নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যার পাড়ের নোয়াপাড়া গ্রাম হলো জামদানির সূতিকাগার। স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও দালালের দৌরাত্ম্যের কারণে তাঁতীদের জন্য বরাদ্দকৃত নোয়াপাড়ায় বিসিক শিল্পনগরীতে সরকারি প্লটগুলো ক্রমেই চলে যাচ্ছে এ শিল্পের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই তাদের কাছে। নোয়াপাড়া বিসিক শিল্পনগরী অফিস সূত্রে জানা যায়, দেশের এই ঐতিহ্যবাহী জামদানি পল্লীকে বাঁচিয়ে রাখতে ১৯৯৯ সালে রূপগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকায় মোট ২০ একর জমিতে ৪১৬টি প্লট করে তাঁতীদের পুনর্বাসন করে সরকার। ২০০১ সালে এককালীন ১ লাখ ৭২ টাকা ও কিস্তি নিলে সর্বনিম্ন ৪ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত তাঁতীদের কাছে ৪শ’ ৭টি প্লট হস্তান্তর করা হয়। ৫ বছরের মধ্যে ১০ কিস্তিতে প্লটগুলোর কিস্তি পরিশোধ করতে বলা হয়। বাকি ৯টি প্লট পল্লীবিদ্যুৎ ও পাম্প হাউজের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়।
প্লট বরাদ্দের পর থেকে প্রকৃত তাঁতীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও দালালরা প্রভাব দেখিয়ে স্বল্প টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে প্লট ক্রয়-বিক্রয় করছে। এতে যাদের সঙ্গে জামদানি শিল্প বা তাঁতের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই তারা প্লট ভোগ করছে। সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মী ও দালালদের সমন্বয়ে কখনো হুমকি-ধামকি অথবা সরলতার সুযোগে প্রকৃত তাঁতীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে প্লট ক্রয়-বিক্রয় চলছে দেদারছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিসিক জামদানি নগরীর মধ্যে প্লট পাওয়া নুরুল হক জামদানির মালিক নুরুল হক, শাহ্নাজ জামদানির মালিক হিরুন্নেসা, তাঁতী মোহাম্মদ আলীসহ অনেকে অর্থসংকটে ও নানা চাপে পড়ে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত না এমন ব্যক্তিদের কাছে তাদের প্লট বিক্রি করে দিয়েছেন। এমনকি বিসিক কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত না রাজীয়া সুলতানা, নিলুফা বেগম, তারাবো পৌরসভার সাবেক সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর জোসনা আক্তার তার স্বামীর নামে ও মনির হোসেন নিজেদের জামদানি তাঁতী পরিচয়ে প্লট বাগিয়ে নিয়েছেন। সরকারি নিময় অনুযায়ী একজন তাঁতী জামদানি বিক্রির জন্য এটি শোরুম দিতে পারলেও অনেকে তাঁতী না হয়েও অধিক শোরুম দিয়ে রেখেছে। এমনকি প্লটের শিল্পকারখানায় চাকরি করে শ্রমিকরা ভাড়ায় বসবাস করে আসছেন। এ ব্যাপারে নোয়াপাড়া বিসিক শিল্পনগরী কর্মকর্তা শাহজাহান আলী বলেন, ১৯৯৯ সালে এ শিল্প নগরীতে জামদানির সঙ্গে জড়িত ৪শ’ ৭ জন তাঁতীর মধ্যে সরকার প্লট বরাদ্দ করে। শুনেছি বরাদ্দের পর অনেক তাঁতী বিভিন্ন সমস্যার কারণে বিসিক কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত না এমন কিছু ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। আমরা যেসব প্লটে কোনো তাঁত নেই ও কাপড় বুনন করা হচ্ছে না সেগুলোকে নোটিশ প্রদান করেছি। আমরা গত ৬ মাসে জামদানি নগরীতে কিস্তিতে বরাদ্দকৃত প্লটের মালিকদের কাছ থেকে ৫৬ লাখ টাকা আদায় করেছি। খুব তাড়াতাড়ি এই সমস্যার সমাধান হবে বলে বিসিক কর্মকর্তা বলেন।