× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কামরানের চলে যাওয়ার ১ বছর

এক্সক্লুসিভ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৫ জুন ২০২১, মঙ্গলবার

স্ত্রী আসমা কামরান অসুস্থ ছিলেন। এতে বিচলিত ছিলেন তিনি। করোনা আক্রান্ত স্ত্রীর দরোজার সামনে গোটা রাত জায়নামাজে বসে কাটাতেন। নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত করতেন। খেয়াল রাখতেন স্ত্রীর দিকে। বিয়ের পর থেকে কখনো একা থাকেননি স্ত্রী। এ নিয়ে ছিল দুশ্চিন্তা। ঘরের মধ্যে যখন এই অবস্থা বাইরে তখন করোনা আক্রান্ত মানুষের হাহাকার।
চলছিল লকডাউন। এরপরও রাতে স্ত্রী ও দিনে খাবার নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন তিনি। হঠাৎ একদিন নিজেও হয়ে গেলেন করোনায় আক্রান্ত। সময়টা ছিল ২০২০ সালে ৫ই জুন। এরপর তীব্র শ্বাসকষ্ট। বাসায় রেখে দেয়া হচ্ছিল অক্সিজেন সাপোর্ট। এতেও উন্নতি নেই। পরে নেয়া হলো সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকার সিএমএইচে। ওখানে ভর্তি থাকা অবস্থায় ১৫ই জুন রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। তিনি সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন কামরান। আজ তার চলে যাওয়ার এক বছর। এই এক বছরেও কামরানকে ভুলতে পারেননি সিলেটের মানুষ। দীর্ঘ ৩৩ বছর জনপ্রতিনিধি ছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগে মেয়র না হয়েও ছিলেন মেয়র। অসহায় মানুষের জন্য তার দরোজা সবসময় ছিল খোলা। করোনার শুরুতেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছিলেন মানবসেবায় ব্যস্ত। সিলেটের মানুষের আশ্রয়স্থলও ছিলেন তিনি। কামরানের মৃত্যু এখনো ভুলতে পারছেন কেউ। পরিবার এখনো শোকাহত। স্ত্রী আসমা কামরান এখনো কাঁদছেন। স্বামীর শোকে তিনিও কাতর হয়ে পড়েছেন। স্বাভাবিক হতে পারছেন না। বাসার যেখানেই হাঁটছেন সবখানেই যেনো স্বামীর ছোঁয়া পাচ্ছেন। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর দিন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আরো বেশি কাতর হয়ে পড়েছেন। কাঁদছেন অঝোরে। পরিবার কিংবা আত্মীয়-স্বজনেরও মন ভালো নেই। আসমা কামরান জানালেন- ‘এখনো বিশ্বাস হয় না কামরান নেই। যে মানুষটি গোটা জীবন মানুষের জন্য কাজ করেছে তার মৃত্যু নেই। সন্তানরা এখনো কাঁদছে। এই এক বছর তার পরিবারের কারো মুখে ছিল না হাসিখুশি। বড় ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু পিতার স্মৃতি রক্ষায় কিছু কাজ করছে। আমাকে সব সময় ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু কামরানের স্মৃতি এক মুহূর্তের জন্য আমি ভুলতে পারছি না।’ কামরানবিহীন এক বছরেও যেনো বিপরীত স্রোতে ভাসছেন বড় ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু। পিতার জীবদ্দশায় কোনো কিছুতেই নজর দিতে হয়নি তার। বরং নিজের ডাক্তারি পেশা ও রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ করে পিতা চলে যাওয়ায় তিনি একা হয়ে গেছেন। সুখে দুঃখে পিতার কাছেই ছুটে যেতেন। এখন একাকি সামলাতে হচ্ছে সবকিছু। তবে- এক বছর ধরে প্রতিদিনের গন্তব্য পিতার কবরস্থান হযরত মানিকপীর (রহ.) মাজারস্থ গোরস্থান। বাসা থেকে কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে চোখে পড়ে পিতার কবর। এক কামরান সিলেটের অনেক কিছুতেই জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বাসায় ছুটে আসা অসহায় মানুষের কথা শোনা। কামরানের মৃত্যুর পর আর আগের মতো মানুষ বাসায় যান না। ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে যারা বাসায় যান আসমা কামরান কিংবা শিপলু তাদের সঙ্গে দেখা করেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন কামরান। এছাড়া দীর্ঘদিন তিনি ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সিলেটের রাজনীতির একজন অভিভাবক হিসেবে কাজ করেছেন। শুধু নিজ দলের নয়, সমমনা দলের নেতাদেরও আশ্রয়স্থল ছিলেন কামরান। সামাজিক অনুষ্ঠানেও কামরানের ছিল সরব উপস্থিতি। পিতার মৃত্যুর পর শিপলু কিছুটা শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে- সবকিছু পেরে ওঠা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে তিনি রাজনীতিতেও বর্তমানে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছেন। ডা. আরমান আহমদ শিপলু জানালেন, পিতা কামরান যা করতেন তার সিকিভাগ করতে পারছেন না তিনি। এই এক বছরে তিনিও পিতা কামরানকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারেননি। এমন মৃত্যুর জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন না। গোটা পরিবার এখনো শোকাহত। সিলেটের সুধীজন, দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, সামাজিক নেতৃবৃন্দসহ সবাই তার পরিবারের পাশে রয়েছেন। সবাই পাশে থাকায় একটু ভরসা পাচ্ছেন। আগামীতে তার পিতার স্মৃতি রক্ষায় তিনি কাজ করবেন বলে জানান। এদিকে, সিলেটের সাবেক এই মেয়রের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গত কয়েক দিন ধরে সিলেটে দোয়া মাহফিল, শিরনি বিতরণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। আজ পরিবার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। শিপলু জানান, তাদের পারিবারিক কর্মসূচির মধ্য রয়েছে রাতব্যাপী খতমে কোরআন ও বিশেষ মোনাজাত, আজ সকাল ৯টায় মরহুমের কবর জিয়ারত ও মানিক পীর (রহ.) টিলা সংলগ্ন স্থানে শিরনি বিতরণ, পরে খতমে কোরআন ও বাদ জোহর দোয়া মাহফিল ও শিরনি বিতরণ, বাদ আসর নগরীর বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। তিনি মরহুম পিতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের আত্মার মাগফেরাত কামনায় সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন। কামরানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নগরীর মির্জাজাঙ্গালস্থ নিম্বার্ক আশ্রমে এক বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ট্রাস্টি ও আওয়ামী লীগ নেতা চন্দন রায়ের সভাপতিত্বে ও সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জয়দেবের পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি সুব্রত পুরকায়স্থ। এদিকে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। এর মধ্যে সকালে কামরানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শিরনি বিতরণ করা হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর