× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হাতিরঝিলের সেই ভবন এখন ইতিহাস হওয়ার অপেক্ষায়

এক্সক্লুসিভ

আল-আমিন
১৫ জুন ২০২১, মঙ্গলবার

জলাধার আইনকে উপেক্ষা করে নির্মিত হওয়া হাতিরঝিলের বিষফোঁড়া নামে খ্যাত বিজিএমইএ ভবন এখন ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেয়ার অপেক্ষায় আছে। ভবনটির এখন ভাঙা হচ্ছে বেসমেন্ট। ১ বছর ৪ মাস আগে প্রায় ১৫০ জন শ্রমিক এক বিশাল ভবন ভাঙার কাজ শুরু করেন। আগামী জুলাই মাসে এ কাজ শেষ হতে পারে বলে ভবনটি ভাঙা কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মহামারির কারণে অনেক শ্রমিক বাড়িতে চলে যাওয়ায় ভবন ভাঙার কাজ কিছুটা থমকে যায়।
পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবার ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়। আধুনিক বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো প্রথমে বিস্ফোরক দ্রব্যের মাধ্যমে ভবনটি গুঁড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা থাকলেও আশেপাশের পরিবেশ ও পরিস্থিতি দেখে তা পরিকল্পনা থেকে বাদ যায়। ভবনটি সনাতন পদ্ধতিতেই ভাঙা হয়েছে।
চারপাশ কাচ বেষ্টিত ১৬ তলা ভবনটি ভাঙতে নিয়োজিত শ্রমিকরা এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের দুর্ঘটনায় পড়েননি।
হাতিরঝিলের বিষফোঁড়া নামে খ্যাত ওই ভবনটি ভাঙার কারণে পাশের ইস্কাটনবাসী খুবই খুশি। এ ছাড়াও পরিবেশবিদরা ভবনটি সেখান থেকে উঠিয়ে দেয়ার কারণে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, দীর্ঘ আইনি লড়াই ও পরিবেশপ্রেমী মানুষের মনোভাবের কারণে ওই ভবনটি সেখান থেকে সরানো গেছে। তবে তারা দাবি করেছেন যে, সেখানে মাটির ভরাটটি সরিয়ে হাতিরঝিলের দুই খালকে একসঙ্গে করে দিতে হবে। যাতে দুই খালের পানির প্রবাহ ঠিক থাকে।
গতকাল সকালে সেখান গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে ভবনটির গেট লাগানো। দুজন নিরাপত্তারক্ষী গেটের সামনে বসে আছেন। সেখানে ঢোকার কোনো অনুমতি নেই। গেটের সামনে কেউ গেলেই নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের পরিচয় জানতে চান এবং সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। ভবনটির চারপাশ ঘিরে কেবলই ইট, পাথর, বালু ও রডের স্তূপ। নিচতলা থেকে বর্জ্য তুলে ট্রাকে করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও ওই পথ দিয়ে চলাচলকারী পথচারীরা ভবনটি ভাঙার দৃশ্য একবার হলেও একপলক দেখেন। ভবনটি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ভাঙছেন শ্রমিকরা। যাতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটে। সেখানে দায়িত্ব পালনকারী শ্রমিক আবদুর রহমান জানান, প্রায় ১৬ মাস ধরে তারা এই বিশাল কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছেন। ভবনটি আস্তে আস্তে যখন নুয়ে পড়েছে তখন আমাদের কাজ কমে আসছে বলে মনে হয়েছে। তিনি আরও জানান, করোনার কারণে কাজ কিছুটা থমকে গিয়েছিল। পরে আবার পুরোদমে শুরু হয়েছে। আরেকজন শ্রমিক জানান, দুর্ঘটনা রোধে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক ছিলাম। সামনে জুলাই মাসে কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
ইস্কাটনের বাসিন্দা শামসুল ইসলাম জানান, দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলের পুরো সৌন্দর্য্য নষ্ট করতো ওই ভবনটি। ভবনটি সেখান থেকে সরে গেলে ওই স্থানটি ফাঁকা হয়ে যাবে। এতে খালের পানি কোনো বাধা ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে চলতে পারবে।  
এ বিষয়ে পরিবেশবিদ বেলার নির্বাহী প্রধান এডভোকেট সৈয়দা রেজওয়ান হাসান গতকাল মানবজমিনকে জানান, ‘এটা আইনের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ভবনটি সেখান থেকে সরিয়ে দেয়ায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তিনি আরও জানান, সরকার ও বিজিএমইএ দু’পক্ষই লাভবান হয়েছে। এখন সেখান থেকে ভরাট মাটি সরিয়ে দিয়ে হাতিরঝিলের মূল খালের সঙ্গে পানির প্রবাহ সংযোগ করে দিতে হবে।’
জানা গেছে, ২০২০ সালে জানুয়ারিতে বহুল আলোচিত বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ উদ্বোধন করেন গণপূর্তমন্ত্রী  শ.ম. রেজাউল করিম। ভবন ভাঙার কাজটি পায় চট্টগ্রামের ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ। ২টি বেসমেন্টসহ ১৬ তলা ভবনটির শ্রমিকরা হেমার ও হাতুড়ি দিয়ে ভাঙছেন। পুরো ভবনের কাচগুলোও হাতুড়ি দিয়ে ভাঙ্গা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০১০ সালে একটি দৈনিকে রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডিএইচএম মনিরউদ্দিন। এরপর হাইকোর্ট বিজিএমইএ ভবন কেন ভাঙার নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। পরে ২০১১ সালের ৩রা এপ্রিল বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশসহ রায় দেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ আপিল আবেদন করে। পরে রিভিউ আবেদনটিও খারিজ হয়। পরে ভবনটি ভাঙার জন্য আদালতের কাছে বারবার সময় চেয়ে আবেদন করে সংগঠনটি। এদিকে পরিবেশবিদরা ভবনটিকে সরানোর ব্যাপারে আন্দোলন করতে থাকে। অবশেষে ভবনটি ভাঙা হয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর