× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জি-৭ সম্মেলনে চুক্তি চীনের বিআরআইকে কাউন্টারে বাইডেনের বিথ্রিডব্লিউ

দেশ বিদেশ

মানবজমিন ডেস্ক
১৪ জুন ২০২১, সোমবার

চীনকে টেক্কা দিতে এবার নতুন এজেন্ডার নেতৃত্ব দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শনিবার তার প্রস্তাবিত এমন একটি মহাপরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছেন  জি-৭ জোটের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বলছে, বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং প্রস্তাবিত মেগা প্রকল্প বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআই’কে কাউন্টার করতেই পশ্চিমা প্রভাবশালী ৭ রাষ্ট্রের মহা-পরিকল্পনা ‘দ্য বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড বা বিথ্রিডব্লিউ। চীনা গণমাধ্যম সিজিটিএনও একে বিআরআই-এর সরাসরি প্রতিক্রিয়া বা রিঅ্যাকশন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বিআরআই’র অধীনে দেশগুলোকে ঋণ ও সাহায্য প্রদান করে চীন। এই ঋণ ব্যবহৃত হয় নানা অবকাঠামো, পরিবহন, বাণিজ্য ও যোগাযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে। পূর্ব এশিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপ পর্যন্ত এই প্রকল্পের অধীনে কাজ চলছে। বিথ্রিডব্লিউ-এর উদ্দেশ্যও প্রায় একই।
যদিও বেসরকারি অর্থায়ন ও বিনিয়োগের ওপর এতে জোর দেয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনাতেই স্বাক্ষর করেছেন সকল জি-৭ নেতা। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিথ্রিডব্লিউকে জো বাইডেনের পরিকল্পনা বলেই প্রচার করছে। এমনকি এ সংক্রান্ত যে প্রেস রিলিজ প্রকাশ করা হয়েছে সেটিও হোয়াইট হাউসের ছাপওয়ালা কাগজে লেখা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে চীনা সংবাদ মাধ্যম। সিজিটিএনের খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বুঝতে পারছেন যে, পশ্চিমারা পদক্ষেপ নিতে দেরি করে ফেলেছে। চীনের বিআরআই প্রকল্প চালু হয় ২০১৩ সালে। এতে যুক্ত হয়েছে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের শতাধিক রাষ্ট্র। এর অধীনে রয়েছে ২৬০০ প্রকল্প। এতে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৩.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। তবে এটি শুধু অর্থ, সাহায্য কিংবা উন্নয়নের প্রশ্ন নয়। এই প্রকল্পের ভূরাজনৈতিক গুরুত্বও অনেক। জি-৭ দেরিতে হলেও এখন বুঝতে পারছে যে, এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলো তাদের বিপরীত শক্তির দিকে ভিড়তে শুরু করেছে। এদিকে “জি-সেভেন: চীন বিরোধী নতুন জোটের ডাকে কতটা সাড়া দেবে ইউরোপ” শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রচার করেছে  বিবিসি বাংলা। তাতে বলা হয়- প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা বিবিসিকে জানিয়েছেন জি-সেভেন বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ শনিবার আলাপ-আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল চীন এবং বিশ্বে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলার উপায়। হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বিবিসির রিপোর্টে বলা হয় তিনি বলেছেন, অবকাঠামো এবং অন্যান্য কারিগরি সাহায্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে চীন যেভাবে তাদের প্রভাব বলয় বাড়াচ্ছে তার মোকাবিলায় বিকল্প অভিন্ন একটি কৌশল নিতে নতুন একটি পশ্চিমা জোট তৈরির প্রস্তাব দেবেন মি. বাইডেন। গত তিন দশকে চীন তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) আওতায় বিশ্বের একশ’টিরও বেশি দেশে অবকাঠামো উন্নয়নে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে- যা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে আমেরিকা, উদ্বিগ্ন। তাদের ভয়, গত কয়েকশ’ বছর ধরে উন্নয়নশীল বিশ্বে তাদের যে প্রভাব-প্রতিপত্তি রয়েছে তা হুমকিতে পড়ছে। বিবিসির উত্তর আমেরিকা বিষয়ক সম্পাদক জন সোপেল বলছেন, আমেরিকার বর্তমান সরকার তার মিত্রদের বলতে চাইছে যে, ‘পশ্চিমা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের শ্রেষ্ঠত্ব’ বাকি বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে। বাকি বিশ্বকে বলতে হবে চীনের বিনিয়োগ নিয়ে আখেরে তাদের বিপদে পড়তে হবে, চীন মানবাধিকারের তোয়াক্কা করেনা, সুস্থ প্রতিযোগিতার ধার ধারেনা। জন সোপেল বলছেন, আমেরিকান কর্মকর্তারা বলতে চাইছেন যে এটা চীনের সঙ্গে টক্কর দেয়ার কোনো বিষয় নয়, বরঞ্চ চীনের একটি ‘ইতিবাচক বিকল্প’ বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে। কিন্তু বিশ্বের অবকাঠামোর প্রয়োজন মেটাতে পশ্চিমা দেশগুলো কতদিনে কত অর্থ বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত- তা নিয়ে হোয়াইট হাউস এখনও অস্পষ্ট। তবে একটা বিষয় খুব পরিষ্কার যে আমেরিকা মনে করে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় পশ্চিমা বিশ্বকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, চীনকে আটকাতে আমেরিকার সঙ্গে জোট বাঁধতে এখন কতটা উৎসাহী হবে ইউরোপ? বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় চীনের সঙ্গে খোলাখুলি বড় কোনো বিবাদে জড়িয়ে যাওয়া ইউরোপের জন্য সহজ হবে না বলে মনে করেন অধিকাংশ বিশ্লেষক। কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ মাহমুদ আলির মতে, গত ১০ বছর ধরে চীন আলাদা আলাদাভাবে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছে। বিআরআই-এর আওতায় ইতালি, গ্রীস, হাঙ্গেরি এবং সার্বিয়ায় চীন এরইমধ্যে অনেক বিনিয়োগ করেছে। ফলে, চীনের ইস্যুতে ইউরোপে ঐক্যবদ্ধ কোনো অবস্থান এখন আর নেই। একেক দেশের দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম। চীনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমারা এতদিন প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে যে পথ নিয়েছে, চীন ঠিক সেই পথই নিচ্ছে। হংকংয়ের সিটি ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক ওয়াং জিয়াং উ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “আইনি পথে এই ধরনের পাল্টা নিষেধাজ্ঞার পথে যাওয়ার রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক শক্তি চীনের আগে ছিলনা, এখন তাদের সেই ক্ষমতা হয়েছে। ওদিকে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনকে নিশানা করে এরইমধ্যে বেইজিং কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তারা বলছে, ‘কিছু দেশের একটি ছোট গ্রুপ সারা পৃথিবীর ভাগ্য নির্ধারণ করবে, সেই যুগ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।’ জি-সেভেন জোটের নেতাদের সতর্ক করে করে দিয়ে চীনের মুখপাত্র ইঙ্গিতপূর্ণ ওই মন্তব্য করেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর