ থাকায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। এ ছাড়া গত অর্থবছর থেকে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহতভাবে বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথম ১১ মাসে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ২,২৮৩ কোটি ৭০ লাখ (১ ডলার =৮৫ টাকা ধরে) ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ১১৪ কোটি টাকা)। এর মধ্যে প্রবাসী আয় পাঠানোর শীর্ষে থাকা ১০ দেশ থেকে এসেছে ২ হাজার ১৯ কোটি ৮ লাখ ডলার, যা মোট রেমিট্যান্সের ৮৮.৪১ শতাংশ। তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৬৩৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে চলতি অর্থবছরে ১১ মাসে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯.৪৯ শতাংশ।   
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূলত তিন কারণে দেশের রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। প্রথমত, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে সরকারের প্রণোদনা। দ্বিতীয়ত; হুন্ডির পরিবর্তে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স আহরণ। তৃতীয়ত; করোনাকালীন দেশে থাকা পরিবারের জন্য আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স পাঠানো। তবে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
প্রবাসী আয় পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো- সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, ওমান, কাতার, ইতালি ও সিঙ্গাপুর। এর মধ্যে শীর্ষ ৫ দেশ থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১,৪৪৭ কোটি ৫৮ লাখ ডলার বা ৬৩.৩৮ শতাংশ। শুধু মধ্যপ্রাচ্যের ৫ দেশ থেকে এসেছে ১,১৯৮ কোটি বা প্রায় ৫২.৪৬ শতাংশ।
অর্থবছরের ১০ মাসে রেমিট্যান্স আহরণের দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩১৬ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। তৃতীয় স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। চতুর্থ স্থানে থাকা মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯০ কোটি ডলার, পঞ্চম দেশ যুক্তরাজ্য থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮৭ কোটি ৯৮ লাখ ডলার।
সূত্র জানায়, বিশ্বের ১৬৮ দেশে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন। বাংলাদেশের প্রবাসীদের সব চেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। আর এই দেশটি থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে দেশটি থেকে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৫২৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার, যা মোট আহরিত রেমিট্যান্সের ২৩ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮.২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। অর্থবছর হিসাবে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণের রেকর্ড হয়। ওই সময় ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১লা জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১শ’ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন সুবিধাভোগী। এ ছাড়া ঈদ ও উৎসবে বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি এক শতাংশ দেয়ার অফার দিচ্ছে। এতে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসীরা।
এদিকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ চাঙ্গা থাকায় ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সর্বশেষ ২রা জুন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪৫.০৮ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৫০৮ কোটি ডলার।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা, কোভিড-১৯ আতঙ্কে যার কাছে যে সঞ্চয় ছিল তা পরিবার-পরিজনের কাছে পাঠিয়ে দেয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাংকে টাকা রাখলে কোনো মুনাফা বা সুদ পাওয়া যায় না। অথচ বাংলাদেশে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে ১১ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশের মতো সুদ পাওয়া যায়। প্রবাসী বন্ডের সুদের হারও ১১ শতাংশের ওপরে। সে কারণে বেশি মুনাফার আশায় অনেক প্রবাসী এখন প্রবাসী বন্ডে বিনিয়োগ করছেন। পরিবারের অনেক সদস্যের নামে সঞ্চয়পত্র কিনছেন। তার একটা প্রভাব রেমিট্যান্সে পড়েছে। এ ছাড়া মহামারির কারণে হুন্ডি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে অর্থ পাঠানোয় রেমিট্যান্স বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর